নিষ্ক্রিয় পুলিশের সামনেই ভোট লুঠ

পুলিশের সামনে ঘুরে বেড়িয়েছে একদল যুবক। সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধি দেখেই ছিটকে গিয়েছে যে যার মতো। পুলিশ নিরুত্তর। এ দিন সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস এ দিন আলাদাভাবে হলদিয়ার মহকুমাশাসকের দফতরে বিক্ষোভ দেখিয়েছে।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

হলদিয়া শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৭ ০২:১৭
Share:

বুথের বারান্দায় পুলিশের সামনেই বসে বহিরাগতরা, পাঁশকুড়ার ভবানীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস

সময় সকাল ৯টা। হলদিয়ার দুর্গাচকের নিউ কলোনি ছায়ানট অডিটোরিয়ামের বুথে ভোটার লাইনে মহিলা-পুরুষ মিলিয়ে প্রায় ১০০ জনের ভিড়। ইতিউতি বিরক্তি, ‘‘লাইন কিছুতেই এগোচ্ছে না।’’ লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধও। পুলিশের দেখা নেই।

Advertisement

পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ড এটি। বুথের ভিতর একজন মাত্র পোলিং এজেন্ট। যে দিক দিয়ে ভোটাররা ঢুকছেন, তার উল্টো দিকের দরজায় দাঁড়িয়ে সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী। কিন্তু নিয়ম মতো বুথের একটি দরজাই খোলা থাকার কথা। প্রশ্ন করতে পুলিশের দিকে এগিয়ে যেতেই দেখা গেল সেই দরজায় একদল যুবকের জটলা। প্রশ্ন করতে হয়নি। চিত্রসাংবাদিকে হাতের ক্যামেরা দেখেই যে যার মতো সরে পড়েছেন। ওরা কারা? প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীরা। ভোটার লাইনে দাঁড়ানো এক যুবক অভিযোগ করলেন, ‘‘সকাল সাড়ে ৭ টায় এসে প্রায় দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি। উল্টোদিকের দরজা দিয়ে বাইরে থেকে লোকজন ঢুকে ভোট দিচ্ছে। পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করছে।’’ বয়স্ক মহিলারাও প্রায় ৫০ জনের পিছনে দাঁড়িয়ে আছেন। এমন তো হওয়ার কথা নয়। এ বারও প্রশ্ন এড়িয়েছে পুলিশ।

একই ছবি হলদিয়া সেন্ট জেভিয়ার্স আইওসি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের পাশাপাশি দু’টি বুথেও। সেখানেও পুলিশের সামনে ঘুরে বেড়িয়েছে একদল যুবক। সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধি দেখেই ছিটকে গিয়েছে যে যার মতো।
পুলিশ নিরুত্তর।

Advertisement

সকাল ১০টা নাগাদ ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে দেভোগ পূর্ব প্রাথমিক বিদ্যালয়েও ছিল ভোটারদের লম্বা লাইন। কারণটা সেই একই। বুথের ভিতরে জটলা। পুলিশ ও ভোটকর্মীদের সামনে দল বেঁধে ভোট দিচ্ছে বহিরাগতরা। দুর্গাচকের নিউ কলোনিতে বুথ ফেরত সাইকেল আরোহী এক মাঝবয়সী ব্যক্তির ক্ষোভ, ‘‘ভোটারদের বাইরে আটকে রেখে, দরজা বন্ধ করে ছাপ্পা চলছে।’’

এ দিন সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস এ দিন আলাদাভাবে হলদিয়ার মহকুমাশাসকের দফতরে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। ভোট বাতিলের দাবিও তুলেছে বিরোধীরা। ২৯ ওয়ার্ডের হলদিয়া পুরসভার ১৫১ টি বুথে নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন করা হয়েছিল প্রায় এক হাজার পুলিশ। কিন্তু সর্বত্রই নীরব পুলিশের নির্বিঘ্ন টহলদারি, অভিযোগ বিরোধীদের।

যদিও জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘কিছু ক্ষেত্রে আমরা অভিযোগ পেয়েছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ঠিক নয়। শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে।’’ আর দিনের শেষে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমলের বক্তব্য, ‘‘ভোট পড়েছে প্রায় ৮৬ শতংশ। টুকটাক অভিযোগ এসেছে। তবে কোনওটাই গুরুতর নয়। নির্বিঘ্নেই মিটেছে পুরভোট।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন