সরব বিরোধীরা

কদাচিৎ বসে নজরদারি কমিটির বৈঠক

সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প রয়েছে। প্রচুর অর্থও আসে। কিন্তু সে সবের সঠিক রূপায়ণ হয় কি? এটা দেখার কথা ভিজিল্যান্স ও মনিটরিং কমিটির। কিন্তু পশ্চিম মেদিনীপুরে গত এক বছরে এই কমিটির বৈঠক হয়েছে মাত্র একবার! পরের বৈঠক পরপর তিনবার ডেকেও বাতিল করা হয়েছে! জেলার সব বিধায়কেরা ভিজিল্যান্স ও মনিটরিং কমিটির সদস্য। পরিস্থিতি দেখে কমিটির কার্যকারিতা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন বিরোধী দলের বিধায়কেরা। বিরোধী-বিধায়কদের বক্তব্য, সাধারণত সরকারি বৈঠকে তাঁরা ডাক পান না। মুখ্যমন্ত্রী জেলা সফরে এসে যে প্রশাসনিক বৈঠক করেন, সেখানেও তাঁরা ব্রাত্য থাকেন। ফলে, নিজেদের পরিকল্পনা, ভাবনা, অভাব-অভিযোগের কথা তাঁরা বলতে পারেন না।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৫ ০২:০১
Share:

সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প রয়েছে। প্রচুর অর্থও আসে। কিন্তু সে সবের সঠিক রূপায়ণ হয় কি? এটা দেখার কথা ভিজিল্যান্স ও মনিটরিং কমিটির। কিন্তু পশ্চিম মেদিনীপুরে গত এক বছরে এই কমিটির বৈঠক হয়েছে মাত্র একবার! পরের বৈঠক পরপর তিনবার ডেকেও বাতিল করা হয়েছে!

Advertisement

জেলার সব বিধায়কেরা ভিজিল্যান্স ও মনিটরিং কমিটির সদস্য। পরিস্থিতি দেখে কমিটির কার্যকারিতা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন বিরোধী দলের বিধায়কেরা। বিরোধী-বিধায়কদের বক্তব্য, সাধারণত সরকারি বৈঠকে তাঁরা ডাক পান না। মুখ্যমন্ত্রী জেলা সফরে এসে যে প্রশাসনিক বৈঠক করেন, সেখানেও তাঁরা ব্রাত্য থাকেন। ফলে, নিজেদের পরিকল্পনা, ভাবনা, অভাব-অভিযোগের কথা তাঁরা বলতে পারেন না। ভিজিল্যান্স ও মনিটরিং কমিটির বৈঠক হলে অন্তত সরকারি প্রকল্প নিয়ে নিজেদের বক্তব্য তাঁরা জানাতে পারেন। সেই বৈঠক না হওয়ায় জেলায় এই কমিটি থাকা আর না থাকা একই ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিরোধী-বিধায়কদের মতে, সরকারি কাজের সঙ্গে রাজনীতিকে গুলিয়ে ফেলছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।

কেশপুরের সিপিএম বিধায়ক রামেশ্বর দোলুই বলেন, “বছরে মাত্র একবার বৈঠক হলে যে কোনও কমিটির গুরুত্ব কমে যায়। এ ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। আমরা তো শুধু ভিজিল্যান্স কমিটির বৈঠকেই একটু আলোচনা করার সুযোগ পাই। বৈঠক না হওয়ায় তা-ও পাচ্ছি না।’’ সবংয়ের কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার মতে, “এই কমিটির বছরে অন্তত তিনটি বৈঠক হওয়া উচিত। জেলায় কেন্দ্রীয় সরকারের যে সব কর্মসূচি হচ্ছে, তার বেশ কয়েকটি ব্যাপক বেআইনি পথে হচ্ছে। বিশেষ করে একশো দিনের কাজ। একশো দিনের কাজে দুর্নীতি চলছে। ভিজিল্যান্স কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ রয়েছে।” মানসবাবু আরও মনে করিয়ে দেন, প্রথম বৈঠকে কমিটির চেয়ারপার্সন সাংসদ উমা সরেন বলেছিলেন, তিনি ব্লকে ব্লকে ঘুরে সব দেখবেন। কিন্তু কোথায় কী!

