আতঙ্কে আত্মগোপন বিরোধী কাউন্সিলরদের

রেলশহরে তৃণমূল-দুষ্কৃতী যোগের অভিযোগ তুলে আগেই সরব হয়েছিল বিরোধীরা। আতঙ্কের পরিবেশে এ বার প্রকাশ্যে আসাই কার্যত বন্ধ করলেন বিরোধী কাউন্সিলররা। গত দু’দিন ধরেই তাঁদের মোবাইল ফোন বন্ধ। বাড়িতে গিয়েও দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। মিথ্যে মামলায় জড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ৪ জুন পুরবোর্ড গঠনের আগে পর্যন্ত জয়ী প্রার্থীদের আত্মগোপনের পরামর্শ বিরোধী দলের নেতৃত্বই দিয়েছেন বলে খবর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৫ ০২:০৬
Share:

মেদিনীপুর আদালত চত্বরে ধৃত হোন্দল। নিজস্ব চিত্র।

রেলশহরে তৃণমূল-দুষ্কৃতী যোগের অভিযোগ তুলে আগেই সরব হয়েছিল বিরোধীরা। আতঙ্কের পরিবেশে এ বার প্রকাশ্যে আসাই কার্যত বন্ধ করলেন বিরোধী কাউন্সিলররা। গত দু’দিন ধরেই তাঁদের মোবাইল ফোন বন্ধ। বাড়িতে গিয়েও দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। মিথ্যে মামলায় জড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ৪ জুন পুরবোর্ড গঠনের আগে পর্যন্ত জয়ী প্রার্থীদের আত্মগোপনের পরামর্শ বিরোধী দলের নেতৃত্বই দিয়েছেন বলে খবর। যদিও খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্ত বলেন, “আমাদের কাছে হুমকি বা মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোর আশঙ্কা নিয়ে কোনও অভিযোগ আসেনি। এলে খতিয়ে দেখা হবে।’’
৩৫ আসনের খড়্গপুর পুরসভার ফল এ বার ত্রিশঙ্কু হয়েছে। তবে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে গত ২৪মে থেকে। ওই দিন খরিদায় হামলা হয় বিজেপি ছেড়ে সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া কাউন্সিলর সুনীতা গুপ্তর স্বামী রাজুর উপর। অভিযোগ ওঠে, সুনীতাকে বিজেপি থেকে ভাঙাতেই তৃণমূল এই কাজ করিয়েছে। অভিযোগ দায়ের হয় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী প্রকাশ মান্না ওরফে হোন্দলের নামে। এরপর বাম-বিজেপি-কংগ্রেস একজোট হয়ে বন্‌ধ ডাকে। তারপরই বৃহস্পতিবার সুনীতা-সহ বিজেপির চার কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেন। বিরোধীদের অভিযোগ, দলবদল করা পূজা নায়ডুর স্বামী রেল-মাফিয়া শ্রীনুই তৃণমূলের হয়ে কাউন্সিলর ভাঙানোর কাজ করেছে। এর পর থেকেই থমথমে খড়্গপুরের পরিবেশ। বিরোধীরা সকলেই শাসক-দুষ্কৃতী-পুলিশ আঁতাঁতের অভিযোগ তুলেছে। বর্ষীয়ান কংগ্রেস বিধায়ক ‘রেলশহরের চাচা’ জ্ঞানসিংহ সোহন পালের মতে, “আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এমন রাজনীতি দেখিনি।’’ এর প্রতিবাদে সিপিএম ও কংগ্রেস লাগাতার কর্মসূচিও নিয়েছে।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে হুমকি এড়াতেই বিরোধী দলের কাউন্সিলরা মোবাইল বন্ধ রেখেছেন বলে খবর। বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত কংগ্রেসের সব কাউন্সিলররা একজোট হয়ে ছিলেন। তারপরই সকলকে মোবাইল বন্ধ করে আত্মগোপনের নির্দেশ দেওয়া হয়। শহর কংগ্রেস সভাপতি অমল দাস বলেন, “পুলিশ ও সমাজবিরোধীরা শাসকদলের হয়ে যে নোংরা রাজনীতি করছে তাতে আমাদের জয়ী প্রার্থীরা মিথ্যে মামলায় ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন। বাধ্য হয়ে তাঁরা আত্মগোপন করেছেন।’’ শুক্রবারই সন্ধেয় নিউ সেটলমেন্ট এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় হোন্দলকে। শুক্রবারই আবার বিজেপি থেকে তৃণমূলে আসা কাউন্সিলর লক্ষ্মী মুর্মু অভিযোগ করেছিলেন, কংগ্রেসের হয়ে তাঁকে হুমকি দিচ্ছে হোন্দল। হোন্দল যে ভাবে রাতারাতি তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী থেকে কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীর তকমা পেয়েছে, তাতে বিরোধীদের ফাঁসানোর আশঙ্কা আরও বেড়েছে। শনিবার হোন্দলকে মেদিনীপুর আদালতে হাজির করা হলে বিচারক দু’দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।

শুক্রবার রাতে আবার বিজেপি কাউন্সিলর বেলারানি অধিকারীর বাড়িতে কিছু লোক তল্লাশি চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শনিবার সকালে বেলারানিদেবীর ওয়ার্ডের বিজেপি কর্মী অশোক দে-কে পুলিশ কৌশল্যা থেকে আটক করেছে বলেও দাবি বিজেপি-র। বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “রাতে বেলাদি আমাকে জানিয়েছেন, মুখে কাপড় বেঁধে কিছু লোক ওঁর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে। সকালে অনুশ্রী বেহেরার বাড়িতেও একইভাবে হানা দিয়েছিল। সকলে আতঙ্ক আছে। দুষ্কৃতীদের হাত থেকে বাঁচতেই জয়ী প্রার্থীরা খড়্গপুরের বাইরে রয়েছেন।’’ দু’টি ঘটনাই অস্বীকার করেছে পুলিশ।

Advertisement

বাম কাউন্সিলররাও হুমকির ভয়ে মোবাইল বন্ধ রেখে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। আজ, রবিবার শহরে আসছেন সিপিআই রাজ্য সম্পাদক তথা প্রাক্তন সাংসদ প্রবোধ পান্ডা। সোমবার শহরে মিছিল করবে বামেরা। সেই মিছিলে থাকতে পারেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রও। শনিবার সিপিআই জেলা সহ-সম্পাদক বিপ্লব ভট্ট বলেন, “খড়্গপুরে মাফিয়ারাজ চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন