সাহায্য: পার্থর (ইনসেটে) বাবা-মাকে সংগৃহীত টাকা তুলে দিচ্ছে কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্ররা। নিজস্ব চিত্র
চোখে কালো চশমা। দৃষ্টিশক্তিও ক্ষীণ। দশম শ্রেণির ছাত্র পার্থ পরিজার চোখের চিকিৎসায় বহু টাকা প্রয়োজন। এমন সঙ্কটে পার্থর পাশে দাঁড়াল তার স্কুল, মেদিনীপুর কলেজিয়েট। মঙ্গলবার পার্থর বাবা মা’র হাতে নগদ ৬০ হাজার টাকা তুলে দিলেন শিক্ষক ও ছাত্ররা।
পার্থর বাড়ি মেদিনীপুর শহর লাগোয়া তলকুইতে। গত ২১ জানুয়ারি বাড়ির সামনে যখন সরস্বতী পুজোর মণ্ডপ তৈরি হচ্ছিল, সেই সময় বাঁশের কঞ্চির টুকরো লেগে ওই কিশোরের বাঁ চোখের মণি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রথমে মেদিনীপুর মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। কিন্তু চোখের আঘাত গুরুতর হওয়ায় পার্থকে কলকাতার একটি চক্ষু হাসপাতালে স্থানাতরিত করা হয়। সেই রাতেই চোখে অস্ত্রোপচার হয়। পরে চিকিৎসকেরা জানান, চোখে আঘাতের ফলে ছানি পড়েছে পার্থর। গত ৫ মার্চ ছানি অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু দৃষ্টি পুরো ফেরেনি। পার্থর মা গঙ্গাদেবী বলেন, ‘‘ছেলে বাঁ চোখে বড় লেখা পড়তে পারলেও ছোট লেখা পড়তে পারছে না। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, পার্থর চোখের কর্নিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চোখে লেন্স লাগাতে হবে।’’
কিন্তু পরিবারের যা আর্থিক সামর্থ্য, তাতে পার্থর চিকিৎসার খরচ জোগাড় কঠিন। পার্থর বাবা সমর পরিজা দোকানে কাজ করেন। মেয়ে মনীষা বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ-র ছাত্রী। ফলে, সংসার চালিয়ে ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হয়। তাই পার্থর চোখে লেন্স লাগানোর টাকা জোগাড়ে মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছিলেন সমরবাবু। পার্থর চিকিৎসার জন্য পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির প্রায় ১ হাজার ২০০ ছাত্র সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এগিয়ে এসেছেন শিক্ষক ও স্কুল পরিচালন সমিতির সদস্যরাও। বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র সানি দে বলছিল, ‘‘আমরা সবাই ওর পাশে আছি।’’ বিদ্যালয়ের ভূমিকায় সমরবাবুও কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘‘ছেলেরা সত্যিকারের শিক্ষা পেয়েছে। তাই বিপদে সহপাঠীর পাশে দাঁড়িয়েছে। ২৮ মার্চ পার্থর চোখে লেন্স বসানো হবে। ততদিন কালো চশমা চোখে বাড়িতে বন্দি হয়ে থাকা ছাড়া উপায় নেই। পার্থ বলছিল, ‘‘খুব মন খারাপ করছে। আমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে স্কুলে যেতে চাই।’’