Midnapore Medical College

চিকিৎসায় ‘গাফিলতি’! মেদিনীপুর মেডিক্যালে মৃত্যু এক প্রসূতির, তদন্ত কমিটি গড়ল স্বাস্থ্য দফতর

অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন পাঁচ প্রসূতি। তাঁদের মধ্যে এক প্রসূতির মৃত্যু হল শুক্রবার সকালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বাকি চার জনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৫ ১৪:৩৪
Share:

পরিবারের অভিযোগ, ভুল স্যালাইন প্রয়োগ করা হয়েছে প্রসূতির শরীরে। —প্রতীকী চিত্র।

চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের শিশু এবং প্রসূতি বিভাগে। সেখানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন পাঁচ প্রসূতি। তাঁদের মধ্যে এক প্রসূতির মৃত্যু হল শুক্রবার সকালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বাকি চার জনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

Advertisement

চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবারই লিখিত ভাবে হাসপাতালের সুপারের কাছে অভিযোগ জানান ওই পাঁচ প্রসূতির স্বামী শেখ মিজানুর, সেলিম খান, দেবাশিস রুইদাস, আবু কালাম এবং শান্তি বেরা। তাঁদের সকলের অভিযোগ, প্রসবযন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে তাঁদের স্ত্রীদের ভর্তি করানো হয়েছে হাসপাতালে। পাঁচ জনেরই বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায়। বুধবার বিকেলে অস্ত্রোপচার হওয়ার পরে কিছু ক্ষণ তাঁরা ভাল ছিলেন। হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়তে শুরু করেন ওই প্রসূতিরা। পরিবারের অভিযোগ, ভুল স্যালাইন প্রয়োগ করা হয়েছে ওই পাঁচ প্রসূতির শরীরে। যার ফলে ১২ ঘন্টা ধরে তাঁদের প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায়।

বিষয়টি জানানোর পরেই তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নিতে শুরু করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকায় ওই পাঁচ জনকে স্থানান্তরিত করা হয় আইসিইউ ওয়ার্ডে। তার পরেও অবশ্য বাঁচানো গেল না এক জনকে। বাকি চার জনের শারীরিক পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। শুক্রবার সকালে যে প্রসূতির মৃত্যু হয়, তাঁর নাম মামণি রুইদাস। তাঁর বাড়ি গড়বেতা থানা এলাকায়। এই মৃত্যু এবং প্রসূতিদের অসুস্থ হয়ে পড়া প্রসঙ্গে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মৌসুমি নন্দী বলেন, “আমরা সব রকম দিক থেকে ব্যবস্থা করছি রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার জন্য।” তবে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের সুপার জয়ন্ত রাউত বলেন, “এক জনের মৃত্যু হয়েছে। বাকিদের চিকিৎসা চলছে আইসিইউতে। জরুরি ভিত্তিতে বৈঠকে বসা হয়েছে। স্বাস্থ্য ভবনে রিপোর্ট পাঠানো হবে।”

Advertisement

এক প্রসূতির মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে আসেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি প্রতিভা মাইতি এবং মেদিনীপুরের বিধায়ক সুজয় হাজরা। ইতিমধ্যেই মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে ১০ সদস্যের তদন্তকারী কমিটি গঠন করা হয়েছে। রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে গঠিত এই কমিটিতে রয়েছেন প্রসূতি এবং স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ, রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল বোর্ডের আধিকারিক এবং অন্য বিশেষজ্ঞেরা। শনিবার সকালে এই কমিটি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করতে আসবে।

অন্য দিকে, প্রসূতিমৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টর্স ও সারাভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি। চিকিৎসকদের সংগঠনের দাবি, স্বাস্থ্যসচিবের পদ থেকে সরানো হোক নারায়ণস্বরূপ নিগমকে। মহিলা সমিতির দাবি, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের। দুই সংগঠনের অভিযোগ, মেয়াদ উত্তীর্ণ স্যালাইনের জন্যই ছয় প্রসূতি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এবং এক জনের মৃত্যু হয়েছে।

চিকিৎসক সংগঠনটির দাবি, মৃত এবং আহত সকল প্রসূতির পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ব্যাচের সমস্ত ব্যবহৃত এবং অব্যবহৃত স্যালাইন, আনুষঙ্গিক দ্রব্য বাজেয়াপ্ত করতে হবে। আর অভিযোগ নথিভুক্ত করার নির্দেশ দিতে হবে বিভাগীয় প্রধান ও অধ্যক্ষকে। হাই কোর্টের বিচারপতির অধীনে তদন্তেরও দাবি জানানো হয়েছে।

মহিলা সমিতির বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়েছে, অন্য রাজ্যে ‘অভিযুক্ত’ স্যালাইনকে কালো তালিকাভুক্ত করা হলেও এই রাজ্যে তা হয়নি। তাই রাজ্যের তরফে স্যালাইনের মান পরীক্ষার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা নিয়ে সন্দেহ থাকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement