সুপার স্পেশ্যালিটি নামেই

এসি নেই সব ঘরে, ঘাম ছুটছে রোগীর

ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স থেকে রোগী বা তাঁদের পরিজনেরা প্রতিদিন গলদঘর্ম হচ্ছেন— চিকিসার স্বার্থে। বিশেষত গ্রীষ্ম, বর্ষায় ঝাড়গ্রামের অস্বস্তিকর আবহাওয়ার তিষ্ঠানো দায়।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:৪০
Share:

নিশ্ছিদ্র: বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় কেন্দ্রীয় ভাবে বাতানুকুল। ভুল ভাঙে ভিতরের দমবন্ধ পরিস্থিতিতে। নিজস্ব চিত্র

গালভরা নাম ‘সুপার স্পেশ্যালিটি’। চকচকে হাসপাতাল ভবনটি বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে সম্পূর্ণ বাতানুকূল। ছোট ছোট কাচের জানলা, বেশিরভাগই বন্ধ। ঘুলঘুলি নেই। কিন্তু আদতে হাসপাতালের সব ঘর বাতানুকূল নয়। ফলে দমবন্ধ করা পরিস্থিতি ভিতরে।

Advertisement

ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স থেকে রোগী বা তাঁদের পরিজনেরা প্রতিদিন গলদঘর্ম হচ্ছেন— চিকিসার স্বার্থে। বিশেষত গ্রীষ্ম, বর্ষায় ঝাড়গ্রামের অস্বস্তিকর আবহাওয়ার তিষ্ঠানো দায়।

স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরের খবর, কেন্দ্রীয় ভাবে বাতানুকুল হাসপাতাল করার মতো করে ভবনটি তৈরি হয়েছে। কিন্তু বাতানুকুল ব্যবস্থা রয়েছে হাতে গোনা কয়েকটি বিভাগ। বাকি অংশে সিলিং ফ্যানই ভরসা।

Advertisement

অথচ, পরিকল্পনায় ত্রুটির কারণেই ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল ভবনে স্বাভাবিক বাতাস চলাচলের পথ নেই। ঝাড়গ্রাম জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে সমস্যার বিষয়টি রাজ্য দফতরের নজরে আনা হয়েছে। ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুর ও নয়াগ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল ভবনেও একই সমস্যা হচ্ছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সুপার স্পেশালিটি ভবনের একতলায় জরুরি বিভাগের ওটি, ইউএসজি, প্যাথোলজি, এন্ডোস্কোপি বিভাগগুলি বাতানুকুল। আবার ওই একতলার জরুরি বিভাগটিই বাতানুকুল নয়। একতলা ও দোতলা মিলিয়ে ২৩ টি ছোট ছোট ঘরে চলে আউটডোর। সেই ঘরগুলিতেও বাতানুকুল ব্যবস্থা নেই। নেই ‘ক্রস-ভেন্টিলেশন’-এর ব্যবস্থাও।

হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, “প্রতিদিন আউটডোরে গড়ে হাজার দু’য়েক রোগী আসেন। এক একটি ঘরে কমপক্ষে দেড় থেকে দু’শো রোগীর লাইন পড়ে। ফলে রোগী ও চিকিৎসক দু’পক্ষেই তখন গলদঘর্ম।”

হাসপাতালের আর এক চিকিৎসকের দাবি, “দমবন্ধ পরিবেশে রোগী দেখতে গিয়ে অনেক সময় নিজেরাই অসুস্থ বোধ করি।” হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী মাইনো হাঁসদা, আহ্লাদী কিস্কুদের কথায়, “ওয়ার্ডের ভিতরে বদ্ধ পরিবেশ। সিলিং ফ্যান চললেও অস্বস্তি কাটে না। বাতাস চলাচলের কোনও ব্যবস্থা নেই।”

হাসপাতাল ভবনের তিন তলায় রয়েছে মেল মেডিসিন ও সার্জিক্যাল ওয়ার্ড, চার তলায় ফিমেল মেডিসিন ও সার্জিক্যাল ওয়ার্ড— কোথাও বাতানুকুল ব্যবস্থা নেই। এক নার্সের কথায়, “খুপরি মতো কয়েকটি জানলা রয়েছে। তাতে আবার কার্নিশ নেই। খোলা রাখলে বৃষ্টির জল ঢুকে যায়। নয়তো পাখি ঢুকে যায়।”

হাসপাতালের পাঁচতলায় অপারেশন থিয়েটর কমপ্লেক্সটি বাতানুকুল। কিন্তু সেখানে আবার ছাদের নির্মাণ-ত্রুটির কারণে বৃষ্টি জল চুঁইয়ে পড়ে, ভেসে যায় চারপাশ। সম্প্রতি হাসপাতালের ওটি কমপ্লেক্সের একাংশ ফলস সিলিং ভেঙে পড়েছে।

জঙ্গলমহলের আমজনতাকে উন্নতমানের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার জন্য প্রায় ৮০ হাজার বর্গফুট এলাকাজুড়ে তৈরি হয়েছে পাঁচ তলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। একটি নামকরা নির্মাণ সংস্থাকে দিয়ে ভবনটি তৈরি করানো হয়েছে। খরচ হয়েছে প্রায় ৬৬ কোটি টাকা। গত বছর অগস্টে হাসপাতালটি পুরো দস্তুর চালু হয়। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই ভবনটির বেহাল অবস্থা।

হাসপাতালের সুপার মলয় আদক বলেন, “সমস্যার বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে।” এ বিষয়ে অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছেন ঝাড়গ্রাম জেলার সিএমওএইচ অশ্বিনী মাঝি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন