খাবারের খোঁজে বারবার জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে হাতির দল। দাঁতালের তাণ্ডবে ক্ষতি হয় বাড়ি-ফসলের। এ বার জঙ্গলে হাতির খাবারের ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হল বন দফতর। দফতর সূত্রে খবর, এ জন্য জঙ্গল এলাকায় হাতির খাদ্যপোযোগী গাছ রোপণ করা হবে। পরিবেশও হাতির বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে।
মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা বলেন, “বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে হাতিকে যদি জঙ্গলেই আটকে রাখা যায়, তাহলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমবে। আমরা সেই চেষ্টাই করছি।” মেদিনীপুরে রেসিডেন্ট হাতির সংখ্যা কম নয়। বিভিন্ন জঙ্গলে ১৭-১৮টি হাতি রয়েছে। পিঁড়াকাটা, চাঁদড়া এলাকায় প্রায়শই তাণ্ডব চালায় হাতি। আপাতত, এই দুই এলাকার জঙ্গলে হাতির খাদ্যপোযোগী গাছ রোপণ করা হবে। সেই মতোই পরিকল্পনা হয়েছে।
পশ্চিম মেদিনীপুরে ফি বছর দলমার হাতির দল আসে। বন দফতর সূত্রে খবর, হাতির হামলায় জেলায় বছরে গড়ে ১১জনের মৃত্যু হয়। জখম হন ১৫ জন। এক হাজার হেক্টরেরও বেশি জমির ফসল নষ্ট হয়। সঙ্গে প্রচুর ঘরবাড়ি ভাঙে। ক্ষতিপূরণের অর্থ জোগাতেই হিমসিম খেতে হয় দফতরকে। জঙ্গলের একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে আকাশমণি, ইউক্যালিপটাস। তবে এই গাছ হাতির বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে পারে না। কোথাও কোথাও শাল, মহুয়ার দেখা মেলে। ফলে, জঙ্গলে খাবারের সঙ্কট দেখা দেয়।
মূলত, খাবারের খোঁজেই হাতির দল লোকালয়ে ঢুকে সাবাড় করে জমির ধান। ওই সূত্রের বক্তব্য, হাতির দলকে জঙ্গলের মধ্যে আটকে রাখতে এই সময়ের মধ্যে জঙ্গলের ধারে পরিখা তৈরি করা হয়েছে। কাঁটা গাছ লাগানো হয়েছে। বৈদ্যুতিক তারও দেওয়া হয়েছে। তবে পরিস্থিতি বিশেষ হেরফের হয়নি। যত দিন যাচ্ছে, হাতির দল ততই নতুন নতুন এলাকা বাড়িয়ে নিচ্ছে।
মেদিনীপুরের এক বনকর্তা বলছিলেন, “বেশি সংখ্যক ডোকা গাছের চারাই রোপণ করা হবে। এই গাছ হাতির খুব পছন্দের। ওই দুই এলাকার ১০-১৫ হেক্টর জঙ্গলে এই চারা রোপণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।” পাশাপাশি, লোকালয়ে হাতির হানা এড়াতে জঙ্গলের যে পথ দিয়ে হাতি যাতায়াত করে, সেখানে আরও শাল, মহুয়া, অর্জুন প্রভৃতি গাছ লাগানোরও পরিকল্পনা করা হয়েছে। ওই বনকর্তার কথায়, “হাতির দল তখনই জঙ্গলের মধ্যে আটকে থাকবে যখন বসবাসের পরিবেশ থাকবে। শাল, মহুয়া, অর্জুন গাছ সেই পরিবেশ তৈরি করে। কিছু এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই সব এলাকায় চারা রোপণ শুরু হবে।” তাঁর সংযোজন, “জঙ্গলে বসবাসের পরিবেশ থাকলে হাতি লোকালয়ে আসবে না। ফলে, শস্যহানিও কমবে।”