বিদ্যুতের কেবল ট্যাপ করে চার্জ দেওয়া হচ্ছে টোটোয়। —নিজস্ব চিত্র।
চুরি করা বিদ্যুতে ঘরের আলো জ্বলছে পাখা চলছে। পোলট্রি, ভেড়িতেও সেই চুরির বিদ্যুৎ। এমনকী কেব্ল লাইন (বিদ্যুতের তার) ট্যাপ করে টোটো চার্জ দিচ্ছেন চালকেরাও!
বিদ্যুৎ চুরির এমন রকমারি পদ্ধতিতে উদ্বিগ্ন কাঁথি বিদ্যুৎ সরবরাহ দফতর। এলাকায় ব্যাপক হারে বিদ্যুৎ চুরি হচ্ছে বলে গোপন সূত্রে খবর এসেছিল দফতরে। অভিযানে নেমে চক্ষু চড়ক গাছ বিদ্যুৎ আধিকারিকদের। বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু অগস্ট মাসেই কয়েকদিন অভিযান চালিয়ে বিদ্যুৎ চুরির ঘটনায় ২৮ জনের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। জরিমানা বাবদ অগস্ট মাসে প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা আদায় হওয়ার কথা।
বিদ্যুৎ চুরির বহর দেখে দফতর থেকে স্পেশাল টাস্ক ফোর্স গড়া হয়েছিল। কাঁথি কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের আওতাধীন কাঁথি ১, দেশপ্রাণ ব্লক এবং কাঁথি পুর এলাকায় অভিযান চালায় টাস্ক ফোর্স। দফতরের দাবি, অভিযানে দেখা গিয়েছে পশ্চিম বামুনিয়া, কুলতলিয়া, বগুড়ান জলপাই, ধানগাঁও, খাগড়াবনি, কাঁথি পুরসভার শেরপুরের মতো এলাকায় বিদ্যুৎ চুরির ঘটনা বেশি। কাঁথি বিদ্যুৎ সরবরাহ দফতরের স্টেশন ম্যানেজার মৌমিত মাঝি মানছেন, ‘‘বিভিন্ন এলাকায় ‘কেবল ট্যাপিং’–এর চিত্র দেখে আমরা হতবাক। অভিযানের রিপোর্ট বলছে, টোটো মালিক, পোলট্রি এবং ফিশারি মালিকদের মধ্যে বিদ্যুৎ চুরির প্রবণতা বেশি। এটা রুখতে আমরাও সতর্ক হচ্ছি।’’
কী ভাবে হচ্ছে এই কেব্ল ট্যাপিং?
বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রাহকের বাড়ির কাছে বিদ্যুতে খুঁটি থেকে মিটার পর্যন্ত যে কেব্ল বিস্তৃত থাকে, সেখানেই ট্যাপিং করে বিদ্যুৎ চুরি হচ্ছে। এতে, সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিলও বাড়ছে না। বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, টোটোর ব্যাটারি চার্জ, পোলট্রিতে মুরগির ছানার জন্য দিনরাত আলো জ্বালা হচ্ছে এই ‘কেবিল ট্যাপিং’ করে। কাঁথির বিস্তীর্ণ এলাকায় ভেড়িগুলিতেও বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ হচ্ছে এই ট্যাপিং থেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাঁথি ২ ব্লকের এক চিংড়ি ভেড়ির মালিক বিদ্যুৎ চুরির কথা মানছেন। তবে তাঁর দাবি, “আমরা নিয়ম মেনে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে চাই। কিন্তু বিভিন্ন কাগজপত্র নেই বলে আমাদের বারবার ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তাই বাধ্য হয়ে অনেকে বিদ্যুৎ ট্যাপিং করেন।’’
সংযোগ না দেওয়ার অভিযোগ অবশ্য মানতে নারাজ বিদ্যুৎ দফতর। জেলার এক বিদ্যুৎ আধিকারিক বলেন, ‘‘এখন বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার নিয়ম অনেক সহজ হয়েছে। সময়ও বেশি লাগে না। আসলে বৈধ ভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার না করাটা অনেকের অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। তারাই এমন অজুহাত দিচ্ছে।’’ বিদ্যুৎ চুরির এই প্রবণতা বন্ধে টাস্ক ফোর্সের অভিযান চলবে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ দফতর।