‘দিদিকে বলো’, রাজনৈতিক পরিচয়ে আপত্তি

কলকাতার মল্লিকঘাট ফুল বাজারের নানা সমস্যা দিদিকে জানিয়ে সমাধান চাওয়া। কিন্তু ফোন করলে নাম-ধামের পাশাপাশি তিনি কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য কি না জানতে চাওয়া হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৯ ০০:৫৮
Share:

দিদিকে ফোনে কোনও সমস্যা জানাতে গেলে নাম-ধামের পাশাপাশি তিনি কোনও দল করেন তা জানতে চাওয়া হচ্ছে।

কোনও সমস্যায় পড়লে তার সমাধানের জন্য রাজ্যবাসীর জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি চালু করেছেন। কিন্তু অভিযোগ উঠল, দিদিকে ফোনে কোনও সমস্যা জানাতে গেলে নাম-ধামের পাশাপাশি সেই ব্যক্তির রাজনৈতিক পরিচয় বা তিনি কোনও দল করেন তা জানতে চাওয়া হচ্ছে। আর এখানেই আপত্তি জানিয়েছেন অনেকে। আপত্তির কারণ, একে অনেকেই স্থানীয় ভাবে শাসক দলের হাতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন। বুধবার, ‘দিদিকে বলো’-তে ফোন করেছিলেন সারা বাংলা ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র নায়ক। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, কলকাতার মল্লিকঘাট ফুল বাজারের নানা সমস্যা দিদিকে জানিয়ে সমাধান চাওয়া। কিন্তু ফোন করলে নাম-ধামের পাশাপাশি তিনি কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য কি না জানতে চাওয়া হয়। এতে আপত্তি জানান নারায়ণবাবু।

তিনি বলেন, ‘‘ফোনের ওপারে একটি পুরুষ কণ্ঠ নাম,ঠিকানা জানার পাশাপাশি জানতে চান আমি কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য কি না। আমি ওই ব্যক্তিকে জানাই রাজ্যের সমস্ত মানুষই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের সমর্থক। তাই এটা বলে দেওয়া মানে তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় সামনে আসা।’’ এরপরই তিনি ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি থেকে রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাওয়ার বিষয়টি প্রত্যাহার করার দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন। সেই চিঠি ‘দিদিকে বলো’র ওয়েবসাইটে আপলোড করে অভিযোগ হিসেবে জমা করেন। নারায়ণবাবুর বক্তব্য, ‘‘এই কর্মসূচি নিঃসন্দেহে ভাল। কিন্তু এর মাধ্যমে একজন সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক পরিচয় জেনে নেওয়া হচ্ছে। এটা অনৈতিক। এতে অভিযোগকারী শাসক দলের আক্রমণের মুখে পড়তে পারেন। তাই সারা বাংলা ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে আমরা এই কর্মসূচি থেকে রাজনৈতিক পরিচয় জানার বিষয়টি যাতে প্রত্যাহার করা হয় সেই অনুরোধ করেছি।’’

শুধু নারায়ণবাবুই নন, এদিন ‘দিদিকে বলো’য় ফোন করেছিলেন বিজেপির ঘাটাল লোকসভার বিস্তারক প্রতীক পাখিরা। তাঁর কাছেও জানতে চাওয়া হয় রাজনৈতিক পরিচয়। প্রতীকবাবুর কথায়, ‘‘ফোনের ওপারে থাকা মহিলাকে বিষয়টি নিয়ে আমি প্রতিবাদ জানাই। কিন্তু মহিলা বলেন, এটা দিদির তৈরি। তাঁদের কিছু করার নেই।’’ কোলাঘাটের এক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, ‘‘সমস্যার কথা জানাতে গিয়ে যদি নিজের রাজনৈতিক পরিচয় দিতে হয় তা হলে তো নতুন সমস্যা হতে পারে। ফলে সমস্যা থাকলেও ভয়ে ফোন করিনি।’’

বিষয়টি নিয়ে সমালোচনায় সরব বিরোধীরাও । সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কমিটির সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলেন, ‘‘এটা শাসক দলের একটা নতুন পরিকল্পনা। এর মাধ্যমে নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করতে চাইছে তারা। কিন্তু এ ভাবে কারও রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাওয়াটাও ঠিক নয়।’’ পাঁশকুড়ার সিপিআই নেতা চিত্তরঞ্জন দাসঠাকুর বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো শাসক- বিরোধী সকলের মুখ্যমন্ত্রী। তাই সমস্যা সমাধানের জন্য কারও রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাওয়ার মানে কী?’’
বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি নবারুণ নায়েক বলেন, ‘‘রাজ্য জুড়ে বিজেপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান সংগ্রহ কর্মসূচি চলছে। পাড়ায় পাড়ায় এর জন্য শিবির করা হচ্ছে। এতে প্রচুর সাড়া পড়েছে। আসলে শাসক দল এর মাধ্যমে জানতে চাইছে আমরা কতটা শক্তি অর্জন করলাম। তবে মুখ্যমন্ত্রী জেনে রাখুন, ২০২১ সালে মানুষই আপনাকে ক্ষমতা থেকে চলে যেতে বলবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন