মশায় নাজেহাল, পুরসভার দাবি, অভিযান চলছে

হলদিয়া পেট্রোকেম আবাসনের বাসিন্দাদের অভিযোগ, মশার উৎপাতে টেকা দায় হচ্ছে। খোলা নর্দমা এবং নর্দমার জমা জলেই বিপত্তি বলে তাঁদের দাবি। অভিযোগ একেবারে অস্বীকারও করেননি হলদিয়া পুর কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৪০
Share:

মশা মারার তেল ছড়ানো হচ্ছে। তমলুকে। নিজস্ব চিত্র

ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি, স্বস্তি ছিল মাস দু’য়েক। কারণ ঠান্ডা। কিন্তু বাতাসে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করতেই মশার উৎপাতও বাড়তে শুরু করেছে। গরমে মশা বাড়ে। কিন্তু এখনও তেমন গরম না পড়লেও শিল্পশহর হলদিয়া থেকে জেলা সদর তমলুক, পাঁশকুড়া, এগরা, কাঁথি—সব পুর এলাকাতেই মশার উপদ্রব বেড়েছে বলে ইতিমধ্যেই অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে।

Advertisement

হলদিয়া পেট্রোকেম আবাসনের বাসিন্দাদের অভিযোগ, মশার উৎপাতে টেকা দায় হচ্ছে। খোলা নর্দমা এবং নর্দমার জমা জলেই বিপত্তি বলে তাঁদের দাবি। অভিযোগ একেবারে অস্বীকারও করেননি হলদিয়া পুর কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় সূত্রের খবর, হলদিয়া পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ড, টাউনশিপ এলাকায় মশার দাপট বেড়েছে। হলদিয়া পেট্রোকেম আবাসনের বাসিন্দা পূজা জানা বলেন, ‘‘সন্ধ্যা হলেই মশার উৎপাতে নাকাল হচ্ছি।’’ ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা স্বরাজ রায়ের অভিযোগ, ‘‘আগে নিয়মিত নর্দমা পরিষ্কার করা হত। মশা মারা হত। কিন্তু এখন তা বন্ধ।’’

Advertisement

দুর্গাচক, হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল প্রসূতি বিভাগে মশার উৎপাতে রীতিমত কাহিল মা এবং সদ্যোজাত। এক প্রসূতি বলেন, ‘‘সন্ধ্যা হলেই মশার উৎপাত বাড়ছে। মশারির মধ্যে সব সময় থাকতে হচ্ছে। বাচ্চার শরীর মশার কামড়ের দাগে ভর্তি।’’

স্থানীয় বাসিন্দা সৌমিত্র ঘোষ বলেন, ‘‘মশার উৎপাত বাড়লেও পুরসভার কোনও হেলদোল চোখে পড়েনি।’’ বাসিন্দাদের অভিযোগ, নর্দমাগুলি মজে গিয়ে আবর্জনা জমছে। বদ্ধ জলে মশা ডিম পাড়ছে। কিন্তু মশা মারার তেল ছড়াতে পুরসভার কাউকে দেখা যাচ্ছে না।’’

শুধু হলদিয়াই নয়, তমলুক, পাঁশকুড়া, এগরা, কাঁথি—সব পুর এলাকাতেই মশার উপদ্রবের পাশাপাশি পুরসভার ডেঙ্গি দমন অভিযান নিয়েও অভিযোগ উঠেছে। ওই সব পুরসভার বাসিন্দাদের অভিযোগ, বর্ষার সময় ছাড়া মশা দমনে পুরসভাকে তেমন তৎপর হতে দেখা যায় না। তা ছাড়া বহু ক্ষেত্রেই মশা মারার তেল ছড়ানোর বদলে কামানের ধোঁয়া ও ব্লিচিং ছড়ানো হচ্ছে। অথচ, তেল ছাড়া ব্লিচিং ও কামানে যে মশা মরে না, তা বিশেষজ্ঞরাই জানিয়েছেন। ডেঙ্গি রুখতে মশা দমনে লাগাতার অভিযান যে জরুরি সে কথা জানিয়েছেন পতঙ্গবিদরাও।

‘স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন’-এর প্রাক্তন অধিকর্তা পরজীবী রোগ বিশেষজ্ঞ অমিয় হাটি বলেন, ‘‘ডেঙ্গির মতো সংক্রমক রোগের মোকাবিলায় মশা দমনে ধারাবাহিক অভিযান করতে হবে। বর্ষার সময় তো সতর্কতা জারি রয়েছে। তবে যে সময় রোগের প্রকোপ থাকে না, তখনও একইরকম সক্রিয়তা বজায় রাখতে হবে। তবেই এ ধরনের রোগের দাপট কমানো সম্ভব।’’

হলদিয়া পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সুধাংশু মণ্ডল বলেন, ‘‘মশা মারতে এলাকায় কামান দিয়ে ধোঁয়া দেওয়া হয়। এতে সাময়িক মশা দমন হচ্ছে। তবে আমরা দেখেছি, বেশ কিছু এলাকায় জল জমে থাকায় মশা হচ্ছে। হলদিয়া শহরে নিকাশি নালা সংস্কার এবং নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে। যে সব নর্দমায় জল জমছে, সেগুলি দ্রুত ঠিক করা হবে।’’

তমলুকের পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ সেন বলেন, ‘‘মশার উপদ্রব রুখতে পুরসভার তরফে মশা মারার তেল স্প্রে করা শুরু হয়েছে। তবে কর্মীর সমস্যা থাকায় বিভিন্ন ওয়ার্ডে ধাপে ধাপে এই কাজ হচ্ছে।’’ পাঁশকুড়ার পুরপ্রধান নন্দ কুমার মিশ্রর কথায়, ‘‘পুর এলাকায় প্রত্যেক ওয়ার্ডে ব্লিচিং ও মশা মারার তেল ছড়ানো হচ্ছে। তাই এই বিষয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি।’’

এগরার পুরপ্রধান শঙ্কর বেরা বলেন, ‘‘ডেঙ্গি দমনে সারা বছর ধরে পুরসভা কাজ করে। স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষদের সচেতন করেন। ব্লিচিং, মশা মারার তেলও ছড়ানো হচ্ছে।’’ তবে পুরসভাগুলি এমন দাবি করলেও, অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, লাগাতার অভিযান চললে মশার উপদ্রব বাড়ছে কেন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন