মাদক থেকে শিশুশ্রম রোধে বার্তা থিমে

পুজোর উদ্যোক্তাদের মতে,  পুজো দেখতে অনেকে আসেন। ফলে, সামাজিক বার্তা অনেক মানুষের কাছে পৌঁছনোর সুযোগ থাকে। সমাজকে সচেতন করার এ এক ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:০৩
Share:

করণীয়: পুজোর থিমে সচেতনতার বার্তা। নিজস্ব চিত্র

নিয়ম মেনে গাড়ি চালানোর বার্তা থেকে মাদক বিরোধী প্রচার, শিশুশ্রম রোধ থেকে সবুজ বাঁচানোর শপথ— সরস্বতী পুজোর থিমে উঠে এল এমনই নানা সামাজিক বার্তা। মেদিনীপুর শহরের কলেজ মোড়ের সরস্বতী পুজোর থিমে রাজনীতির আকচাআকচি নতুন নয়। এ বার কয়েকটি পুজোর থিমে উঠে এসেছে নানা সামাজিক বার্তাও। ওই সব পুজোর উদ্যোক্তাদের মতে, পুজো দেখতে অনেকে আসেন। ফলে, সামাজিক বার্তা অনেক মানুষের কাছে পৌঁছনোর সুযোগ থাকে। সমাজকে সচেতন করার এ এক ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র।

Advertisement

পুলিশ-প্রশাসনও চেয়েছিল, শুধু রাজনৈতিক ব্যঙ্গচিত্র নয়, শহরের এই পুজোয় সামাজিক বার্তা উঠে আসুক। সুস্থ পরিবেশে পুজো হোক। এ ব্যাপারে পুজো উদ্যোক্তাদের উত্সাহ দিতে পুরস্কারও ঘোষণা করেছে পুলিশ। অনেকের মতে, পুলিশের ওই ঘোষণা পুজো উদ্যোক্তাদের উত্সাহিত করেছে। ফলে, গতবারের থেকেও বেশি সংখ্যক পুজো কমিটি কোনও না কোনও সামাজিক বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন পুজোয়। সোমবার সকাল থেকেই কলেজ মোড় ছিল জমজমাট। বেলা যত বেড়েছে, ভিড়ও তত বেড়েছে। মণ্ডপে মণ্ডপে চোখে পড়েছে বিভিন্ন কার্টুন, ব্যাঙ্গাত্মক লেখা। এই লেখাগুলোই পুজোর অন্যতম আকর্ষণ। মেদিনীপুরের এই এলাকায় প্রায় কুড়িটি পুজো হয়। প্রায় প্রতিটি পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন। কোথাও পুজোর নেপথ্যে টিএমসিপি, সিপি। কোথাও বা এসএফআই কিংবা এবিভিপি।

‘রেড ক্যাসেল’-এর পুজোয় যেমন রয়েছে প্রকৃতির ছোঁয়া। সবুজ বাঁচানোর বার্তা। এখানে সুন্দর প্রকৃতির মধ্যেই দেবীর আরাধনা হয়েছে। প্রতিমায় রয়েছে অভিনবত্ব। মণ্ডপে রয়েছে বিভিন্ন বার্তা। যেমন, নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী বয়স্ক, শিশু বা অসুস্থ, অসহায় ব্যক্তিকে সাহায্য করুন, পরিবেশ সুন্দর রাখুন, অবলা জীবজন্তুদের ওপর অযথা আক্রমণ করবেন না, খেলার বয়সে শিশুদের খেলতে দিন, ট্রাফিক নিয়মাবলী মেনে গাড়ি চালান প্রভৃতি। পুজোর উদ্যোক্তা অভিজিৎ কর বলছিলেন, “পুজো সকলের ভাল লাগলে সেটাই প্রাপ্তি।”

Advertisement

‘জেনারেশন ওয়াই’-এর পুজোয় ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ থেকে শিশুশ্রম রোধ, মাদক রোধ প্রভৃতি বিষয়গুলো উঠে এসেছে। এখানে গ্রাম্য আদলে মণ্ডপসজ্জা হয়েছে। পুজোর উদ্যোক্তা বিপ্লব মাহাতো বলছিলেন, “এখনও সমাজের সবস্তরে সমান সচেতনতা গড়ে ওঠেনি। ফলে, অনভিপ্রেত কিছু ঘটনা ঘটছে। আমাদের সকলেরই উচিত, নিজেরা আরও সচেতন হওয়া। অন্যকেও বেশি করে সচেতন করা।”

‘ব্যতিক্রম’-এর পুজোয় লেখা হয়েছে, ‘রাজনীতি বড় বালাই। আসল কথা আজও হয় নরবলি।’ নারী নির্যাতনের বিপক্ষে সমাজকে আরও সচেতন হওয়ার বার্তাও দেওয়া হয়েছে একাধিক পুজোয়। সোশ্যাল মিডিয়ার কুফলের দিকগুলো উঠে এসেছে ‘নো কম্প্রোমাইজ’-এর পুজোয়। ‘সাবধানে চালান নিজের গাড়ি, অপেক্ষায় আছে আপনার বাড়ি’ এমন বার্তার পাশাপাশি অভিভাবকদের সতর্ক করে লেখা হয়েছে, ‘কিশোর-কিশোরীদের মোবাইল ব্যবহার থেকে দূরে রাখুন।’ লেখা হয়েছে, ‘কিশোর বয়সে যৌন জীবন থেকে দূরে থাকুন। অভিভাবকেরা লক্ষ্য রাখুন। ছেলেমেয়ের বন্ধু হয়ে উঠুন।’ এও বার্তা দেওয়া হয়েছে, ‘রিলেশনশিপ ভেঙে যাওয়া মানে জীবনকে নষ্ট
করা নয়।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন