হাতির হানায় আতঙ্কে শালবনি

শনিবার রাতে পিঁড়াকাটার বেলাশোলে হানা দেয় দু’টি রেসিডেন্ট হাতি। প্রাণহানি না হলেও ৪টি বাড়ি ভাঙচুর করে তারা। রেসিডেন্ট হাতি আচমকা জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৭ ০১:২৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

হাতির হানা থামছে না জঙ্গলমহলের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরে। এক দিকে বনমহোৎসব পালিত হচ্ছে, চারা রোপণ হচ্ছে, বন্যপ্রাণ রক্ষায় সচেতনতার বার্তা দেওয়া হচ্ছে। অন্য দিকে খাবার না পেয়ে জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে রেসিডেন্ট হাতি।

Advertisement

শনিবার রাতে পিঁড়াকাটার বেলাশোলে হানা দেয় দু’টি রেসিডেন্ট হাতি। প্রাণহানি না হলেও ৪টি বাড়ি ভাঙচুর করে তারা। রেসিডেন্ট হাতি আচমকা জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায়।

হাতির হানা হামেশাই ঘটছে জেলার বিভিন্ন এলাকায়। গত বছর ঝাড়গ্রামে এসে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন প্রশাসনিক বৈঠকে। বন দফতরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন, ‘‘হাতির হানায় এত জন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তা হলে দফতরটা রেখে লাভ কী!’’ বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মনও মেদিনীপুরে বৈঠক করেন। তবে হাতির হানায় রাশ টানা যায়নি।

Advertisement

লক্ষ্মণপুর, কলসিভাঙা-সহ শালবনির বিস্তীর্ণ এলাকায় গত ক’দিন ধরে তাণ্ডব চালিয়েছে হাতি। মেদিনীপুরের এক বনকর্তা মানছেন, “হাতিকে জঙ্গলে সীমাবদ্ধ রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তা করতে দরকার পর্যাপ্ত
খাবার। সমস্যা মেটাতে জঙ্গলে হাতির উপযোগী গাছ লাগানো জরুরি। পিঁড়াকাটা থেকে এই গাছ লাগানো শুরু হয়েছে।” পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে বলে আশ্বাস মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহার।

রেসিডেন্ট হাতির হানায় মৃত্যুও হচ্ছে। সম্প্রতি লক্ষ্মণপুরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সদস্য সনৎ মাহাতোর মা কুলুবালা মাহাতো নামে এক বৃদ্ধাকে শুঁড়ে তুলে আছড়ে মারে হাতি। সনৎবাবু বলেন, “হাতির হানায় গ্রামবাসী আতঙ্কিত। ঘর ভাঙছে, চাষের ক্ষতি হচ্ছে।” আবার গড়বেতার উখলায় গভীর রাতে শৌচকর্ম করতে গিয়ে হাতির খপ্পরে পড়ে জখম হন বছর পঞ্চান্নর হরনারায়ণ দে। শুক্রবার কলসিভাঙার সৌমেন মাহাতোর বাড়িতে হানা দেয় হাতি। দিন কয়েক আগে লক্ষ্মণপুরের মদন মাহাতো, বুদ্ধেশ্বর মাহাতোর বাড়ি ভেঙেছে হাতি।

মেদিনীপুর বন বিভাগ এলাকায় ১৭-১৮টি রেসিডেন্ট হাতি রয়েছে। বন দফতর সূত্রে খবর, হাতির হানায় জেলায় বছরে গড়ে ১১ জনের মৃত্যু হয়, জখম হন ১৫ জন। গড়ে ১ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়। ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়। বনকর্তারা মানছেন, খাবারের খোঁজে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে হাতি। জঙ্গলে থাকা আকাশমণি, ইউক্যালিপটাস হাতির থাকার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে পারে না। তাই হাতি জঙ্গল লাগোয়া গ্রামে ঢুকে জমির ধান, সব্জি খায়। মেদিনীপুরের এক বনকর্তা বলেন, “হাতির খাদ্যাভ্যাস বদলাচ্ছে। তাই জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে চলে আসছে। লোকালয় থেকে ধীরে ধীরে হাতি তাড়ানোই এখন আমাদের লক্ষ্য।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন