Midnapore Medical College

রেফার ‘রোগ’ সারবে কবে!

পশ্চিম মেদিনীপুরের সবচেয়ে বড় সরকারি হাসপাতাল মেদিনীপুর মেডিক্যালই। মেডিসিন, অর্থোপেডিক, সার্জারি, কার্ডিয়োলজি বিভাগ-সহ কয়েকটি বিভাগের পরিকাঠামো অত্যন্ত দুর্বল বলেই দাবি একাংশ রোগীর পরিজনের।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:১৫
Share:

মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ।

‘ক্যাচ পেশেন্ট’দের নিয়ে মাথাব্যথা তো রয়েছে। সরকারি হাসপাতাল প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত একাংশের কাছে তার চেয়েও বড় চিন্তার কারণ ‘রেফার’। উপায় না থাকায় যেমন অনিচ্ছা সত্ত্বেও ক্যাচ পেশন্টদের ভর্তি নিতে বাধ্য হন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, ‘রেফার’-এর বিষয়টি কিছুটা তেমনই। পরিকাঠামোর অভাবে রোগীদের পাঠাতে হয় কাছের বড় হাসপাতালে। হাসপাতালের অন্দরে কান পাতলে শোনা যায়, ভর্তি নিলেও বহু ক্ষেত্রে ঝুঁকি এড়াতে ভিআইপি পেশেন্টদেরও ‘রেফার’ করা হয়। তবে এ ক্ষেত্রেও যে ঝুঁকি থাকে না তেমনটা নয়। কারণ, ‘রেফার’ বন্ধের নির্দেশ রয়েছে সার্বিক ভাবে। তাই প্রভাবশালী রোগীদের রেফার করলে প্রশাসনের শীর্ষস্তরে তা পাঁচকান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে আরও বেশি। তবে এ সব কিছু নিয়ে সরকারি হাসপাতালে বেঁচেবর্তে থাকে ‘রেফার’রাজ।

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুরের সবচেয়ে বড় সরকারি হাসপাতাল মেদিনীপুর মেডিক্যালই। মেডিসিন, অর্থোপেডিক, সার্জারি, কার্ডিয়োলজি বিভাগ-সহ কয়েকটি বিভাগের পরিকাঠামো অত্যন্ত দুর্বল বলেই দাবি একাংশ রোগীর পরিজনের। এখানকার স্বাস্থ্য পরিষেবার মান নিয়েও বিস্তর নালিশ রয়েছে। অনেক সিনিয়র ডাক্তারকে নির্ধারিত সময়ে পাওয়াই যায় না। অনেক সময়ে রোগীদের কিছু ওষুধ, চিকিৎসা সামগ্রী বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়। যেগুলি কিনে আনার কথা নয়। হাসপাতাল থেকেই পাওয়ার কথা। একাংশ সিনিয়র ডাক্তারের গরহাজিরা নিয়ে রোগীদের অসন্তোষ যে অহেতুক নয়, দিন কয়েক আগে পরিদর্শনে তা টের পেয়েছেন অধ্যক্ষা, সুপার। নিয়মানুযায়ী, সকাল ৯টায় বহির্বিভাগ চালু হওয়ার কথা। দশটার পরেও কয়েকটি বহির্বিভাগে সিনিয়র চিকিৎসকের দেখা মেলেনি। এমনকি, একাধিক বিভাগের দরজাও তখনও খোলেনি! কর্তৃপক্ষের দাবি, ১০০টি শয্যাপিছু গড়ে রোগী ভর্তি থাকেন ১২৭ জন। পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট কতটা চাপ সামলাতে হয় হাসপাতালগুলিকে। আবার এ কথাও অস্বীকার করা যায় না যে, মাঝেমধ্যেই রেফার হওয়া রোগীকে নিয়ে পরিজনেরা এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে চরকিপাক খান। অভিযোগ, বহু ক্ষেত্রে দায় এড়াতেই ‘রেফার’ করা হয়।

কর্তৃপক্ষের দাবি, ১০০ জন রোগী এলে তার মধ্যে ৫- ৬ জনকে রেফার করতে হয়। নানা কারণে। ব্লক থেকে জেলায় রেফারে রাশ নেই কেন? জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী বলেন, ‘‘ইচ্ছে মতো রেফার করার প্রবণতা বন্ধ করতে কয়েকটি হাসপাতালকে কড়াভাবেই সতর্ক করা হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, যদি দেখা যায়, চিকিৎসা পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও সেই সমস্যা নিয়ে আসা রোগীকে অন্যত্র রেফার করা হয়েছে, তাহলে বিষয়টি জেলার স্বাস্থ্য ভবনের নজরে আনার কথাও জানানো হয়েছে।

Advertisement

পাশের জেলা ঝাড়গ্রামে রয়েছে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। অথচ, দেড় বছরেও গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলি চালু করা যায়নি। প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ার বরাদ্দ মেলেনি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও নেই। ফলে, যা রয়েছে, তাই দিয়েই রোগীর শুশ্রুষায় অসম লড়াই চালাতে হয় কর্তৃপক্ষকে। ছ’শো শয্যার হাসপাতালে নেই বার্ন ইউনিট। কার্ডিয়োলজি, নিউরোলজি, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি, নেফ্রোলজি, ইউরোসার্জারির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলিও নেই। ফলে, জেনারেল ফিজিশিয়ান দিয়েই হৃদরোগীর চিকিৎসা করাতে হয়। রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে করার কিছুই থাকে না। তখন ‘রেফার’ করলেও অন্যত্র পাঠানোর মতো রোগীর শারীরিক পরিস্থিতিও থাকে না।

নিউরোসার্জেন না থাকায় ট্রমা কেয়ার চালু হলেও যথাযথ পরিষেবা দেওয়া যায় না। দুর্ঘটনায় গুরুতর জখমদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরে রোগীর প্রাণ বাঁচানোর স্বার্থেই রেফার করতে হয়। হাসপাতালের এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘এত কিছু সত্ত্বেও হাসপাতালের বার্ষিক রেফারের রেট মাত্র তিন শতাংশ।’’ হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলছেন, ‘‘বার্ন ইউনিট না থাকায় সার্জিক্যাল ওয়ার্ডের একদিকে অগ্নিদগ্ধ রোগীদের রেখে চিকিৎসা করা হয়। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।’’

সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত একাংশের মতে, হয়তো পরিকাঠামোগত দিক থেকে বিচার করলে অবাস্তব মনে হতে পারে। কিন্তু যদি প্রতিটি ‘রেফার’-এর ঘটনা পৃথক ভাবে বিচার করা দেখা হত তা যুক্তিসঙ্গত কি না এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হত তা হলে হয়তো হাসপাতালের ‘রেফার’ রোগ সারানো যেত।

(তথ্য সহায়তা: বরুণ দে, কিংশুক গুপ্ত) শেষ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন