ডেঙ্গিতেও হুঁশ ফেরেনি
Dengue

অভিযান ঢিলে, জমছে জঞ্জাল

শহরের আবর্জনা সাফাইয়ের প্রসঙ্গ উঠলে বারবার রেল এলাকায় জঞ্জাল জমার কথা বলেছেন পুর-কর্তৃপক্ষ, তুলেছেন রেলের উদাসীনতার অভিযোগ। পুজোর আগে অভিযানে নেমে রেল এলাকার ওয়ার্ডগুলো পুরসভা সাফাইও করে।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৭ ০১:১৭
Share:

দূষণ: আবর্জনা ও জমা জলে বিপদ। কৌশল্যায়। নিজস্ব চিত্র

ডেঙ্গি ক্ষত এখনও দগদগে। পুজোর আগে মশাবাহী এই রোগে খড়্গপুর শহরের দুই বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে। তারপর ঘটা করে শুরু হয়েছিল বিশেষ অভিযান। কিন্তু পুজোর ছুটিতে পুরসভার ঢিলেঢালা ভাবে ডেঙ্গি অভিযানে কার্যত দাঁড়ি পড়ে গিয়েছে। কিছু কিছু মণ্ডপে ডেঙ্গি সচেতনতা প্রচার চলেছিল ঠিকই। তবে শহর জুড়ে জমে থাকা আবর্জনা সাফাইয়ের কোনও ব্যবস্থা চোখে পড়ছে না। পুরকর্মীদের পুজোর ছুটি শেষ না হওয়ায় জঞ্জাল-যন্ত্রণার ছবিটা পাল্টাচ্ছেও না।

Advertisement

শহরের আবর্জনা সাফাইয়ের প্রসঙ্গ উঠলে বারবার রেল এলাকায় জঞ্জাল জমার কথা বলেছেন পুর-কর্তৃপক্ষ, তুলেছেন রেলের উদাসীনতার অভিযোগ। পুজোর আগে অভিযানে নেমে রেল এলাকার ওয়ার্ডগুলো পুরসভা সাফাইও করে। অথচ পুরসভার নিজস্ব ওয়ার্ডগুলিতেই জমে রয়েছে আবর্জনা। বিশেষ করে কৌশল্যা, ইন্দা, বুলবুলচটির মতো এলাকায় আবর্জনা স্তূপ চোখে পড়ছে। কৌশল্যায় তো সমস্যা চরমে পৌঁছেছে। দুর্গন্ধ আর দূষণে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ।

খড়্গপুরে এ বার ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত উদ্বেগ বাড়িয়েছিল। পুজোর আগে পর্যন্ত জেলার ১৮০জন ডেঙ্গি আক্রান্তের মধ্যে খড়্গপুরেরই বাসিন্দা ছিলেন ১১০জন। মৃত্যু হয়েছিল দু’জনের। তখন বাড়তি শ্রমিক নামিয়ে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছিল। চলছিল আবর্জনা সাফাই, নর্দমা পরিষ্কার, আগাছা কাটা, ব্লিচিং ও মশা মারার তেল ছড়ানোর কাজ। কিন্তু পুজোর ছুটি শুরু হতেই সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আর তাই শহরের ইন্দায় ‘ইঙ্গিত’ ক্লাব সংলগ্ন ভ্যাটে বেলা বাড়তেই আবর্জনার পাহাড় জমে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা রণজিৎ জানা বলেন, “ভ্যাটে সারাদিনই আবর্জনা পড়ে থাকে। পুজোর আগে দিনে দু’বেলা আবর্জনা সাফাই হচ্ছিল। এখন দিনে একবার আবর্জনা তোলা হচ্ছে। তাই দূষণ ছড়াচ্ছে।” মালঞ্চ রোড, সুভাষপল্লি, ভবানীপুর, নিমপুরা-সহ বিস্তীর্ণ এলাকাতেই এক ছবি।

Advertisement

জঞ্জাল সমস্যা সব থেকে প্রকট ২৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায়। এখানে কৌশল্যা বাজারের পরে দত্তবাড়ি সংলগ্ন এলাকা, হরনাথ আশ্রম এলাকায়, বুলবুলচটিতে আদালতের রাস্তায় স্তূপাকার জঞ্জাল জমে থাকছে। নিয়মিত আবর্জনা সাফাই হয় না বলেই অভিযোগ বাসিন্দাদের। ডেঙ্গি ছড়ানোর পরেও পুর-পারিষদ (স্বাস্থ্য) বেলারানি অধিকারীর নিজের এই ওয়ার্ডে কেন এমন হাল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কৌশল্যার বাসিন্দা শিক্ষক ফাল্গুনিরঞ্জন রাজ, ওষুধ ব্যবসায়ী স্বপন জানারা বলেন, “নিয়মিত আবর্জনা সাফাই হয় না। বারবার বললে একদিন এসে জমে থাকা জঞ্জাল তুলে নিয়ে যায়। ব্লিচিং, মশা মারার তেলও ছড়ানো হচ্ছে না।”

জঞ্জাল সাফাই নিয়ে কাউন্সিলর ও পুর-কর্তৃপক্ষের দায় ঠেলাঠেলিও চলছে। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর বেলারানি অধিকারী বলেন, “যেখানেই ভ্যাট করতে চাই, লোকে বাধা দেয়। পুরসভার গাড়ি দিনে একবার আসলে আমি কী করব! তাছাড়া ১৩টি বুথের ওয়ার্ড মাত্র ৬জন শ্রমিক দিয়ে কি পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব!’’

শহর জুড়ে জঞ্জাল সমস্যার কথা অবশ্য মানতে নারাজ খড়্গপুরের পুরপ্রধান। পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, “পুরসভা ছুটি থাকলেও শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে সাফাইকর্মীরা কাজ করছেন। আর কাউন্সিলরদের তো কর্মনিযুক্তি প্রকল্পে টাকা দেওয়া হয়। তা দিয়েই তো শ্রমিক নিয়োগ করা যেতে পারে।’’ তবে তিনি মানছেন, সারাবছর বিশেষ অভিযান চালানোর মতো পুরসভার টাকা নেই। ভ্যাট থেকে দু’বেলা আবর্জনা তোলার জন্য বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনা করা হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন পুরপ্রধান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন