আজও রাস্তার নলকূপই ভরসা হলদিয়ার

বন্দর শহরের চাকচিক্য নিয়ে কোনও সংশয় নেই। অত্যাধুনিক শপিং মল-এ বিদেশি কেতাকে টেক্কা দেওয়া দোকান-পাট। বিকেল না হতেই সেখানে জড়ো হয় তরুণ প্রজন্ম। অথচ একটু একটু করে শহরের ভিতরে এগিয়ে গেলেই চোখে পড়বে নলকূপ ঘিরে জমতে থাকা ভিড়। হাতে বিভিন্ন রকমের পাত্র নিয়ে সারাদিনের জন্য জল সংগ্রহ করে রাখেন বাড়ির মেয়েরা। সকাল বেলা অফিস যাওয়ার আগে এখনও ওই নলকূপেই স্নান সারেন অনেকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হলদিয়া শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৫ ০০:২৯
Share:

এটাই নিত্য দিনের চেনা ছবি। হলদিয়া পুরসভার ভবানীপুর এলাকায় আরিফ ইকবালের তোলা ছবি।

বন্দর শহরের চাকচিক্য নিয়ে কোনও সংশয় নেই। অত্যাধুনিক শপিং মল-এ বিদেশি কেতাকে টেক্কা দেওয়া দোকান-পাট। বিকেল না হতেই সেখানে জড়ো হয় তরুণ প্রজন্ম। অথচ একটু একটু করে শহরের ভিতরে এগিয়ে গেলেই চোখে পড়বে নলকূপ ঘিরে জমতে থাকা ভিড়। হাতে বিভিন্ন রকমের পাত্র নিয়ে সারাদিনের জন্য জল সংগ্রহ করে রাখেন বাড়ির মেয়েরা। সকাল বেলা অফিস যাওয়ার আগে এখনও ওই নলকূপেই স্নান সারেন অনেকে।

Advertisement

কী বা করা যাবে, শহরে সিটি সেন্টার থাকলেও বাড়িতে যে জল নেই। ১৯৯৭ সালে তৈরি হয়েছে হলদিয়া পুরসভা। কিন্তু আজও শেষ করা যায়নি বাড়ি বাড়ি নলবাহিত জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ। সে ক্ষেত্রে বাসিন্দাদের ভরসা নলকূপ। পুরসভার তরফে অবশ্য নলকূপ বসিয়ে দেওয়া হয়েছে পাড়ায় পাড়ায়। এক একটি নলকূপের উপর ভরসা করেন প্রায় ৩০টি পরিবার।

কিন্তু সমস্যা হল গরম বাড়লেই কমতে থাকে জলস্তর। ফলে তীব্র জলকষ্টে বাসিন্দাদের নাভিশ্বাস ওঠে। পানীয় জলের সমস্যা দূর করতে পুরসভার তরফে জলের ট্যাঙ্ক পাঠানো হয়। তেমন অবস্থাপন্ন পরিবারগুলি কেউ নিজের নিজের মতো করে নলকূপ বসিয়ে নিয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষের কাছেই এখনও জল একটা বিরাট সমস্যা।

Advertisement

২৬টি ওয়ার্ড নিয়ে তৈরি হলদিয়া পুরসভার সাতটি ওয়ার্ডেই নলবাহিত জল পরিষেবা নেই। তাছাড়া, আরও বেশ কিছু ওয়ার্ডের কোনও কোনও এলাকায় নেই নলবাহিত জল পৌঁছে দেওয়ার পরিষেবা। সে সব জায়গায় ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে জলস্তর নেমে যাওয়ার সমস্যা। দু’একটি জায়গায় পানীয় জলের সঙ্কটও দেখা দিচ্ছে। গরম পড়তেই বিকল হচ্ছে নলকূপগুলিও।

