বন্ধ এটিএম, টাকা নেই ডাকঘরেও

নোটের চোটে দুর্ভোগ চলছেই! পাঁচশো ও একহাজার নোট বাতিলের ঘোষণার পর বুধবার ও বৃহস্পতিবার এটিএম বন্ধ ছিল। শুক্রবার খোলার কথা থাকলেও বন্ধ থাকল অধিকাংশ এটিএম। ঝাড়গ্রাম থেকে তমলুক, কাঁথি থেকে ঘাটাল— কমবেশি দুর্ভোগের শিকার হলেন অনেকে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৬ ০১:০৯
Share:

পিংলার এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে টাকা তোলা ও জমার দীর্ঘ লাইন।

নোটের চোটে দুর্ভোগ চলছেই!

Advertisement

পাঁচশো ও একহাজার নোট বাতিলের ঘোষণার পর বুধবার ও বৃহস্পতিবার এটিএম বন্ধ ছিল। শুক্রবার খোলার কথা থাকলেও বন্ধ থাকল অধিকাংশ এটিএম। ঝাড়গ্রাম থেকে তমলুক, কাঁথি থেকে ঘাটাল— কমবেশি দুর্ভোগের শিকার হলেন অনেকে।

বৃহস্পতিবারের মতো শুক্রবারও সকাল থেকেই প্রায় প্রতিটি ব্যাঙ্কের সামনে ছিল দীর্ঘ লাইন। ভিড় ছিল ডাকঘরগুলিতেও। যদিও নতুন নোট না দেওয়ায় তমলুক প্রধান ডাকঘরে এসে দুর্ভোগের শিকার হন অনেকে। বৃহস্পতিবার সকালে তমলুক প্রধান ডাকঘরে কয়েক হাজার টাকা জমা দিয়েছিলেন শহরের শঙ্করআড়ার বাসিন্দা কাকলি মেটা। নতুন টাকা এলে তবেই দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন ডাকঘর কর্তৃপক্ষ। শুক্রবারও ডাকঘরে এসে খালি হাতেই ফিরতে হল কাকলিদেবীকে। তাঁর কথায়, ‘‘টাকা ফেরত পাওযার আশায় বৃহস্পতিবার টাকা জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু টাকা দেওয়া হয়নি। এ দিনও ফিরে যেতে হল।’’ গ্রাহকদের এমন হয়রানির জন্য ডাকঘর কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করেছেন ক্ষুদ্র সঞ্চয়ে যুক্ত এজেন্ট সংগঠন তমলুক স্মল সেভিংস এজেন্ট অর্গানাইজেশান। সংগঠনের সম্পাদক সুবিনয় মাইতির অভিযোগ, ‘‘ডাকঘর কর্তৃপক্ষ দু’দিন পরও গ্রাহকদের হাতে নতুন টাকা তুলে দিতে পারেনি। এই অবহেলার জন্য গ্রাহকদের ভোগান্তি হচ্ছে। গ্রামীণ ডাকঘরগুলিতেও অবস্থা একই।’’ সমস্যার কথা স্বীকার করে তমলুক প্রধান ডাকঘরের পোস্টমাস্টার অঞ্জলি বেরা বলেন, ‘‘ব্যাঙ্কের থেকে চাহিদা মতো নতুন টাকা না আসায় আমরাও গ্রাহকদের দিতে পারেনি। শুক্রবার বিকেলে ব্যাঙ্কের থেকে নতুন টাকা এসেছে। গ্রাহকদের দ্রুত টাকা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।’’ অনেক এটিএমও বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ আরও বাড়ে। শহরের নিমতলার বাসিন্দা বিবেকানন্দ মাইতি বলেন, ‘‘সকালে এটিএম কাউন্টারে টাকা তুলতে যাই। কিন্তু টাকা মেলেনি। বাধ্য হয়ে ফের ব্যাঙ্কে গিয়ে টাকা তুলেছি।’’

Advertisement

বিকেল ৩টে সময়ও খোলেনি তমলুকের এই এটিএম। শুক্রবার। — পার্থপ্রতিম দাস, কিংশুক আইচ।

পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলের অনেক ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরেও এ দিন নোট পরিবর্তন করা যায়নি বলে অভিযোগ। লালগড়ের বাসিন্দা পেশায় গৃহশিক্ষক পঙ্কজকুমার মণ্ডল শুক্রবার আটটি পাঁচশো টাকার নোট পাল্টাতে লালগড় উপ ডাকঘরে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নোট বিনিময় করা যায়নি। এরপর ব্যাঙ্কে গিয়েও নোট বদলাতে পারেননি তিনি। পঙ্কজবাবু বলেন, “সংসার খরচের জন্য বাড়িতে যে টাকা ছিল, তার বেশির ভাগই রয়েছে পাঁচশো টাকার নোটে। নোট বদলাতে না পেয়ে ভীষণই সমস্যায় পড়েছি। বাজারহাট করব কীভাবে, সেটাই বড় চিন্তা!” লালগড়ের ধরমপুর গ্রামের ধরমপুর শাখা ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার বিমল পাণ্ডে বলেন, “গ্রামাঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষজনের কাছে সাধারণত, ১০, ২০, ৫০ টাকার নোটই বেশি থাকে। একশো টাকার নোটও কয়েক জনের কাছে থাকে। পাঁচশো-হাজার টাকার নোট রয়েছে এমন গ্রাহক হাতে গোনা।’’ তিনি বলেন, ‘‘মূলত, চাকরিজীবীরাই আসছেন নোট বদলের জন্য। তবে আমরা গ্রাহকদের সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট জমা নিচ্ছি। এখনও নোট বিনিময়ের কোনও নির্দেশিকা আমার কাছে আসেনি।”

নয়াগ্রাম ব্লকের বালিগেড়িয়ায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা তরুণকুমার সাহা, রাধেশ্যাম সাঁতরাদের বক্তব্য, সকাল ১১টা থেকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছি। বিকেল চারটেতেও ব্যাঙ্কে ঢুকতে পারিনি। সন্ধে ছ’টায় ব্যাঙ্কের দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নয়াগ্রামের বাসিন্দা মনতাজ আলি বলেন, “নয়াগ্রামের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে পাঁচ হাজার টাকার বেশি তোলা যাচ্ছে না। এটিএমও বন্ধ।” লালগড়, রামগড়, বিনপুর, শিলদার মতো প্রত্যন্ত এলাকার এটিএমগুলি বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ। ব্যাঙ্কের সামনে তো বটেই, কাঁথিতে এটিএমগুলোর সামনেও ছিল দীর্ঘ লাইন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন