কোথাও প্রচুর পড়ুয়া, অথচ প্রয়োজনীয় শিক্ষকশিক্ষিকার অভাব। কোথাও ছবিটা উল্টো। শিক্ষক-শিক্ষিকা সংখ্যা যথেষ্ট হলেও নেই বেশি পড়ুয়া। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা জুড়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির সামগ্রিক ছবিটা এমনই। এ বার তাই ছাত্রছাত্রীর অভাবে ধুঁকতে থাকা স্কুলগুলিকে চিহ্নিত করে পড়ুয়া সংখ্যা বাড়ানোর জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে বলছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ।
২০ জনের কম ছাত্রছাত্রী রয়েছে এমন প্রাথমিক স্কুলগুলিতে যদি চলতি বছরেই পড়ুয়া সংখ্যা না বাড়ে, তবে বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে সেগুলি, হুঁশিয়ারি সংসদের। সংসদ সভাপতি মানস দাসের কথায়, “এ বছরই শেষ সুযোগ দেওয়া হবে। না হলে ওই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের অন্য প্রাথমিক স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা করা হবে। তাই এ বিষয়ে স্কুলগুলি যাতে উপযুক্ত পদক্ষেপ করে, সে জন্য আমরা সতর্ক করেছি।” যদিও সংসদের এই পদক্ষেপে প্রশ্ন তুলছেন জেলার বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন।
সংসদ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় বর্তমানে প্রাথমিক স্কুলের সংখ্যা ৩২৬৪। আগামী ৫ জানুয়ারি পাঁশকুড়ার কেশিয়াড়ি ভুঁইয়াবাড় এলাকায় উদ্বোধন হবে আরও একটি প্রাথমিক স্কুলের। সংখ্যাটা তখন দাঁড়াবে ৩২৬৫। এ ছাড়াও সর্বশিক্ষা মিশনের অধীনে প্রাথমিকের পড়ুয়াদের জন্য জেলায় প্রায় ১৪০০টি শিশুশিক্ষা কেন্দ্র চালু রয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম কিন্ডারগার্টেন স্কুল এবং বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
জানা গিয়েছে, সংসদের অধীনে থাকা জেলার বেশির ভাগ স্কুলে যথেষ্ট ছাত্রছাত্রী থাকলেও বেশ কয়েকটিতে ক্রমশ কমছে পড়ুয়ার সংখ্যা। এগুলির মধ্যে কোনও কোনওটিতে পড়ুয়া সংখ্যা ২০ জনেরও কম। ফলে সেই সব স্কুলের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে মূল্যায়ন হচ্ছে। সভাপতি মানসবাবুর বলেন, “যাদের পড়ুয়া সংখ্যা ২০ জনের কম, তাদের গত বছরই সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে জেলার অন্তত ৬টি স্কুলে সেই অভাব পূরণ হয়নি। তাদের কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করা হয়েছে।”
কিন্তু কম পড়ুয়া সংখ্যা কারণ কী? তমলুক শহরের আবাসবাড়ি প্রমথ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়ার সংখ্যা ১৪। ১৯৫৪ সালে স্থাপিত এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রতুল চক্রবর্তী বলেন, “বছর দশেক আগেও বিদ্যালয়ে ৬০-৬৫ জন পড়ুয়া ছিল। কিন্তু ২০০ মিটারের মধ্যে একটি হাইস্কুলের সঙ্গে প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া ভর্তির বাড়ায় আমাদের পড়ুয়া সংখ্যা কমেছে।” একই চিত্র কাঁথির শহরের মনোহরচক প্রাথমিক বিদ্যালয়েও। ১৯৪৮ সালে স্থাপিত স্কুলটির পড়ুয়া সংখ্যা এখন মাত্র ৬। প্রধান শিক্ষক তথা তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের জেলা কমিটি সদস্য অনাদিনন্দন বর বলেন, “স্কুলের পাশেই একটি বেসরকারি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। সেখানে সাড়ে তিন বছর বয়সে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি নেওয়া হয়। অথচ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, আমরা পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ভর্তি করতে পারি না। ফলে বহু অভিভাবকই বেসরকারি বিদ্যালয়ে যাচ্ছেন। তবে পড়ুয়া সংখ্যা বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে।”
অন্য দিকে, এ প্রসঙ্গে ‘বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি’র জেলা সম্পাদক সতীশ সাহু বলেন, “পড়ুয়া কম হলে প্রাথমিক বিদ্যালয় তুলে দেওয়া মোটেই কাজের কথা নয়। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রতি হুঁশিয়ারিও সমর্থনযোগ্য নয়। কারণ সরকারি নিয়ম মেনে পড়ুয়াদের ভর্তির বয়স সংক্রান্ত ব্যাপারটি তো রয়েছেই। উপরন্তু বেসরকারি প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়াদের পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে অনেক বৈষম্যও রয়েছে। পড়ুয়া কমার সমস্যা খুঁজে তার প্রতিকার করতে হবে।”