হলদিয়া পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে হলদিয়ার ৬, ১২, ১৪, ১৫, ১৬, ১৮, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে নলবাহিত জলের কোনও রকম ব্যবস্থা নেই। তাছাড়াও ২, ৫, ৮, ৯, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের আংশিক এলাকায় নলবাহিত জলের ব্যবস্থা নেই। ভরসা কেবল নলকূপ। হলদিয়ার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের চকদ্বীপা পূর্বপল্লীর বাসিন্দা শুভেন্দু সরকার জানান, ‘‘রাস্তার ধারের নলকূপ থেকে জল সংগ্রহ করতে হয়। পাড়ার ওই একটিই মাত্র নলকূপ। প্রায় ৩০টি পরিবার পানীয় জল সংগ্রহ করেন ওখান থেকে।’’ একই কথা জানিয়েছেন ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব রামনগরের বাসিন্দা মহসিন আলি। তাঁদের সকলেরই দাবি নলবাহিত জলের ব্যবস্থা হোক শহরে।

১৫ নম্বর ওয়ার্ডের হঠাৎ কলোনি এলাকার নলকূপ বিকল হয়ে যাওয়ায় বাসিন্দারা পানীয় জলের দাবিতে হলদিয়া পুরসভার চেয়ারম্যানের কাছে ডেপুটেশন দিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ ওই এলাকায় একমাত্র ভরসা নলকূপ। সেটিও মাঝে মধ্যে বিকল হয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা ইয়াসিন আলি মল্লিক জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের এলাকায় নলবাহিত পানীয় জলের ব্যবস্থা না থাকায় সমস্যা হয়। নলবাহিত জল দেওয়ার জন্য পাম্প বসানো, পাইপলাইন পাতার কাজ শুরু করেছে পুরসভা। কিন্তু কবে সমাধান হবে জানি না।’’

হলদিয়ার পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ মণ্ডল অবশ্য শুনিয়েছেন তাঁদের পরিকল্পনার কথা। সেই অনুযায়ী পুর এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা দূর করতে ৪৩ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি করে পুর দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বারের বাজেটে জল সমস্যা দূর করতে ৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

পুরসভার জল দফতরের পুরপারিষদ চন্দন মাজি জানান, চলতি মাসেই পুরসভার ১২, ১৪, ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে নলবাহিত জল দেওয়া হবে। তাছাড়াও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের যে সব অংশে পানীয় জলের যে সমস্যা আছে সেখানেও কাজ চলছে। ওই চারটি ওয়ার্ডে গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। পাইপ বসানোর কাজ চলছে।

তাঁর দাবি অনুযায়ী গোটা শহরে পর্যাপ্ত নলকূপ রয়েছে। হলদিয়া শহরে পুরসভার পক্ষ থেকে বসানো নলুকপের সংখ্যা প্রায় ৭৫০। তাছাড়াও হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা সাংসদের এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকেও হলদিয়া পুরসভা এলাকায় নলকূপ বসানো হয়েছে। তাঁর দাবি, নতুন প্রকল্পের রিপোর্ট তৈরির কাজ চলছে। কাজ হয়ে গেলে হলদিয়ায় নলবাহিত জলের সমস্যা থাকবে না।

কিন্তু সে সব নলকূপের ঠিক ক’টা চালু আছে। প্রশ্ন করতেই চন্দনবাবুর সাফাই, ‘‘নলকূপ বিকল হলেই আমাদের কর্মীরা গিয়ে তা সারানোর কাজ করছেন। জলের সমস্যা মেটাতে আমরা তৈরি আছি।’’

তবে সমস্যা যে রয়েছে অন্যত্রও সে কথা জানালেন চন্দনবাবুই। তাঁর কথায় ‘‘বহু অবৈধ সংযোগ রয়েছে গোটা পুর এলাকা জুড়ে। সে সব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য পুরসভা অভিযান চালাতে তৎপর হচ্ছে। সেই সঙ্গে বাসিন্দারা যাতে জল নষ্ট না করেন তার আবেদন জানাচ্ছি।’’

১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ আব্দুল কাদের জানান, ‘‘আমাদের এলাকায় নলবাহিত জলের ব্যবস্থা নেই। তবে একটি গভীর নলকুপ বসানো হয়েছে। তাছাড়াও পাইপলাইন পাতার কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। আশা করি এ মাসে ওই গভীর নলকূপ থেকে এলাকায় নলবাহিত জল দেওয়া সম্ভব হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন