জঙ্গল-জীবনের সংঘাত সামলে সম্মানিত ‘হাতি-বন্ধু’রা

ঘড়ির কাঁটা ধরে কাজের সুযোগ নেই। হাতি সামলাতে ঝড়জলে দিনরাত ঘনজঙ্গলে পড়ে থাকতে হয়। প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই হাতির দলের গতিবিধির উপর নজর রাখতে হয়। রবিবার, বিশ্ব হাতি দিবসে এমনই কয়েকজন বনকর্মীকে সংবর্ধিত করা হল মেদিনীপুরে। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৮ ০৭:২০
Share:

কুর্নিশ: লড়াকু বনকর্মীদের। নিজস্ব চিত্র

ঘড়ির কাঁটা ধরে কাজের সুযোগ নেই। হাতি সামলাতে ঝড়জলে দিনরাত ঘনজঙ্গলে পড়ে থাকতে হয়। প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই হাতির দলের গতিবিধির উপর নজর রাখতে হয়। রবিবার, বিশ্ব হাতি দিবসে এমনই কয়েকজন বনকর্মীকে সংবর্ধিত করা হল মেদিনীপুরে।

Advertisement

এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং বন দফতরের যৌথ উদ্যোগে ছিল এই সংবর্ধনা। অনুষ্ঠানে এসেছিলেন রাজ্যের মুখ্য বনপাল (পশ্চিমাঞ্চল) শক্তিশঙ্কর দে, মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা প্রমুখ। মেদিনীপুর ডিএফও কার্যালয়ের এক সভাঘরেই এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হয়। সংবর্ধনা পেয়ে আপ্লুত বনকর্মীরাও। সরোজ মান্ডি, অজিত মাঝি, জয়ন্ত মাহাতোর মতো বনকর্মীরা। তাঁদের কথায়, “এই স্বীকৃতি আগামী দিনে কাজের ক্ষেত্রে উৎসাহ দেবে।’’

বন দফতর সূত্রে খবর, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামের মোট ৭টি ডিভিশনের ৩৫ জন বনকর্মীকে এ দিন সংবর্ধিত করা হয়েছে। মেদিনীপুরে তো বটেই, এমনকী দক্ষিণবঙ্গেও এমন সংবর্ধনা আগে হয়নি। রাজ্যের মুখ্য বনপাল (পশ্চিমাঞ্চল) শক্তিশঙ্কর দে বলছিলেন, “মানুষকে রক্ষা করা, হাতিকে রক্ষা করা, এই দু’টোকে মিলিয়ে যাঁরা ভাল কাজ করেছেন, তাঁদেরকেই স্বীকৃতি দেওয়া হল। তৃতীয়পক্ষের তরফ থেকে সংবর্ধনা জানানোটা দক্ষিণবঙ্গে প্রথম। এর আগে সুন্দরবনে ওরা করেছে।’’ অনুষ্ঠানের আয়োজক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অন্যতম কর্তা জয়দীপ কুণ্ডুর কথায়, “যাঁরা হাতি- মানুষে সঙ্ঘাত এড়ানোর গুরুত্ব দায়িত্ব সীমিত ক্ষমতায় পালন করেন তাঁরাই হাতির আসল বন্ধু। সেই বন্ধুদেরই আমরা সংবর্ধিত করেছি।’’ সংস্থার এক কর্তার কথায়, “অনেকেই ভাল কাজ করেন। সেই ভালর মধ্যে যাঁরা আরও ভাল কাজ করেছেন, তেমন ৩৫ জনকে সংবর্ধিত করা হয়েছে।’’

Advertisement

অনুষ্ঠানে বনকর্মীদের বার্তা দেওয়া হয়, হাতির বন্ধু হয়ে থাকুন। বস্তুত, জেলার জঙ্গলগুলো কোনও সংরক্ষিত এলাকা নয়। হাতি গ্রামের মধ্যে দিয়ে হাঁটাচলা করে, ধানজমিতে ঘুরে বেড়ায়। এখন দলমা থেকে আসা হাতির দলের দক্ষিণবঙ্গে থাকার সময়টাও বেড়ে গিয়েছে। ফলে, এখানে মানুষ আর হাতির সঙ্ঘাত অনেক বেশি।

হাতির সমস্যা যে বাড়ছে তা মানছেন বনকর্তারাও। রাজ্যের মুখ্য বনপাল (পশ্চিমাঞ্চল) শক্তিশঙ্কর দে বলছিলেন, “ঝাড়গ্রাম থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরে হাতি ঢোকাটা আমরা তিন মাস পিছিয়ে দিতে পেরেছি। তবে হাতিও যথেষ্ট চালাক। তাই ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে আসছে। গ্রামকে বাঁচানোর জন্য আমাদেরও কৌশল বদলাচ্ছে হচ্ছে।’’ তিনি আরও জানান, হাতির সংখ্যা কমাতে হবে। কারণ, এত হাতি থাকার মতো পরিবেশ এখানে নেই। পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলে খুব বেশি হলে ২৫-৩০টি হাতি থাকতে পারে। সেখানে ১২০-১২৫টি হাতি জেলায় থাকছে। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে— হাতি তাড়ানোর ক্ষেত্রে মশাল বা পটকা ব্যবহার করা যাবে না। বিশেষত আগুন যাতে কোনওভাবে হাতির গায়ে না লাগে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। শক্তিশঙ্করবাবুর দাবি, ‘‘আমাদের রাজ্যে এমনটা হয় না। আমরা সতর্কও রয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন