ভাঙচুর নার্সিংহোমে

শ্বশুরবাড়ি এসে মৃত্যু জামাইয়ের

মৃতের পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস-অম্বলের সমস্যা রয়েছে অজয়ের। এর আগেও ভিন্‌ রাজ্যে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে এসেছিলেন ওই যুবক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ডেবরা শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৮ ০১:৪৯
Share:

ভাঙচুরের পরে। নিজস্ব চিত্র

জামাইষষ্ঠীতে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাঁকে ডেবরার এক নার্সিংহোমে ভর্তি করেন পরিজনেরা। বুধবার সকালে নার্সিংহোমেই বছর পঁচিশের অজয় দোলইয়ের মৃত্যু হয়। ঘটনায় চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে নার্সিংহোমে বিক্ষোভ দেখায় মৃতের পরিজনেরা। ভাঙচুর চলে বলেও অভিযোগ।

Advertisement

মৃতের পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস-অম্বলের সমস্যা রয়েছে অজয়ের। এর আগেও ভিন্‌ রাজ্যে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে এসেছিলেন ওই যুবক। তবে রোগ থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি মেলেনি। মঙ্গলবার জামাইষষ্ঠী উপলক্ষে ডেবরার পূর্ণগ্রামে শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছিলেন ওই যুবক। ষষ্ঠীর ফোঁটা নেওয়ার আগেই শুরু হয় তাঁর বুকে-পেটে যন্ত্রণা শুরু হয়। অভিযোগ, আগে কয়েকবার অসুস্থ অবস্থায় অজয়কে ডেবরা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও তাঁকে রেফার করে দেওয়া হয়। তাই মঙ্গলবার অজয়কে একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন পরিজনেরা। ওই দিন দুপুরেই তাঁকে নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়।

মৃতের পরিজনেদের অভিযোগ, নার্সিংহোমে ভর্তি নেওয়ার পর থেকে চিকিৎসা না করে দীর্ঘক্ষণ রোগীকে ফেলে রাখা হয়েছিল। তার পরে চিকিৎসকের বদলে নার্সিংহোমের মালিকপক্ষের লোকেরা চিকিৎসা শুরু করেন। রাতে বেশ কয়েকটি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। ওই ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরেই আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন অজয়। তার পরে ভোরে তাঁর মুখ থেকে গ্যাঁজলা বের হতে থাকে। কিছুক্ষণ পরেই মৃত্যু হয় ওই যুবকের। যদিও নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের দাবি, গ্যাঁজলা নয়, বমি করছিলেন ওই যুবক। সেই সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ওই যুবকের বাবা শ্যামপদ দোলুই। তিনি ওই যুবককে সোজা করে বসাতে গেলে ফুসফুসে আটকে যায় বমি। আর তাতেই মৃত্যু হয় যুবকের।

Advertisement

যদিও অজয়ের মৃত্যুর পরে এ দিন সকাল থেকেই নার্সিংহোমে জমায়েত হতে শুরু করেন মৃতের পরিজন ও গ্রামবাসীরা। নার্সিংহোমে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে তাঁরা। বেলা বাড়তেই উত্তেজনা ছড়ায় নার্সিংহোমে। অভিযোগ, নার্সিংহোমের বেশ কয়েকটি জানলার কাচ ভাঙচুর করা হয়।

মৃতের দাদা হাবুল দোলুইয়ের অভিযোগ, “শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে খাওয়ার আগেই ভাই অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। ওর গ্যাসের রোগ রয়েছে। ওকে নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। কিন্তু চিকিৎসক না থাকায় নার্সিংহোমের মালিক নিজেই চিকিৎসক সেজে বেশকিছু ভুল ইঞ্জেকশন দেয়। এর জেরেই ভোরে ভাই মারা যায়। চিকিৎসায় গাফিলতির জেরেই ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে।” ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরে এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করবেন বলে জানিয়েছেন মৃতের পরিজনেরা। যদিও নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে থানায় নার্সিংহোমে ভাঙচুরের অভিযোগ করা হয়েছে। নার্সিংহোম মালিক প্রবীর মাইতির দাবি, “চিকিৎসায় কোনও গাফিলতি হয়নি। নিয়ম মেনে ওষুধ ও ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে। ওই যুবক বমি করছিল। সেই সময় ওঁর বাবা ওকে ভুলবশত সোজা করে বসাতে গেলে ফুসফুসে বমি আটকে মৃত্যু হয় রোগীর। অভিযোগ থাকলে তদন্ত হোক। কিন্তু এ ভাবে নার্সিংহোম ভাঙচুর করায় আমি থানায় অভিযোগ জানিয়েছি।” নার্সিংহোমে ভাঙচুরের ঘটনায় দু’জনকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন