তহবিল ভরাতে ‘তোলাবাজি’

পিছু হটল পঞ্চায়েত

রীতিমত রসিদ ছাপিয়ে যে ওই টাকা তোলা হচ্ছে তাও ইতিমধ্যেই খবরে প্রকাশিত হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জুনাটিয়া, খেজুরবেড়িয়া, গুয়াবেড়িয়া-সহ একাধিক গ্রামে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া উপভোক্তাদের কাছ থেকে টাকা কেটে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

Advertisement

কেশব মান্না

সুতাহাটা শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৮ ০৮:৩০
Share:

বিডিও’র সই করা নথি।

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা থেকে একশো দিনের কাজ, যাবতীয় সরকারি প্রকল্পে উপভোক্তাদের বরাদ্দ থেকে টাকা কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে। হলদিয়ার সুতাহাটা ব্লকের গুয়াবেড়িয়াতে শাসক দলের পঞ্চায়েতের এমন ‘তোলাবাজি’ নিয়ে সরব উপভোক্তারা। পঞ্চায়েতের তরফে এই ঘটনায় ব্লক প্রশাসনের সায় আছে বলে দাবি জানিয়ে সেই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে ব্লক প্রশাসনের ভূমিকায় প্রশ্ন ওঠায় পঞ্চায়েতের তরফে শেষ পর্যন্ত তা বাতিল করা হয়।

Advertisement

উপভোক্তাদের অনেকের দাবি, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা এবং একশো দিনের কাজে সরকারি অর্থ যাঁরা পাচ্ছেন, তাঁদের কাছ থেকে এক হাজার টাকা করে কেটে নেওয়া হচ্ছে। রীতিমত রসিদ ছাপিয়ে যে ওই টাকা তোলা হচ্ছে তাও ইতিমধ্যেই খবরে প্রকাশিত হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জুনাটিয়া, খেজুরবেড়িয়া, গুয়াবেড়িয়া-সহ একাধিক গ্রামে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া উপভোক্তাদের কাছ থেকে টাকা কেটে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। প্রসঙ্গত, সরকারি প্রকল্পে উপভোক্তাদের কাছ থেকে ‘ঘুষ’ নেওয়ার অভিযোগ আগেও উঠেছে। জঙ্গলমহলে এই নিয়ে শাসক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সরব সেখানকার মানুষ।

পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে এ ভাবে টাকা কেটে নেওয়ার অভিযোগ ঘিরে সরব বিরোধীরাও। সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলেন, ‘‘এটা একেবারেই উচিত নয়। তা ছাড়া, আর্থিক অনিয়মের সামিল। আইনত দণ্ড হওয়া উচিত ওই পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি প্রদীপ কুমার দাসের কথায়, ‘‘তৃণমূলের রাজত্বে সব কিছুই সম্ভব।’’

Advertisement

পঞ্চায়েতের তরফে এই ‘তহবিল’ সংগ্রহে ব্লক প্রশাসনের সায় রয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট বিডিওর ওই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে সই রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বেরও দাবি, গত নভেম্বরে এমন তহবিল বাড়ানোর জন্য ব্লক প্রশাসনকে জানানো হয়েছিল। সেইমত পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষকে অনুমোদন দেওয়া হয়।

যদিও এই ব্যাপারে সুতাহাটার বিডিও সঞ্জয় শিকদার বলেন, ‘‘ওই পঞ্চায়েতের তহবিল সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তার জন্য যে চিঠি দেওয়া হয়েছিল তাতে আমার স্বাক্ষর রয়েছে। তবে তাতে কী ভাবে ওই তহবিল সংগ্রহ করা হবে তার উল্লেথ ছিল না। তাই ওই বিষয়টির সঙ্গে ব্লক প্রশাসনের যুক্ত থাকার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।’’

ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ধরনের অভিযোগ সামনে আসায় ইতিমধ্যেই নির্দেশ পাঠানো হয়েছে ওই পঞ্চায়েতে। যাতে তারা কোনওভাবে সরকারি প্রকল্পে উপকৃতদের কাছ থেকে টাকা না নেয়। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, রাজ্য সরকারের ১৯৭৩ সালের পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী কোনও পঞ্চায়েত নিজস্ব তহবিল বাড়াতে পারে। তবে সরকারি প্রকল্পে উপকৃতদের কাছ থেকে এ ভাবে টাকা কেটে তহবিল তৈরির কথা আইনে উল্লেখ নেই।

বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়ে যাওয়ায় বুধবার গুয়াবেড়িয়া পঞ্চায়েতের প্রধান শেখ সাবিরউদ্দিন বলেন, ‘‘এমন নিয়ম জানতাম না। পরে বুঝতে পেরে সাধারণের সুবিধার জন্য ওই বিজ্ঞপ্তি বাতিল করেছি।’’ বিডিওর অনুমোদন প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘পারস্পরিক একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। এখন তা মিটে গিয়েছে।’’ এই বিষয়ে জেলাশাসক রশ্মি কমলের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য তাঁকে ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন