বাহিরির জগন্নাথ মন্দির। ছবি:শান্তনু বেরা
কাঁথির বাহিরিতে জগন্নাথ মন্দিরকে ঘিরে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রাচীন নিদর্শনগুলো নিয়ে ‘সার্কিট ট্যুরিজম’ গড়ার পরিকল্পনা করেছে পর্যটন ও জেলা প্রশাসন। ঐতিহাসিক এই মন্দিরের পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের পর বৃহস্পতিবার নব কলেবরে মন্দিরের উদঘাটন করলেন রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী।
প্রাচীন এই মন্দিরকে ঘিরে নানা জনশ্রুতি রয়েছে যা মন্দিরকে ঘিরে জনমানসে আরও উৎসাহ বাড়িয়েছে। মন্দিরগাত্রের লিপি থেকেই মন্দিরের বয়স চারশো বছরেরও বেশি বলে জানা গিয়েছে। সময়ের প্রভাবে মন্দির ও মন্দির লাগোয়া দেউলের পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে দীর্ঘদিন ধরেই সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। সেই দাবি মেনে রাজ্যের ‘প্রত্নতত্ত্ব ও সংগ্রহালয় অধিকার দফতর’-এর সুপারিশে মন্দির সংস্কার শুরু হয়। গত মে মাসে ওই সংস্কারের কাজ শেষ হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, এর জন্য জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে মন্দির সংস্কারের কাজ শেষ হয়েছে চলতি বছরের মে মাসে। খরচ হয়েছে ৭৪ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকা। এর পরেই এই মন্দিরকে ঘিরে পর্যটনের পরিকল্পনা করেছে প্রশাসন।
শুধু মন্দির নয়, মন্দির সংলগ্ন তিনটি পুকুর ভিমসাগর, লোহিতসাগর ও হিমসাগর-সহ একটি বিনোদন পার্ক গড়ে পুরো এলাকা পর্যটনকেন্দ্র করার পরিকল্পনা করেছে কাঁথি-৩ পঞ্চায়েত সমিতি। ঐতিহাসিক এই মন্দিরের দু’টি অংশ রয়েছে। সামনের অংশটি ‘জগমোহন’ আর তার পরের অংশটি প্রধান মন্দির নামে পরিচিত। জগমোহনের উচ্চতা ৪০ ফুট ও চওড়া ২০ ফুট এবং প্রধান মন্দির ৫০ ফুট লম্বা ও ২৪ ফুট চওড়া। মন্দিরকে ঘিরে নানা লোকগাথা প্রচলিত রয়েছে। গত ৫৫ বছর ধরে মন্দির পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ‘জগন্নাথ সেবাইত সমিতি’। সমিতির সম্পাদক সুদীপ্ত নন্দ বলেন, ‘‘বংশ পরম্পরায় আমরা এই মন্দিরের পুজোর দায়িত্ব পালন করে আসছি।’’ রথযাত্রায় মন্দিরে প্রচুর ভক্ত সমাগম হয়। মন্দির থেকে এক কিলোমিটার দূরে পাইকবাড়ে জগন্নাথদেবের মাসির বাড়ি। সেখানে গুন্ডিচা মন্দিরে সাতদিন থাকার পর উল্টো রথের দিন জগন্নাথ বলরাম ও সুভদ্রা বাহিরীর মূল মন্দিরে ফিরে আসেন।
এ দিন শুভেন্দুবাবু বলেন, ‘‘এই মন্দিরের টানে ছাত্রাবস্থায় বহুবার এখানে এসেছি। নতুন রূপে এই মন্দিরের ঐতিহ্যরক্ষায় শুধু প্রশাসন নয়, এখানকার মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে।’’ এদিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ শিশির অধিকারী, জেলাশাসক রশ্মি কমল, জেলা সভাধিপতি মধুরিমা মণ্ডল, বিধায়ক বনশ্রী মাইতি প্রমুখ।