মুখ্যমন্ত্রীর সফর, ছুটি দিয়ে স্কুলে পুলিশ ক্যাম্প

এক সময়ে জঙ্গলমহলের স্কুলগুলোয় যৌথ বাহিনীর ক্যাম্প করা নিয়ে প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন যিনি, সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা উপলক্ষে মেদিনীপুর শহর এবং শহরতলির বেশ কয়েকটি স্কুল দু’দিন ধরে বন্ধ থাকবে! স্কুলগুলোয় অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:৫০
Share:

এক সময়ে জঙ্গলমহলের স্কুলগুলোয় যৌথ বাহিনীর ক্যাম্প করা নিয়ে প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন যিনি, সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা উপলক্ষে মেদিনীপুর শহর এবং শহরতলির বেশ কয়েকটি স্কুল দু’দিন ধরে বন্ধ থাকবে! স্কুলগুলোয় অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প হয়েছে। সোমবার চারটি পিরিয়ড হওয়ার পরেই স্কুলগুলো ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। পরশু, বৃহস্পতিবার ফের স্কুল খোলার কথা। সবে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়েছে। শিক্ষাবর্ষ শুরুর মুখে এ ভাবে স্কুল ছুটি হওয়ায় ক্ষুব্ধ অভিভাবকদের একাংশ।

Advertisement

এ নিয়ে সরব বিরোধীরাও। সিপিএমের শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ- র নেতা অশোক ঘোষের মন্তব্য, “পুলিশ ক্যাম্প তো অন্যত্রও করা যেত। শহরে পুলিশ লাইন রয়েছে। তাহলে তো এ ভাবে স্কুল ছুটি দিতে হত না।” তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির নেতা মধুসূদন গাঁতাইত অবশ্য বলেন, “নিরাপত্তার জন্য পুলিশ কর্মীরা এসেছেন। তাই কয়েকটি স্কুলে পুলিশ ক্যাম্প হয়েছে।” অবশ্য সমিতির অন্য এক নেতা মানছেন, “সবে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হল। অন্যত্র অস্থায়ী ক্যাম্পের ব্যবস্থা করলে ভাল হত। পুলিশ লাইনেও এই ব্যবস্থা করা যেতে পারত।”

আজ, মঙ্গলবার মেদিনীপুর কলেজ মাঠে পুলিশের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত জঙ্গলমহল কাপের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান রয়েছে। থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর সফরে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে প্রচুর পুলিশ কর্মী এসেছেন মেদিনীপুরে। শুধু যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ৪২৭ জন পুলিশ কর্মীর থাকার কথা। ৬৩ জন পুলিশ অফিসার থাকার কথা। অনুষ্ঠান নির্বিঘ্ন করতেই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত এবং পাশের জেলা থেকেও পুলিশ কর্মীদের মেদিনীপুরে নিয়ে আসা হয়েছে। পুলিশ কর্মীদের থাকার জন্য শহর এবং শহরতলির কয়েকটি স্কুলে অস্থায়ী ক্যাম্প হয়েছে। কাল, বুধবার পর্যন্ত এই ক্যাম্প থাকবে।

Advertisement

পুলিশ ক্যাম্প হওয়ার জন্য শহরের যে সব স্কুল দু’দিন বন্ধ থাকছে তারমধ্যে রয়েছে কলেজিয়েট স্কুল (বালক), অলিগঞ্জ গার্লস। কলেজিয়েট স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি অগমপ্রসাদ রায় বলেন, “রবিবারই পুলিশ জানিয়েছিল, স্কুল নেবে। তাই এ দিন দুপুরে স্কুল ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়।” অলিগঞ্জ গার্লসের পরিচালন সমিতির সভাপতি সুব্রত সরকার বলেন, “পুলিশ চেয়েছিল। তাই স্কুল ছেড়ে দিতে হয়েছে।”

পুলিশের এক সূত্রের বক্তব্য, ওই স্কুলগুলোকে বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়নি। শুধু জানানো হয়েছিল, কয়েকটি ক্লাসরুম দরকার। স্কুল- কর্তৃপক্ষই ছুটি দিয়ে দিয়েছেন। এক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কথায়, “ছুটি দেওয়ার কথা আলাদা ভাবে বলার দরকার হয় না! ক্লাসরুম যদি পুলিশের জন্য ছাড়তে হয়, তাহলে পঠনপাঠন আর কোথায় হবে? তাই এই ক’দিন স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।”

বস্তুত, এক সময়ে জঙ্গলমহলের বেশ কয়েকটি স্কুলে যৌথ বাহিনীর ক্যাম্প করা হয়েছিল। তখন সবে মাওবাদী দমন অভিযান শুরু হয়েছে। ক্যাম্প হওয়ার ফলে স্কুলের পঠনপাঠন ব্যাহত হয়। সেই সময় তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্কুলে ক্যাম্প করা নিয়ে প্রতিবাদে সরব হন। স্কুলের দখল ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে ছাত্রছাত্রীদের যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তার পাশে এসে দাঁড়ান।

এ বার সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা উপলক্ষে স্কুল বন্ধ থাকায় স্বাভাবিক ভাবেই সরব হয়েছে বিরোধীরা। মেদিনীপুরের এক স্কুলের এক শিক্ষকের কথায়, “দু’দিন আগেই নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়েছে। অন্যত্র পুলিশ ক্যাম্প হলেই ভাল হত। স্কুলগুলো অন্তত খোলা থাকত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন