হাতি ঠেকাতে রাত জেগে অপেক্ষা

আতঙ্কে কাটে রাতের পর রাত। এই বুঝি দূরের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে পড়ল হাতির দল। হাতে লাঠি, শব্দ বাজি আর পোড়া মোবিল। বিনিদ্র রজনী যাপন করে ঘরদোর না হয় বাঁচানো গেল। কিন্তু ফসল, সে সবের তো দফারফা!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শালবনি শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৫৪
Share:

মুড়াকাটার জঙ্গলে হাতির ছবি তুলেছেন সৌমেশ্বর মণ্ডল।

আতঙ্কে কাটে রাতের পর রাত। এই বুঝি দূরের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে পড়ল হাতির দল। হাতে লাঠি, শব্দ বাজি আর পোড়া মোবিল। বিনিদ্র রজনী যাপন করে ঘরদোর না হয় বাঁচানো গেল। কিন্তু ফসল, সে সবের তো দফারফা!

Advertisement

মেদিনীপুর সদর ব্লকের ফুলপাহাড়ি, আমড়াতলা, শালবনি ব্লকের সোনাকড়া, শাওড়া-সহ একাধিক এলাকায় প্রায় ৮০টি হাতির দল ঘুরে বেড়াচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, দিনে জঙ্গলে থাকলেও সন্ধে হলেই হাতির দল বেরিয়ে পড়ছে খাবারের সন্ধানে। আমড়াতলার চাষি অগস্ত্য পণ্ডিতের কথায়, “কত কষ্টের চাষ বলুন তো। এই সময় ধান পাকতে চলেছে। যে ধান ক’দিন পর ঘরে তোলার কথা, তা এখন খেয়ে মাড়িয়ে, নষ্ট করছে হাতি। দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া কিছু করতে পারছি না।” সোনাকড়ার রঞ্জিত চালক বলেন, “দু’ভাই মিলে ২ বিঘা জমি চাষ করেছিলাম। এক বিঘা জমির ধানই নষ্ট করেছে হাতি। বিঘা প্রতি ২০ হাজার টাকা খরচ করে ফলানো সোনার ধান যদি এ ভাবে চলে যায়, খাব কী?”

বেশ কয়েকদিন ধরেই হাতির দল এই সব এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। দলে থাকা প্রায় ১৩০টি হাতি কখনও চাঁদড়া, কখনও আড়াবাড়ি, মিরগা বা পিরাকাটার জঙ্গল ও জঙ্গল লাগোয়া এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। অভিযান চালিয়ে বন দফতর হাতির দলটিকে ঝাড়খণ্ডে পাঠানোর চেষ্টা করেনি তা নয়। কিন্তু স্থানীয় মানুষের বাধায় সাফল্য মেলেনি বলে অভিযোগ। পরে বন দফতর সিদ্ধান্ত নেয়, মাঠে ধান থাকাকালীন অভিযান বন্ধ রাখা হবে। ফলে ক্ষতির বহরও বাড়ছে।

Advertisement

মেদিনীপুর বন বিভাগের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহাও স্বীকার করেছেন, “বুঝতে পারছি, প্রচুর শস্যহানি ঘটছে। কিন্তু আমাদেরও তো কিছু করার নেই। অভিযান চালাতে গেলেই বাধা আসছে। তাই মাঠ থেকে ধান উঠলেই কেন্দ্রীয় ভাবে অভিযান চালিয়ে হাতির দলকে ঝাড়খণ্ডে পাঠানো হবে।” প্রশ্ন উঠছে, অভিযান শুরু না হওয়া পর্যন্ত কী এ ভাবেই ক্ষতি স্বীকার করতে হবে মানুষকে। বন দফতর জানিয়েছে, চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বন দফতরের কোনও সাহায্য মেলেনি। টানা চার রাত এলাকার মানুষ ঘুমোতে পারেননি। হুলা জ্বালিয়ে, পটকা ফাটিয়ে হাতি তাড়াতে হচ্ছে রাত জেগে। বন দফতর তাতেও সাহায্য করেনি। তোতোন প্রধান, রাজু পণ্ডিত, আশিস প্রধানদের কথায়, “দু’একটি হাতি গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করছে। গ্রামে ঢুকলে যে একটি বাড়িও আস্ত রাখবে না। তাই সকলে মিলে রাত জেগে গ্রাম পাহারা দিই।” রঞ্জিত পণ্ডিত বলেন, “পাহারা দিয়ে গ্রাম বাঁচাতে পারলেও ধান বাঁচাতে পারিনি। আমার ২ বিঘা জমির ধান এক্কেবারে শেষ করে দিয়েছে। ধান তো পাবই না, বিচুলিও মিলবে না!”

হাতির তাণ্ডব থেকে বাঁচতে অনেকে দ্রুত ধান কেটে বাড়িতে তোলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু যাঁদের ধান এখনও পাকেনি? ভয় বেশি আবার তাঁদেরই। কারণ, মুখে রোঁয়া লাগায় হাতি পাকা ধান খায় কম। যে টুকু নষ্ট করে তা মাড়িয়ে। কাঁচা ধানের শিস হাতির বেশি পছন্দ। কারণ, তার ভেতরে দুধের মতো সাদা অংশ হাতির খুব প্রিয়। ফলে কবে হাতির দল এলাকা থেকে যাবে সেই আশাতেই দিন গুনছেন এলাকাবাসী। তাঁদের দাবি, “মাঠে ধান থাকলেও অভিযান চালানো হোক। দ্রুত দেওয়া হোক ক্ষতিপূরণও।” বন দফতর জানিয়েছে, ক্ষয়ক্ষতির হিসাব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দ্রুত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন