মোম রঙের টানে পরিচ্ছন্নতায় পুরস্কার খুদের

ঝাড়গ্রাম শহরের বলরামডিহি এলাকার অশোক বিদ্যাপীঠ নিম্ন বুনিয়াদি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী অন্বয়ী ভৌমিক।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৭ ০২:২৩
Share:

খুশি: নিজের আঁকা ছবির প্রতিলিপি হাতে অন্বয়ী। নিজস্ব চিত্র

গ্রামের কাচা রাস্তা সোজা চলে গিয়েছে স্কুলের দরজায়। পাশে কচি সবুজ ঘাস, সেখানে বসানো রয়েছে আবর্জনা ফেলার পাত্র। গায়ে আবেদন— আমাকে ব্যবহার করো। সাত বছরের ছোট্ট অন্বয়ী বুঝেছে পরিচ্ছন্নতার মর্ম। তাই তার হাতের রং পেন্সিলে ধরা পড়েছে এই ছবি।

Advertisement

ঝাড়গ্রাম শহরের বলরামডিহি এলাকার অশোক বিদ্যাপীঠ নিম্ন বুনিয়াদি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী অন্বয়ী ভৌমিক। ড্রয়িং খাতার পাতায় সবুজ, হলুদ, বাদামী মোম রঙে ফুটে উঠেছে অন্বয়ীর স্কুল, বাড়ির বারান্দা, নলকূপ। সবই সাফ সুতরো। শুধু তাই নয়— বাড়ির বারান্দায় বসে চুল আঁচড়ায় তারই বয়সী একটি মেয়ে। নলকূপের সামনে হাত ধুয়ে নিতে দেখা যাচ্ছে এক বালককে, আর তারই পাশে টুথব্রাশ নিয়ে দাঁত মাজছে আর এক বালিকা।

এ ছবি জিতে নিয়েছে ‘নির্মল বিদ্যালয় অভিযান’-এর জেলাস্তরের পুরস্কার। গত ২০ সেপ্টেম্বর ‘নির্মল বিদ্যালয় অভিযান’-এর আওতায় অবিভক্ত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খুদে প্রাথমিক পড়ুয়াদের নিয়ে অঙ্কন প্রতিযোগিতা হয়।

Advertisement

প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা দফতরের মাধ্যমে মেদিনীপুরে আয়োজিত ওই প্রতিযোগিতায় জেলার ৭৯টি প্রাথমিক স্কুল চক্র থেকে এক জন করে পড়ুয়া যোগ দেয়। ঝাড়গ্রাম পশ্চিম চক্র থেকে যোগ দিয়েছিল অন্বয়ী। আঁকার বিষয় ছিল— ‘দিন কাটে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায়’।

অক্টোবরে মাসে ফল ঘোষণার পরে জানা যায়, অন্বয়ীর আঁকা এই ছবিটিই প্রথম পুরস্কার জিতেছে। সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা কো-অর্ডিনেটর (কমিউনিটি মোবিলাইজেশন অ্যান্ড অল্টারনেটিভ স্কুলিং) মৃণালকান্তি মণ্ডল জানান, জেলায় প্রথম হওয়ার জন্য অন্বয়ীকে শংসাপত্র ও আর্থিক পুরস্কার দেওয়া হবে। রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতায় বিবেচনার জন্য অন্বয়ীর ছবিটি পাঠানো হয়েছে।

ঝাড়গ্রাম শহরে মামার বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করে অন্বয়ী। তার বাবা খড়্গপুরের হিজলি হাইস্কুলের শিক্ষক। মা পড়ান ঝাড়গ্রাম গ্রামীণের একটি প্রাথমিক স্কুলে।

ছবি আঁকতে খুব ভালবাসে অন্বয়ী। একেবারে ছোট থেকেই নিজের মতো করে আঁকত সে। এখন স্কুলেই আঁকা শেখার ব্যবস্থা রয়েছে। তাই সময় পেলেই রং-পেন্সিল নিয়ে বসে পড়ে অন্বয়ী। স্কুলেই পরিচ্ছন্নতার পাঠ পেয়েছে সে।

প্রতিদিন শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্কুল চত্বর সাফ করাতে শিখিয়েছেন অন্বয়ী ও তার সহপাঠীদের। জিকো সরেন, অস্মিত দাস, কবিতা রানা, সোমবারি হেমব্রমদের সঙ্গে অন্বয়ীও প্রতিদিন প্রার্থনা সঙ্গীতের পরে স্কুল পরিচ্ছন্ন রাখার শপথও নেয়।

স্কুলের টিচার-ইন-চার্জ সুস্মিতা ঘোষমণ্ডল বলেন, “অন্বয়ীর সাফল্যে অন্য পড়ুয়ারাও উৎসাহিত হয়ে স্কুল চত্বর পরিষ্কার পরিছন্ন রাখতে আরও বেশি করে তৎপর হয়েছে। ব্যবহারিক জীবনেও ওরা পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব বুঝতে শিখেছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন