গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ভোটাভুটিতে প্রধান হয়েও দলের ‘চাপে’ পদত্যাগ  

পরিবর্তনের ‘আঁতুড়ঘর’ হিসেবে পরিচিত নন্দীগ্রামে এমন ঘটনায় শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই প্রকট হয়েছে। বিরোধীশূন্য তৃণমূলের ওই পঞ্চায়েতে এমন ঘটনায় শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিজেপিও। তবে প্রধানের পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়নি বলে ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৮ ০১:২০
Share:

দু’মাসও কাটল না। তার আগেই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পদ থেকে দলের ‘চাপে’ ইস্তফা দিলেন তৃণমূল নেতা।

Advertisement

পরিবর্তনের ‘আঁতুড়ঘর’ হিসেবে পরিচিত নন্দীগ্রামে এমন ঘটনায় শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই প্রকট হয়েছে। বিরোধীশূন্য তৃণমূলের ওই পঞ্চায়েতে এমন ঘটনায় শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিজেপিও। তবে প্রধানের পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়নি বলে ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।

তৃণমূল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার নন্দীগ্রাম -১ ব্লকের কালীচরণপুর পঞ্চায়েতের উপ-সমিতি গঠনের দিন ঠিক করেছিল ব্লক প্রশাসন। ১৩-০ ফলে এই পঞ্চায়েত দখল করেছে তৃণমূল। এ দিন মিটিং শুরু হওয়ার কয়েক মিনিটের আগেই প্রধান পদ থেকে সরে দাঁড়ান শেখ আব্দুল আলকাজি। প্রসঙ্গত, গত ২৪ সেপ্টেম্বর কালীচরণপুর পঞ্চায়েতের প্রধান নির্বাচন হয়েছিল। কে প্রধান হবেন তা নিয়ে শাসক দলের হুইপ থাকলেও তা অগ্রাহ্য করে ভোটাভুটি হয়। ভোটাভুটিতে জয়ী হন শেখ আব্দুল। তৃণমূলের ব্লক নেতৃত্ব জানিয়েছেন, ঠিক ছিল নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলন পর্বে ‘শহিদ’ পরিবারের সদস্য শেখ সৈয়ম কাজিকে প্রধান করা হবে। কিন্তু দলীয় নির্দেশ অমান্য করে ৮-৫ ভোটের ব্যাবধানে জয়ী হন শেখ আব্দুল। স্বাভাবিক ভাবেই দলে দুই শিবিরে রেষারেষি বাড়ে।

Advertisement

অভিযোগ, পঞ্চায়েতের উপ-সমিতিগুলিতে নিজের কর্তৃত্ব কায়েম করার চেষ্টা করছিলেন শেখ সৈয়ম। এদিন তাই উপসমিতি গঠন উপলক্ষে দুই গোষ্ঠীই তাদের সমর্থকদের জড়ো করতে শুরু করে। অশান্তির আশঙ্কায় এ দিন পঞ্চায়েত অফিসের চারপাশে ১৪৪ ধারা জারি করে হয়। কিন্তু পঞ্চায়েতের ১৩ জন সদস্যের কেউ হাজির না হওয়ায় মিটিং মুলতুবি করে দেওয়া হয়।

প্রধান পদ থেকে শেখ আব্দুলের ইস্তফা প্রসঙ্গে সেখ সৈয়মের দাবি, ‘‘কেউ ভুল করেছিল। এখন দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশ মেনে সরে গিয়েছে।’’ যদিও, তাঁর ইস্তফার পিছনে দলের ‘চাপের’ কথা মানতে রাজি হননি শেখ আব্দুল। তাঁর দাবি, ‘‘ব্যক্তিগত অপছন্দ থেকেই আমি প্রধান হয়েছিলাম। এখন দলের স্বার্থে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলাম।’’

নন্দীগ্রাম-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি মেঘনাথ পালের প্রতিক্রিয়া, ‘‘দলের নির্দেশ অমান্য করে প্রধান হয়েছিলেন ওই সদস্য। তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরে, দলের আদর্শ মেনে চলার অঙ্গীকার করায় ফের তাঁকে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে।’’ বিডিও সুব্রত মল্লিকের দাবি, ‘‘আগের প্রধান লিখিতভাবে পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। এদিন উপসমিতি গঠন হয়নি। পরে মিটিং ডেকে নতুন প্রধান ও উপ সমিতি তৈরি করা হবে।’’

ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, ১৬ নভেম্বর ওই প্রধানকে নোটিস দিয়ে ডেকে পাঠানো হয়েছে। সেদিন ইস্তফা নিয়ে শুনানি হবে। তারপর প্রধানের পদত্যাগ পত্র গৃহীত হবে। তারপর নতুন প্রধান নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করা যেতে পারে।

দলের ‘দুর্গ’ নন্দীগ্রামে এমন ফাটল অবশ্য মানতে রাজি নন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। জেলা তৃণমূল সভাপতি শিশির অধিকারী বলেন, ‘‘উনি কেন পদত্যাগ করেছেন, তা প্রশাসনই সঠিক বলতে পারবে। আমাদের কাছে দল একটাই।’’

বিজেপির জেলা সভাপতি (তমলুক) প্রদীপ দাসের দাবি, ‘‘তৃণমূল নিজেদের মধ্যেও গণতন্ত্র হত্যা করতে চাইছে। এটা তারই নমুনা। আত্মসম্মান থাকা তৃণমূল কর্মীরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন