বেলপাহাড়ির ইন্দিরাচক এলাকা।
সকাল থেকেই জনবহুল রাস্তায় যানবাহনের ভিড়। এ দিকে ফুটপাত দখল করে বসেছে নিত্যদিনের আনাজ আর মাছের বাজার। ও দিকে অপরিসর রাস্তার ধারেই দাঁড়িয়ে সার সার বাস, ট্রেকার, ভাড়ার গাড়ি।
বেহাল এই ছবিটা জঙ্গলমহলের একদা মাওবাদী ধাত্রীভূমি বেলপাহাড়ি ব্লক সদরের। জঙ্গলমহলে মাওবাদী মোকাবিলার জন্য উন্নয়নকেই অন্যতম অস্ত্র হিসেবে বেছে নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। অথচ বেলপাহাড়ির খাস তালুকে নাগরিক পরিবেষা নিয়ে বাসিন্দাদের মধ্যে বিস্তর ক্ষোভ ও অভিযোগ রয়েছে। রয়েছে নানা দাবিদাওয়াও। রাস্তা নয়, পানীয় জল, নিকাশি— সর্বত্রই চাওয়া পাওয়ার হিসেবের বিস্তর ফারাক।
বেলপাহাড়ি থেকে বাঁকুড়া-পুরুলিয়াগামী পিচ রাস্তাটিই ব্লক সদরের ‘লাইফ লাইন’। ব্লক অফিস, থানা, স্কুল থেকে দোকানপাট সবই এই রাস্তার উপর। ফলে সকাল থেকে রাত সব সময়ই লোক সমাগম। আবার এই রাস্তার ফুটপাত দখল করেই সকাল-বিকেল মাছ ও সব্জির বাজার বসে। সেখানেও ক্রেতার ভিড়। যার ফলে, সকালের ব্যস্ত সময়ে ইন্দিরা মোড়ের কাছে চরম যানজটে নাকাল হন সকলেই।
বুধবার আবার সাপ্তাহিক হাট বসে। সে দিন কার্যত রাস্তাতেই দোকান-বাজার বসে। বাড়ে দুর্ভোগ। ছোট-বড় দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটে। তার উপর কোনও রকম গাড়ির স্ট্যান্ড নেই। এলাকার পরিবহণের প্রধান ভরসা হল বাস ও ট্রেকার। কিন্তু বেলপাহাড়িতে কোনও বাস, ট্রেকারের স্ট্যান্ড নেই। যত্রতত্র দাঁড়িয়ে আছে সে সব যান বাহন।
বেলপাহাড়ি এসবিআই-এর পাশে অবরুদ্ধ নিকাশি নালা।
নেই কোনও যাত্রী প্রতীক্ষালয়ও। থানা ও বাজার এলাকায় দু’টি শৌচাগার আছে। কিন্তু তা চালু হয়নি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, যত্রতত্র বাস, ট্রেকারগুলি দাঁড়িয়ে থাকায় যানজট হয়। সমস্যায় পড়েন পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
মসজিদ পাড়ার বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক শান্তনু শীট বলেন, “এই সমস্যা মেটাতে হলে বিকল্প জায়গায় সব্জি ও মাছ-মাংসের বাজার করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে দরকার স্থায়ী ট্রেকার ও বাস স্ট্যান্ড। না হলে আগামী দিনে সমস্যাটা আরও বাড়বে।”
বেলপাহাড়ির খাসতালুকে রয়েছে ৮টি পাড়া। মুড়ানশোল, দুলকি, ভুঁইয়াপাড়া, গণ্ডাপাল, ডাইনমারি, বাসা পাড়া, মসজিদ পাড়া ও বেলপাহাড়িতে সব মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার পরিবারের বসবাস। জনসংখ্যা প্রায় দশ হাজার।
বাজার সংলগ্ন পিচ রাস্তায় কোনও নিকাশির ব্যবস্থা নেই। সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় থই থই জল জমে যায়। আবার বাসা পাড়া যাওয়ার রাস্তায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের পাশে পূর্ব-পশ্চিম দিক বরাবর বড় নিকাশি নালাটি জঞ্জালে অবরুদ্ধ। বর্ষায় অবস্থা আরও সঙ্গীন হয়ে ওঠে।
বেলপাহাড়ির পাড়াগুলির সামান্য কিছু রাস্তা কংক্রিটের হলেও অধিকাংশ রাস্তা এখনও মোরামের। জঞ্জাল পরিষ্কারের কোনও ব্যবস্থা না থাকায় বেলপাহাড়ির সৌন্দর্যহানি ঘটছে বলেও অভিযোগ। বাজার এলাকা ও লোকালয়ে জঞ্জাল ফেলার নির্দিষ্ট কোনও জায়গা নেই। গ্রীষ্মে পানীয় জলের সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠে। এলাকার পাড়ার ভিতরের রাস্তাগুলিতে পথবাতির ব্যবস্থাও নেই। পথবাতি না থাকায় সন্ধ্যের পরে হাসপাতাল মোড় এলাকায় অসামাজিক কাজকর্ম হয়
বলে অভিযোগ।
গণ্ডাপালের প্রবীণ বাসিন্দা দেবব্রত ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “রাস্তায় পথবাতি নেই। রাতের বেলা প্রাণ হাতে করে রাস্তাঘাটে হাঁটাচলা করতে হয়।’’ বাসা পাড়ার বাসিন্দা পেশায় স্বাস্থ্যকর্মী স্মৃতিকণা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রাস্তার ধারে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কল থেকে অনিয়মিত একবেলা পানীয় জল পাওয়া যায়। তা আবার
পর্যাপ্তও নয়।’’
বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী কংগ্রেস সদস্য সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, বেলপাহাড়ি ব্লক-সদরের জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রয়োজন। কিন্তু নাগরিক সমস্যা মেটানোর কোনও উদ্যোগই দেখাচ্ছে না শাসক দল। যার ফলে, এই মফস্সল শহরের নাগরিকদের জীবন দিনে দিনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে।”
বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বংশীবদন মাহাতো বলেন, “বাসিন্দাদের দাবিগুলির ব্যাপারে আমরা ওয়াকিবহাল। বাস স্ট্যান্ড তৈরির জন্য জায়গা দেখা চলছে। থানা ও বাজার এলাকায় সদ্য তৈরি হওয়া দু’টি শৌচাগার শীঘ্রই চালু করা হবে। নিকাশি-সহ বিভিন্ন পরিষেবার উন্নতির জন্য আমরা সাধ্যমতো
চেষ্টা করছি।”
ছবি: দেবরাজ ঘোষ।