মোবাইল কিনে হাতে ফাঁকা বাক্স

রেলশহরের সেনচকের বাসিন্দা রাহুল সিংহ। মোবাইলে চোখ বোলাতে বোলাতে হঠাৎ দেখেছিলেন একটি অনলাইন শপিং সংস্থার বিজ্ঞাপন। বাজারে যে মোবাইলটি কিনতে গেলে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা খরচ করতে হয়, সেই মোবাইলটিই ওই সংস্থা দেবে মাত্র সাড়ে তিন হাজারে।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৬ ০০:৫৩
Share:

রেলশহরের সেনচকের বাসিন্দা রাহুল সিংহ। মোবাইলে চোখ বোলাতে বোলাতে হঠাৎ দেখেছিলেন একটি অনলাইন শপিং সংস্থার বিজ্ঞাপন। বাজারে যে মোবাইলটি কিনতে গেলে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা খরচ করতে হয়, সেই মোবাইলটিই ওই সংস্থা দেবে মাত্র সাড়ে তিন হাজারে। তার উপর আবার সিওডি (ক্যাশ এন ডেলিভারি) অর্থাৎ পণ্য পৌঁছে দেওয়ার পর দাম নেওয়ার সুবিধাও রয়েছে।

Advertisement

এমন প্রলোভন সামলাতে পারেননি রাহুল। অর্ডার করার কিছুদিন পর গত শনিবার নির্দিষ্ট ঠিকানা পৌঁছে যায় পার্সেল। পিওনকে গুনে গুনে সাড়ে তিন হাজার টাকা দেওয়ার পরে বাক্স খুলেই মাথায় হাত। ফাঁকা বাক্সে রয়েছে শুধু দু’টি কাগজ। তাতে লক্ষ্মী লাভের যন্ত্র ব্যবহারের পরামর্শ লেখা।

এমন ঘটনা নতুন নয়। হামেশাই কিছু উঠতি অনলাইন শপিং সংস্থার বিজ্ঞাপনী চটকে প্রলুব্ধ হয়ে ঠকছেন খড়্গপুরের বহু মানুষ। আর রাগ গিয়ে পড়ছে ডাকবিভাগ বা বেসরকারি ক্যুরিয়ার সংস্থাগুলির উপর। এমনকী ক্রেতারা ঠকে গিয়ে পিওনের উপর চড়াও হচ্ছেন, তাঁদের আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। খড়্গপুরের এক ক্যুরিয়ার সংস্থায় এজেন্ট হিসাবে কাজ করেন খরিদার বাসিন্দা প্রদীপ দাস। তিনি বলেন, “এখন বহু সংস্থা নকল জিনিস অথবা খালি বাক্স পাঠিয়ে দিচ্ছে। তবে আমাদের নিয়ম অনুযায়ী বাক্স খোলার আগে টাকা সংগ্রহ করে নিতে হয়। কিন্তু টাকা দিয়ে ক্রেতা সঠিক জিনিস না পাওয়ায় আমাদের কটূক্তি করেছে।” একই অবস্থা হয়েছে সরকারি ডাককর্মীদেরও। খড়্গপুর ডাকঘরের পোস্টমাস্টার অভিজিৎ সাঁই বলেন, “বড় সংস্থার ক্ষেত্রে প্রতারণার সম্ভাবনা খুব কম। কিন্তু কিছু ছোট অনলাইন শপিং সংস্থায় মানুষ প্রতারিত হচ্ছেন। অথচ বিষয়টি বুঝতে না-পেরে আমাদের পোস্টম্যানকে আটকে রেখেছেন, এমন ঘটনাও ঘটেছে।’’

Advertisement

অভিযোগের বহর বাড়ছে থানায়ও। সূত্রের খবর, প্রতিমাসের তিন-চারটি অভিযোগ দায়ের হচ্ছে। খড়্গপুরের এসডিপিও কার্তিক মণ্ডল বলেন, “আমাদের কাছে অভিযোগ এলে আমরা খতিয়ে দেখছি। কিছু ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে সব সংস্থাই প্রতারণা করছে না। তাই মানুষকে সচেতন হয়ে ভাল-মন্দ বিচার করে অনলাইনে কেনাকাটা করতে হবে।”

কিন্তু কোথায় সচেতনতা?

সস্তায় লাভ করতে গিয়ে কখনও ঝকঝকে মোবাইল, কখনও দারুণ কাজের পাওয়ার ব্যাঙ্ক, কখনও সুন্দর-সস্তা শাড়ি অথবা জিনস— অনলাইন শপিংয়ের জালে প্রতারিত হচ্ছেন শহরবাসী। সাজানো মোড়কে হাতে আসছে লক্ষ্মীলাভের যন্ত্র কেনার পরামর্শ কিংবা বিকল যন্ত্র। তবে ক্রেতারাই বলছেন, এই ধরনের অভিযোগ জনপ্রিয়, প্রতিষ্ঠিত অনলাইন শপিং সংস্থার বিরুদ্ধে তেমন নেই। তুলনায় অনামী যে সব সংস্থা কম দামে বাড়িতে জিনিস পৌঁছে দেওয়া কথা বলছে, সেখানেই বেশি প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে বিজ্ঞাপন দিয়ে ওই সব বেনামী সংস্থা দেদার প্রতারণার জাল ছড়াচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement