একশো দিনের শ্রমিকদের হাত থেকে নতুন পাঠ্যবই

শিক্ষাবর্ষের শুরুর দিনে সরকারি প্রাথমিক স্কুলের শিশু পড়ুয়াদের হাতে বই তুলে দিলেন একশো দিনের প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদদাতা

লালগড় শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২০ ০০:২০
Share:

অনুপ্রেরণা: আমাইনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বই বিলি। নিজস্ব চিত্র

ধুলো মাখা হাত-পা। মাথায় গামছা বাঁধা। সেই অবস্থাতেই মাটি কাটার কাজ ফেলে প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়াদের হাতে বই তুলে দিলেন রসমণি হেমব্রম, বাসুমণি হেমব্রম, সঞ্জিত হেমব্রম-রা। পড়ুয়াদের উদ্দেশে বললেন, ‘‘তোমরা আমাদের মতো পড়া থামিয়ো না। কলেজ অবধি পড়ো।’’

Advertisement

কোনও জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসনের আধিকারিক নন। শিক্ষাবর্ষের শুরুর দিনে সরকারি প্রাথমিক স্কুলের শিশু পড়ুয়াদের হাতে বই তুলে দিলেন একশো দিনের প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকেরা। বৃহস্পতিবার লালগড়ের আমাইনগর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এমন নজির তৈরি করেছেন।

প্রতি বছর ২ জানুয়ারি শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিন রাজ্যের সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুলের পড়ুয়াদের হাতে নতুন পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হয়। রাজ্যশিক্ষা দফতরের ক্যালেন্ডারে দিনটি ‘পুস্তক দিবস’, ইংরেজিতে ‘বুক ডে’। এ দিন কোথাও জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক, কোথাও বিভিন্ন চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক, কোথাও আবার গ্রামের বিশিষ্টজনেরা পড়ুয়াদের হাতে বই তুলে দিয়েছেন। বিদ্যালয় পরিদর্শক দফতরের নির্দেশ অনুযায়ী, নিদেনপক্ষে গ্রামের বিশিষ্টজনদের দিয়ে পড়ুয়াদের হাতে বই দিতে হবে। তবে, বুক ডে-র দিনটা অন্য ভাবেই পালন করলেন আমাইনগর প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

একশো ভাগ আদিবাসী অধ্যুষিত আমাইনগর গ্রামের ছেলেমেয়েরাই এই স্কুলে পড়ে। পড়ুয়া সাকুল্যে ১২ জন। স্কুলের দুই পড়ুয়া জেলা স্তরের প্রাথমিক ক্রীড়ায় যোগ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। দরিদ্র গ্রামবাসীর কেউ প্রান্তিক চাষি। কেউ আবার খেতমজুর। স্কুলের কাছেই একশো দিনের প্রকল্পে পুকুর কাটা হচ্ছে। সেখানে মাটি কাটার শ্রমিকের কাজ করছিলেন গ্রামেরই কিছু বাসিন্দা। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মানস বেজ ও সহশিক্ষক দেবাশিস সাউ জানালেন, পুকুর খননে নিযুক্ত শ্রমিকদের বই তুলে দেওয়ার জন্য তাঁরা অনুরোধ করেন। কয়েকজন শ্রমিক কাজ থামিয়ে স্কুলে এসে পড়ুয়াদের হাতে বই তুলে দিয়ে গিয়েছেন। দুই শিক্ষকের কথায়, ‘‘যাঁরা শ্রম দিয়ে উন্নয়নের শরিক হচ্ছেন, সেই সব গ্রামবাসীই আমাদের চোখে বিশিষ্টজন। তাই এমন উদ্যোগ।’’

আমাইনগর গ্রামের রসমণি হেমব্রম, বাসুমণি হেমব্রম, সঞ্জিত হেমব্রম, সুশান্ত হেমব্রম-রা অবশ্য এমন প্রস্তাব শুনে অবাক হয়ে যান। প্রৌঢ়া রসমণি বলেন, ‘‘সেভাবে লেখাপড়া শিখিনি। নাম সই করতেও পারি না। এমন সম্মান পেয়ে ভীষণ ভাল লাগছে।’’ সুশান্ত বলেন, ‘‘ঝাড়গ্রামের কলেজে ভর্তি হয়েও সংসারের জোয়াল টানতে গিয়ে উচ্চশিক্ষার পাঠ শেষ করা হয়নি।’’ সঞ্জিতের মেয়ে সুমিতা এই স্কুলের শিশু শ্রেণির পড়ুয়া। মাটি কাটতে কাটতে হঠাৎ মেয়ের স্কুলে ডাক পেয়ে সঞ্জিত বললেন, ‘‘এখন সরকারি ভাবে পড়ুয়ারা অনেক কিছু পায়। বেশিদূর পড়িনি বলেই আমরা দিনমজুরি করি।’’ স্কুলের দুই শিক্ষকের দাবি, ‘‘এই চেতনাটাই দিনের সেরা প্রাপ্তি।’’

ঝাড়গ্রাম জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক শুভাশিস মিত্র বলেন, ‘‘অসাধারণ উদ্যোগ। এর থেকে বড় অনুপ্রেরণা আর হতে পারে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন