আইআইটি-র ছাত্র মৃত্যুতে অবসাদে আত্মহত্যার তত্ত্ব

শনিবার খড়্গপুর আইআইটির লাল বাহাদুর শাস্ত্রী হল (হস্টেলে)-র তিনতলার বারান্দা থেকে নিচে পড়ে মৃত্যু হয় মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিটেক ডুয়াল ডিগ্রি কোর্সের অন্তিমবর্ষের ছাত্র নিখিল ভাটিয়া (২২)-র। তাঁর বাড়ি মুম্বইয়ে। নিখিল আইআইটির বিদ্যাসাগর হলে থাকলেও শনিবার সকালে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী হলে গিয়েছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৭ ০৬:০০
Share:

প্রতীকী ছবি।

সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের মন্তব্য থেকে মনোবিদের কাছে চিকিৎসা করাতে যাওয়া— সব মিলিয়ে আইআইটি-র ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় মানসিক অবসাদ থেকে আত্মহত্যার তত্ত্বই জোরাল হচ্ছে।

Advertisement

শনিবার খড়্গপুর আইআইটির লাল বাহাদুর শাস্ত্রী হল (হস্টেলে)-র তিনতলার বারান্দা থেকে নিচে পড়ে মৃত্যু হয় মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিটেক ডুয়াল ডিগ্রি কোর্সের অন্তিমবর্ষের ছাত্র নিখিল ভাটিয়া (২২)-র। তাঁর বাড়ি মুম্বইয়ে। নিখিল আইআইটির বিদ্যাসাগর হলে থাকলেও শনিবার সকালে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী হলে গিয়েছিলেন। তারপরই হস্টেল ভবনের নিচে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় তাঁকে। পরে কলকাতার হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান, লাল বাহাদুর শাস্ত্রী হলের তিনতলার বারান্দা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন ওই ছাত্র। ওই বারান্দায় তাঁর ব্যাগ মিলেছে। তবে কী কারণে নিখিল অবসাদে ভুগছিলেন তা নিয়ে ধন্দে পুলিশ। অন্য পড়ুয়া ও অধ্যাপকদের থেকেও এর কোনও স্পষ্ট ব্যাখ্যা মেলেনি। বরাবর ভাল ছাত্র হিসাবে পরিচিত নিখিলের পড়া নিয়ে কোনও চাপ ছিল বলে মানতে পারছেন না আইআইটি কর্তৃপক্ষ। তাই মনে করা হচ্ছে, তিনি অন্য কোনও কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। কিন্তু কী সেই কারণ, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

রবিবার নিখিলের দেহ ক্যাম্পাসে আনা হয়নি। এ দিন ভোরে কলকাতার হাসপাতালে ছেলের দেহ সোজা মুম্বইয়ে ফেরার প্রস্তুতি শুরু করেছেন নিখিলের পরিজনেরা। আইআইটি সূত্রে জানা গিয়েছে, পড়াশোনোয় ভাল হলেও নিখিল গত কয়েকমাস ধরে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। এমনকী মাস কয়েক আগেও একবার নিখিল আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। সেই সময় সহপাঠীদের অনেকেই দেখে ফেলায় নিখিলকে ক্যাম্পাসের কাউন্সেলিং সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। নিখিলের সহপাঠী, বিদ্যাসাগর হলেরই এক পড়ুয়ার কথায়, “আগেও নিখিল আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলে বলে শুনেছি। আমরাই ওঁকে কাউন্সেলিং সেন্টারে নিয়ে গিয়েছিলাম।
তারপর যে ফের ও একই কাণ্ড ঘটাবে, বুঝতে পারিনি।”

Advertisement

জানা গিয়েছে, মাস দেড়েক আগে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে নিখিলের কিছু মন্তব্য করেছিলেন, যাতে অবসাদের বিষয়টি স্পষ্ট। বিষয়টি শিক্ষকদের নজরে এলে অবশ্য নিখিল তখন জানিয়েছিলেন, বন্ধুদের কথামতো তিনি ওই মন্তব্য করেছেন। এরপর প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ওই ছাত্রের বাবা-মাকে ডেকে পাঠানো হলে মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য ছুটি নিয়ে মুম্বইয়ের বাড়িতে চলে যান নিখিল। তবে পরীক্ষা থাকায় দীপাবলির আগে ফিরে এসেছিলেন। গত বুধবার পরীক্ষাও দিয়েছিলে। নিখিলের ফ্যাকাল্টি অ্যাডভাইজার মাইনিং বিভাগের অধ্যাপক দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, “নিখিলের সিজিপিএ র‍্যাঙ্ক প্রায় আট ছিল। তাই পড়াশোনা নিয়ে চাপ ছিল বলে মনে হয় না। তবে ফেসবুকে কোনও রাজনৈতিক মন্তব্য করেছিল। এতে অবসাদে ভুগতে থাকায় মানসিক চিকিৎসার জন্য ছুটি দেওয়া হয়েছিল। আগেও যেহেতু আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল তাই অবসাদে এমন কাজ করলেও করতে পারে বলে মনে হচ্ছে।” আর আইআইটির রেজিস্ট্রার প্রদীপ পাইনের বক্তব্য, “আমাদের ১২ হাজার পড়ুয়া। চাপ তো সকলেরই রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঠিক কী হয়েছে, বুঝতে পারছি না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন