পুজো যেন ধর্মের বেড়া ভেঙে ক্রমশ হয়ে উঠছে সামাজিকতার দরজা। থিমের চাকচিক্যে রঙবাহারি মণ্ডপকে ব্যবহার করে মানুষকে সচেতন করার কাজ চলছে সর্বত্র। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুজোয় কমিটিগুলো কোথাও রেখেছে ‘বেটি বাঁচাও’, কোথাও ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’, মিশন নির্মল বাংলা-সহ সরকারি নানা প্রচারও। পিছিয়ে নেই গোয়ালতোড়, চন্দ্রকোনা রোড-ও। ষষ্ঠীর সন্ধ্যা থেকেই ভিড় উপছে পড়ছে জঙ্গল ঘেরা গোয়ালতোড়, আমলাশুলি, হুমগড়-সহ বিভিন্ন এলাকার মণ্ডপে।
গোয়ালতোড়ের হুমগড় সবর্জনীন পুজো কমিটি এ বার স্রেফ কাঁচের চুড়ি দিয়েই পঞ্চাশ ফুট উচ্চতার মধ্যপ্রদেশের একটি মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করেছে। আলোয় ফুটে উঠেছে গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া নানা সংস্কৃতি। কিন্তু মণ্ডপের কাছাকাছি ফ্লেক্স-ফেস্টুনে লেখা হয়েছে সতর্কবাণী— ‘আপনার পরিবারকে সুরক্ষিত রাখুন। হেলমেট না পরে বাইক চালাবেন না।’ কমিটির পক্ষে রাজশেখর পণ্ডা ও অভিরাম ষন্নিগ্রাহীরা বলেন, “পুজোর সময় ভালই ভিড় হয় আমাদের মণ্ডপে। তাই এলাকার মানুষকে সচেতন করতেই আমাদের এই উদ্যোগ।”
মিলনী সঙ্ঘের থিম গ্রামীণ কুটির শিল্প। বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি ঝুড়ি, কুলো দিয়ে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ। পিছিয়ে নেই গোয়ালতোড় শহরের গোল্ডেন ক্লাব পুজো কমিটিও। স্থায়ী মণ্ডপে পাথরের প্রতিমা। রাজস্থান থেকে এই প্রতিমা আনা হয়েছে। আমলাশুলি দুর্গোৎসব কমিটি এ বার দক্ষিণ ভারতের একটি মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করেছে। সেই সঙ্গে আলোকসজ্জায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ‘জল ধরো জল ভরো’ প্রকল্পের নানা দৃশ্য।
চন্দ্রকোনা রোডের আদি দুর্লভগঞ্জ সাবর্জনীন পুজো কমিটি ঝিনুক দিয়ে তৈরি করেছে একটি পুরানো মন্দির। কিন্তু মণ্ডপের সামনে লেখা রয়েছে ‘সামলে চালান, প্রাণ বাঁচান’, ‘এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন এবং সুস্থ থাকুন’। চন্দ্রকোনা রোড স্টেশন পাড়ার পুজো কমিটি প্লাই, কাঠ এবং লোহার পাইপ দিয়ে তৈরি করেছে চল্লিশ ফুট লম্বা একটি পালকি। পালকির ভিতরে প্রতিমা। সেখানেও ফ্লেক্স-ফেস্টুনে সরকারি নানা প্রচার তুলে ধরেছেন উদ্যোক্তারা। কমিটির সম্পাদক আকাশদীপ সিংহ বলেন, “দশর্নার্থীদের আনন্দ দেওয়ার পাশাপাশি এবার আমরা মিশন নির্মল বাংলা সমন্ধে নানা ধরনের প্রচার এবং সচেতন মূলক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেছি। কন্যা ভ্রুণ হত্যা দণ্ডনীয় অপরাধ—এ কথাও তুলে ধরেছি।”