Advertisement

দুর্নীতি ধরা পড়বে, এই আশঙ্কা থেকে বৈঠক ডাকার ক্ষেত্রে গড়িমসি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ বিরোধী-বিধায়কদের। খড়্গপুর গ্রামীণের সিপিএম বিধায়ক নাজমুল হক বলেন, “কোনও বৈঠক তিন চার বার বাতিল হয়? প্রথম বৈঠকের কথা মনে রয়েছে। বলতে উঠেই উনি (চেয়ারপার্সন) দেবী-বন্দনা (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুণগান) শুরু করেছিলেন। ভাল না লাগায় বেরিয়ে যাই।’’ বিনপুরের সিপিএম বিধায়ক দিবাকর হাঁসদারও প্রশ্ন, “বৈঠকে আলোচনা না হলে কাজ সঠিক ভাবে এগোবে কী করে?” শাসক দলের বিধায়কদের বক্তব্য অবশ্য অন্য। মেদিনীপুরের তৃণমূল বিধায়ক মৃগেন মাইতি বলেন, “একটা বৈঠক হয়েছে। পরের বৈঠক নিশ্চয়ই কোনও কারণে বৈঠক বাতিল করা হয়েছে। এ নিয়ে জলঘোলা করার কিছু নেই!” তাঁর কথায়, “জেলায় সব প্রকল্পের কাজই ভাল ভাবে চলছে। কারও কোনও বক্তব্য থাকলে তা লিখিত ভাবেও তো জানানো যেতে পারে।’’

কী বলছেন পশ্চিম মেদিনীপুরে ভিজিল্যান্স ও মনিটরিং কমিটির চেয়ারপার্সন ঝাড়গ্রামের সাংসদ উমা সরেন এবং সচিব জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা? কেন বছরে একবার মাত্র বৈঠক? সদুত্তর এড়িয়ে জেলাশাসক বলেন, “শীঘ্রই এই কমিটির বৈঠক ডাকা হবে।’’ আর উমাদেবীর ব্যাখ্যা, “নির্বাচনের জন্য বৈঠক ডেকে বাতিল করতে হয়েছে। জেলাশাসকের সঙ্গে কথা হয়েছে। শীঘ্রই কমিটির বৈঠক ডাকা হবে।’’

গত বছর ১৭ জুন গড়া হয়েছিল এই কমিটি। প্রথম বৈঠক হয় ওই বছরের ২১ নভেম্বর। পরের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের ৬ মার্চ। তা হয়নি। পরে ২৩ মার্চ এবং ২৭ মার্চ দিন ঠিক হলেও বৈঠক হয়নি। একেবারে শেষ মুহূর্তে বাতিল করা হয় বৈঠকগুলি। অথচ এই বৈঠক যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। শুধু একশো দিনের কাজ নয়, তফসিলি জাতি-উপজাতি উন্নয়ন প্রকল্প, পানীয় জল প্রকল্প, ইন্দিরা আবাস যোজনা, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রভৃতি প্রকল্প রূপায়ণ নিয়েই কমিটির বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা।

কেশপুরের সিপিএম বিধায়ক রামেশ্বরবাবু বলেন, “বিধানসভার প্রশ্ন করে যে উত্তর পেয়েছি তাতে বলা হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের ৪৫৪টি গ্রাম পিছিয়ে পড়া। পিছিয়ে পড়া গ্রামের অর্থ সেই সকল গ্রামের মানুষ উপযুক্ত পানীয় জল, স্বাস্থ্য পরিষেবা, যোগাযোগ ব্যবস্থা— সব দিক থেকেই পিছিয়ে। অথচ মুখ্যমন্ত্রী বলে চলেছেন জঙ্গলমহলে হাসির বন্যা বইছে। এতগুলো পিছিয়ে পড়া গ্রাম কি তারই নমুনা?’’ এই বিরোধী বিধায়কের ক্ষোভ, পিছিয়ে পড়া গ্রামগুলোর উন্নয়ন পরিকল্পনা জানতে চেয়েছেও নজরদারি কমিটির প্রথম বৈঠকে জবাব পাননি। পরবর্তী বৈঠক কবে হয়, সে দিকেই তাই সকলে তাকিয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন