Paddy

জঙ্গলমহলের লক্ষ্মীদের চালে তিরুপতির দেবসেবা

বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে ভিন রাজ্যে, এমনকি বিদেশেও চলে যাচ্ছে দেশি চাল।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২১ ০৬:৩০
Share:

মল্লিফুলো। নিজস্ব চিত্র।

জঙ্গলমহলের মহিলা চাষিদের উৎপাদিত সুগন্ধী দেশি ধানের ‘মল্লিফুলো’ চাল গেল অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুপতি মন্দিরে। ঝাড়গ্রাম জেলা কৃষি দফতরের সহযোগিতায় নয়াগ্রাম ব্লকের মহিলা চাষিদের সংস্থা ‘আমন মহিলা চাষি প্রোডিউসার কোম্পানি’র কাছ থেকে দেবসেবার জন্য সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে চাষ করা ওই ধানের চাল কিনেছেন মন্দির কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

তিরুপতি মন্দিরে ভোগের জন্য গোবর সার ব্যবহার করে সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে চাষ করা সুগন্ধি আতপচাল ব্যবহারের প্রথা বহুদিনের। শ্রীভেঙ্কটেশ্বর মন্দিরে চাল সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছেন বিভিন্ন দাতা। দাতাদের একাংশ চাষিদের থেকে চাল কিনে মন্দির পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ‘তিরুমালা তিরুপতি দেবস্থানম’ (টিটিডি) ট্রাস্টে জমা দেন। তার আগে খতিয়ে দেখা হয় সত্যিই গোবর সার ব্যবহার করে সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে ধান চাষ হয়েছে কি না।

জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) অনুপম পাল বলেন, ‘‘টিটিডি ট্রাস্টের এক প্রতিনিধির সঙ্গে পরিচয়ের সুবাদে তাঁকে নয়াগ্রামের মহিলাদের উৎপাদিত দেশি চালের কথা জানিয়েছিলাম। মন্দির কর্তৃপক্ষ আগ্রহী হয়ে ‘প্রদান’-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে ৩ টন চালের বরাত দেন।’’ টিটিডি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য কে শিবকুমারের কথায়, ‘‘আগে বালাজির নৈবেদ্য ও প্রসাদের জন্য গোবর সারে চাষ হওয়া দেশি চাল, ডাল ও অন্য খাদ্যসামগ্রী ব্যবহার করা হত। কিন্তু এমন খাদ্যসামগ্রী পেতে সমস্যা হওয়ায় মাঝে প্রথা বজায় রাখা সম্ভব হয়নি। ট্রাস্টি বোর্ড এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বালাজির নৈবেদ্য-ভোগে জৈব চাষের(কাউ বেসড এগ্রিকালচার) দেশি চাল, ডাল ও অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করা হবে। অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানায় এই ধরনের চাষ হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের ঝাড়গ্রাম জেলা থেকেও দেশি চাল নেওয়া শুরু হয়েছে।’’

Advertisement

‘প্রদানে’র নয়াগ্রাম ব্লকের কো-অর্ডিনেটর সৌরাংশু বন্দ্যোপাধ্যায় মানছেন, ‘‘জেলা কৃষি অধিকর্তার মাধ্যমে তিরুপতি মন্দিরে চাল সরবরাহ করার বরাত পেয়েছেন মহিলা চাষিরা। প্রথম পর্যায়ে ৩ টন মল্লিফুলো পাঠানো হয়েছে।’’ মহিলা চাষি পারুল মাহাতো, বাসন্তী হেমব্রম, স্বর্ণপ্রভা মাহাতোরাও খুশি। তাঁরা বলছেন, ‘‘আমাদের চাষের ধান তিরুপতি মন্দিরে দেবসেবায় লাগবে জেনে খুবই উৎসাহিত বোধ করছি।’’ টিটিডি ট্রাস্টি বোর্ডের তরফে জানানো হয়েছে, নয়াগ্রামের মহিলা চাষিদের উৎপাদিত চাল পছন্দ হলে বছরভর দেবসেবার জন্য ওই চাল কেনা হবে।

অনুপম একজন কৃষিবিজ্ঞানীও। মূলত তাঁরই পরামর্শে ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে সর্বভারতীয় সংস্থা ‘প্রদানে’র তত্ত্বাবধানে নয়াগ্রাম ব্লকে জৈব পদ্ধতিতে দেশি ধান চাষ শুরু হয়। পাতিনা, বড়খাঁকড়ি, মলম, চাঁদাবিলা, আড়রা ও চন্দ্ররেখা পঞ্চায়েতের ৪৯২৩ জন মহিলা চাষি এখন ১৮০০ হেক্টর জমিতে ‘মল্লিফুলো’, ‘কেরালাসুন্দরী, ‘কালীচম্পা’, ‘কালাভাত’, ‘আদানছিল্পা’-র মতো নানা দেশি ধানের চাষ করছেন। সংস্থাটির উদ্যোগে মহিলা চাষিদের নিয়ে গঠিত হয়েছে ‘আমন’নামে মহিলা উৎপাদক কোম্পানি। ওড়িশার সুগন্ধী ‘মল্লিফুলো’ লম্বা দানার ধান ১২৫ দিনের মধ্যে পাকছে। প্রতি হেক্টরে প্রায় ৪ টন ফলন দিচ্ছে। এখানকার চাল গত বছর ‘এনপিওপি’ (ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ফর অর্গানিক প্রোডাকশন) শংসাপত্রও পেয়েছে।

নয়াগ্রামে এখন বছর গড়ে নানা ধরনের ছ’হাজার টন দেশি ধান উৎপাদন হচ্ছে। বড়খাঁকড়ি অঞ্চলের মুড়াকাঠি গ্রামে ‘আমন’-এর স্বয়ংক্রিয় চালকলেই ধান ভাঙানো হয়। তবে সচেতনতার অভাবে এ রাজ্যে দেশি চালের কদর নেই। তবে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে ভিন রাজ্যে, এমনকি বিদেশেও চলে যাচ্ছে দেশি চাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন