Train late at Kharagpur

রেলগাড়িটা মেপে চলে না ঘড়ির কাঁটা

করোনা কালের পর ট্রেনের সংখ্যা কমেছে। তার পরও লেট যন্ত্রণায় হয়রানির অন্ত নেই যাত্রীদের। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর শাখায় লোকাল ট্রেনগুলি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:০৯
Share:

ট্রেনের অপেক্ষায়। খড়্গপুর স্টেশনে চেনা দৃশ্য। —নিজস্ব চিত্র।

ট্রেন এখন শরতের মেঘের মতোই খেয়ালি। আপন ইচ্ছার মালিক। নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছনোর কোনও তাড়া নেই। তাই নিত্যযাত্রীদের কাছে এখন মেঘ মানেই সময় নষ্ট।

Advertisement

গড়বেতার বেকার যুবক নীলাদ্রি ঘোষ নিয়মিত মেদিনীপুরে যান এমব্রয়ডারির কাজ শিখতে। গত সপ্তাহে ট্রেন লেটের জন্য দুটো ক্লাস করতে পারেননি। নীলাদ্রি বলেন, ‘‘দর্জির কাজ করি। একেই রেডিমেড পোশাকের জন্য দর্জির কদর কমেছে। তাই খদ্দেরের আকর্ষণের জন্য বিশেষ এমব্রয়ডারি কাজ শিখছিলাম। কিন্তু প্রায় প্রতিদিনই ট্রেন লেট। আদ্রা-মেদিনীপুর মেমু অনিয়মিত হওয়ায় খুব অসুবিধা হচ্ছে।’’ পাঁশকুড়ার যুবক অভীক মান্না হাওড়ার এক কারখানায় কাজ করেন। নিয়মিত লোকাল ট্রেনে যাতায়াত করেন। অভীক বলেন, ‘‘প্রায় চারমাস ধরে লোকাল ট্রেন নিয়মিত পাওয়া যাচ্ছে না। ট্রেন দেরি হওয়ার জন্য কারখানায় সময় মতো ঢুকতে পারি না।’’ শুধু তাঁরাই নন, ট্রেন লেটে ক্ষতির মুখে পড়ছেন চাষি থেকে ব্যবসায়ী প্রত্যেকেই। খড়্গপুর - হাওড়া, খড়্গপুর-আদ্রা শাখায় ছবিটা প্রায় একই। তমলুক - হলদিয়া লাইনেও ট্রেন লেটে অসুবিধায় পড়েন যাত্রীরা।

করোনা কালের পর ট্রেনের সংখ্যা কমেছে। তার পরও লেট যন্ত্রণায় হয়রানির অন্ত নেই যাত্রীদের। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর শাখায় লোকাল ট্রেনগুলি ১০ মিনিট থেকে শুরু করে একঘণ্টা পর্যন্ত দেরিতে চলছে বলে অভিযোগ। যাত্রীদের অভিযোগ, সব থেকে বেশি দেরি হয় সাঁতরাগাছি থেকে হাওড়া পৌঁছতে। ট্রেন স্বাভাবিক গতিতে চললে সাঁতরাগাছি থেকে হাওড়া যেতে সময় লাগে ১৮ মিনিট। যাত্রীদের অভিযোগ দেরি করতে করতে অনেক সময় এটা ৩০ মিনিট থেকে একঘণ্টাও লেগে যাচ্ছে। যাত্রীদের আরও অভিযোগ হঠাৎ করে লোকাল ট্রেন বাতিল করে দেওয়া নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। লোকালের পাশাপাশি গীতাঞ্জলী, তাম্রলিপ্ত, কাণ্ডারি,আজাদ হিন্দ এমনকী, দুরন্ত এক্সপ্রেসও কয়েকমাস ধরে দেরিতে চলছে বলে অভিযোগ। দক্ষিণ পূর্ব রেল (হাওড়া-জকপুর) প্যাসেঞ্জার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি সমীর সামন্ত বলেন, ‘‘লোকাল এবং এক্সপ্রেস সমস্ত ট্রেনই অস্বাভাবিক দেরিতে চলছে। আমরা জেনারেল ম্যানেজারকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলাম, রেল সময় নিয়েছে। না হলে আমরা পথে নামব।’’ খড়্গপুর - আদ্রা রেলওয়ে প্যাসেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক দুর্গাদাস দে বলছেন, ‘‘রেল যাত্রী সুরক্ষার কথা বলে দিনের পর দিন কাজের নামে ট্রেনের লেট রান করানোটা একটা অভ্যাসে পরিণত করেছে। এতে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের বদলে ভোগান্তিটাই বেশি হচ্ছে।’’

Advertisement

মেদিনীপুর-হাওড়া, ভদ্রক-হাওড়া শাখায় ট্রেন লেট এখন রুটিনে পরিণত হয়েছে বলে যাত্রীদের অভিযোগ। পুজোর মুখে মেদিনীপুর-হাওড়া শাখায় ট্রেন লেটের প্রবণতা কমেনি। পুজোর সময় অধিকাংশ লোকালই সমস্ত স্টেশনে দাঁড়ায়, সে ক্ষেত্রে ট্রেন লেটের প্রবণতা আরও বাড়বে বলে মত যাত্রীদের। মেদিনীপুর - খড়্গপুর-হাওড়া ডেইলি প্যাসেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক জয় দত্ত বলেন, ‘‘আগের তুলনায় সামান্য উন্নতি হলেও, ট্রেন এখনও সময়ে চলছে না। পুজো এলে এই দুর্ভোগ আরও বাড়বে। রেল কর্তারা কী ঘুমিয়ে রয়েছেন?’’

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের টাটা-খড়্গপুর শাখায় রয়েছে ঝাড়গ্রাম স্টেশন। জেলা সদরের স্টেশনটিতে হাতে গোনা কিছু এক্সপ্রেস ট্রেন থামে। আর রয়েছে টাটা-খড়্গপুর শাখার কয়েকটি লোকাল ট্রেন। কয়েক মাস যাবত বেশ লেটেই চলছে এই শাখার ট্রেন। সমস্যায় পড়ছেন নিত্যযাত্রীরা। কারণ, খড়্গপুর, মেদিনীপুর ও অন্যান্য এলাকা থেকে বহু নিত্য যাত্রী ঝাড়গ্রামের কর্মস্থলে যাতায়াত করেন। ট্রেন সময় মতো না চলায় তারা নির্দিষ্ট সময়ে কর্মস্থলে পৌঁছতে পারছেন না। আবার অনেক দেরিতে বাড়িতে ফিরছেন।

দক্ষিণ পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক আদিত্য চৌধুরী বলছেন, ‘‘ট্রেন সময়ে চলাচলের জন্য আমরা নিয়মিত নজরদারি চালাচ্ছি। কর্মীদের কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উৎসবের মরসুমে সেই নজরদারি চলবে। তবে আমাদের জোন ছাড়াও, অন্যান্য জোনে লাইন রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলায় ট্রেনের গতি কিছুটা শ্লথ বা সময় পরিবর্তন হচ্ছে। অন্যান্য ট্রেনেও তার প্রভাব কিছুটা হলেও পড়ছে।’’

(তথ্য সহায়তা - কিংশুক গুপ্ত, রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য, দিগন্ত মান্না, কেশব মান্না, দেবমাল্য বাগচী)

চলবে

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন