স্কুলকে ২ লক্ষ প্রয়াত শিক্ষকের স্ত্রীর

স্বামীর পথে চলেই পেনশনের টাকা জমিয়ে রেখে ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে স্কুলকে ২ লক্ষ টাকা দান করলেন ল্যাবরেটরি তৈরির জন্য। ৩০ হাজার টাকা দিলেন স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের পড়ুয়াদের মেধাবৃত্তি দেওয়ার জন্য।

Advertisement

গোপাল পাত্র

এগরা শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৬:০০
Share:

প্রধান শিক্ষকের হাতে টাকা তুলে দিচ্ছেন মানসীদেবী। নিজস্ব চিত্র

স্বামী ছিলেন ছাত্রদরদী। তাঁর ছাত্রপ্রীতির কথা এখনও এলাকার মানুষের মুখে মুখে। তিনি বেঁচে না থাকলেও স্বামীর সেই ভাবমূর্তি যাতে কোনও ভাবেই খাটো না হয় সে জন্য বরাবরই সজাগ ছিলেন স্ত্রী। সংসারের পারানি বলতে, কিছু সম্পত্তি আর স্বামীর পেনশন। স্বামীর পথে চলেই পেনশনের টাকা জমিয়ে রেখে ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে স্কুলকে ২ লক্ষ টাকা দান করলেন ল্যাবরেটরি তৈরির জন্য। ৩০ হাজার টাকা দিলেন স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের পড়ুয়াদের মেধাবৃত্তি দেওয়ার জন্য। যেখানে এক সময় শিক্ষক হিসাবে সুনাম অর্জন করেছিলেন স্বামী।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে খবর, এগরা মহকুমার ভগবানপুর-১ ব্লকের গুড়গ্রামের বাসিন্দা ৭২ বছরের মানসী প্রামাণিক। স্বামী মৃত্যঞ্জয় প্রামাণিক ছিলেন গুড়গ্রাম শিক্ষা নিকেতনেরই শিক্ষক। ২০০১ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। বছর তিনেক আগে মারা যান। কর্মজীবনেই নিজের প্রয়াত মা-বাবার স্মৃতিতে স্কুলে তৈরি করে দিয়েছিলেন কুন্তী-ভূষণ স্মৃতিভবন। অভাবী পড়ুয়াদের বিপদভঞ্জন ছিলেন মৃত্যঞ্জয়বাবু। এলাকায় তাঁর ছাত্রদরদের কথা ফেরে লোকমুখে। স্কুলের পড়ুয়া থেকে শিক্ষক সকলেরই বক্তব্য, পড়ুয়াদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশে তাদের ভেতরটা ছুঁতে পারতেন মৃত্যুঞ্জয়বাবু। প্রিয় শিক্ষকের ছাত্রপ্রীতির কথা স্মরণ করে দিন কয়েক আগে তাঁর বাড়িতে গিয়ে হাজির হন স্কুলেরই কয়েকজন শিক্ষক এবং পড়ুয়া। মৃত্যঞ্জয়বাবুর স্মৃতিতে স্কুলের জন্য মানসীদেবীর কাছে সাহায্যের আবেদন জানান তাঁরা। স্বামীর পথে চলে স্ত্রী সেই আবেদনে সাড়া দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেননি। ভাবেননি নিজের সীমিত সামর্থ্যের কথা। স্কুলকে দান করেন ২ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২ লক্ষ টাকায় স্কুলের ল্যাবরেটরি তৈরি হবে। আর ৩০ হাজার টাকায় বিজ্ঞান বিভাগের পড়ুয়াদের মেধাবৃত্তি দেওয়ার ব্যবস্থা হবে।

গত শুক্রবার এই উপলক্ষে স্কুলে এক অনুষ্ঠানে স্কুল কর্তৃপক্ষের হাতে ওই টাকা তুলে দেন মানসী দেবী। সেইসঙ্গে স্কুলের সকলকে মিস্টিমুখও করান তিনি। বৃদ্ধার কথায়, ‘‘স্বামী ছাত্রদরদী ছিলেন। ছাত্রঅন্ত প্রাণ ছিল তাঁর। ইচ্ছা ছিল স্কুলের জন্য আরও কিছু করে যাওয়ার। তাঁর সেই ইচ্ছাটাই পূরণ করেছি। ছাত্ররা তাদের প্রিয় স্যারকে মনে রাখবে এটাই চেয়েছি।’’

Advertisement

স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামলকুমার সাঁতরা বলেন, ‘‘মৃত্যুঞ্জয়বাবু কত বড় ছাত্রদরদী ছিলেন, যাঁরা তাঁর কাছ থেকে সাহায্য পেয়েছেন তাঁরাই জানেন৷ তাঁর স্ত্রীর এই দানও ছাত্রছাত্রীরা মনে রাখবে।’’

আর নিঃসন্তান মানসীদেবীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘ওরাই আমার ছেলেমেয়ে। ছেলেমেয়ের জন্য এটুকু করব না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন