শহরে বাড়ছে বিষাক্ত পার্থেনিয়াম

বিষ ফুলে বাড়ছে হাঁপানির টান! বছর কয়েক আগেও রাস্তা বা রেললাইনের ধারে কদাচিৎ পার্থেনিয়াম গাছের দেখা মিলত। এখন মেদিনীপুর শহর জুড়ে গিজগিজ করছে এই গাছ। খেলার মাঠের পাশে, স্কুলের পাশে এই গাছের সংখ্যা বাড়লেও হেলদোল নেই পুরসভার।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৬ ০২:৪৪
Share:

রাস্তার ধারে গজিয়ে উঠেছে পার্থেনিয়াম গাছ।

বিষ ফুলে বাড়ছে হাঁপানির টান!

Advertisement

বছর কয়েক আগেও রাস্তা বা রেললাইনের ধারে কদাচিৎ পার্থেনিয়াম গাছের দেখা মিলত। এখন মেদিনীপুর শহর জুড়ে গিজগিজ করছে এই গাছ। খেলার মাঠের পাশে, স্কুলের পাশে এই গাছের সংখ্যা বাড়লেও হেলদোল নেই পুরসভার।

যদিও উদাসীনতার অভিযোগ মানতে নারাজ পুরসভা। মেদিনীপুরের পুর- পারিষদ (জঞ্জাল) শিপ্রা মণ্ডলের দাবি, “বাসিন্দারা যেখানেই পার্থেনিয়াম নিয়ে অভিযোগ করেছেন, সেখানেই সাফাইয়ের কাজ করা হয়েছে। এলাকা পার্থেনিয়াম মুক্ত করতে অভিযান চলেই।” শিপ্রাদেবীর আরও বক্তব্য, “পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড পার্থেনিয়াম মুক্ত করতে আগে অভিযান চালানো হয়েছে। ফের অভিযান হবে।”

Advertisement

পার্থেনিয়াম গাছ কেন ক্ষতিকারক?

পার্থেনিয়ামের রেণু অতি সূক্ষ্ম। হালকাও। ফলে এটি সহজেই বায়ুমণ্ডলে ভেসে থাকতে পারে। হাঁপানি, ব্রঙ্ককাইটিসের মতো রোগ ছড়ায়। এই গাছের উপক্ষার থেকে ছড়ায় ক্যানসারও। পার্থেনিয়াম গাছের নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়ামের সংযোজন ক্ষমতা বেশি। তাই এই গাছ দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।

পার্থেনিয়াম গাছ যে ক্ষতিকারক তা মানছেন জেলার উপ- মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান। তাঁর কথায়, “পার্থেনিয়াম গাছের ফুলের পাপড়ি বা কুঁড়ি উড়ে প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে ঢুকলে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি বা বিভিন্ন রোগ সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এই গাছের সংস্পর্শে এলে অনেকের মধ্যে মারাত্মক অ্যালার্জির উপসর্গও দেখা দেয়।”

মেদিনীপুর শহরের ব্যস্ততম এলাকা কলেজ-কলেজিয়েট স্কুল মাঠের আশপাশে প্রচুর পার্থেনিয়াম গাছ রয়েছে। কোথাও কোথাও দেখলে মনে হবে জঙ্গল গজিয়েছে! রোজ প্রচুর ছেলেমেয়ে আশপাশের রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে। ইতিমধ্যে কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্ররা স্কুল মাঠের পাশের এলাকা পার্থেনিয়াম মুক্ত করতে অভিযান চালিয়েছে। তবে সব গাছ উপড়ে ফেলা যায়নি। কলেজিয়েট স্কুলের সহ- শিক্ষক দীপঙ্কর ষন্নিগ্রাহীর মতে, “ছাত্রদের সঙ্গে নিয়ে পার্থেনিয়াম উচ্ছেদ অভিযান হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে পুর- প্রশাসনকেই উদ্যোগী হতে হবে। শহরের চারিদিকে যে ভাবে এই গাছ গিজগিজ করছে তাতে কারও একার পক্ষে এই অভিযান চালানো সম্ভব নয়।”

কলেজ মাঠের পাশে প্রতিবন্ধীদের একটি স্কুল রয়েছে। ওই স্কুলের কর্মকর্তা অলোক ঘোষ বলেন, “মেদিনীপুরে পার্থেনিয়ামের এই বাড়বাড়ন্তের কথা পুর- প্রশাসনের অজানা নয়। তাও কেন এই উদাসীনতা বুঝতে পারছি না! এখনঅ তৎপর না হলে পরে সমস্যা আরও বাড়বে।” একই মত শহরের অলিগঞ্জ গালর্স হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি সুব্রত সরকার, কলেজিয়েট গালর্স হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি মধুসূদন গাঁতাইতেরও। মধুসূদনবাবু, সুব্রতবাবুদের কথায়, “পার্থেনিয়াম মানব শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক। বিশেষ করে ছোট ছেলেমেয়েদের। এই গাছের সংস্পর্শে বেশিদিন থাকলে শ্বাসকষ্টজনিত রোগ হয়। পুর- প্রশাসনের উচিত শহরে অভিযান চালিয়ে এই গাছ নির্মূল করা।”

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক সূত্রে খবর, পার্থেনিয়াম গাছ কেটে ফেললে সমস্যার সমাধান হয় না। এই গাছ উপড়ে ফেলতে হয়। জেলার এক স্বাস্থ্য- কর্তার কথায়, “শিকড় থেকে না- উপড়ালে ফের গাছ হবে। ফলে, সমস্যা যেখানে ছিল, সেখানেই থেকে যাবে।” তিনি বলেন, “প্রতিরোধক ছাড়া পার্থেনিয়াম তুলতে গেলেও হিতে বিপরীত হতে পারে। এই বিষাক্ত গাছ উচ্ছেদে তাই সতর্কতাও দরকার।” পুরসভার এক সূত্রে খবর, এক সময় শহরে পার্থেনিয়ামের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল। যত্রতত্র এই গাছ গজিয়ে উঠছিল। পরিস্থিতি দেখে তখন শহরকে পার্থেনিয়াম মুক্ত করতে অভিযান হয়। পরে সেই অভিযানে দাঁড়ি পড়ে। যার ফলে ফের মেদিনীপুরে পার্থেনিয়ামের বাড়বাড়ন্ত বলে দাবি শহরের একাংশ বাসিন্দার।

মেদিনীপুরকে পার্থে নিয়াম মপক্ত করতে পুরসভার কবে ঘুম ভাঙে, সেটাই দেখার!

ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন