Partha Chatterjee

জুতোয় জোড়া পার্থ-সুশান্ত, ফারাক করলেন শ্যামাপদ

সুশান্ত ঘোষকে জুতো মারার পর শ্যামাপদকে নিয়ে মেদিনীপুর শহরে উল্লাস মিছিল করেছিল তৃণমূল।

Advertisement

রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য

গড়বেতা শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২২ ০৭:১৩
Share:

ফাইল চিত্র।

দু’টো ঘটনায় ব্যবধান ১০ বছরের। সে বার কঙ্কালকাণ্ডে অভিযুক্ত সিপিএমের প্রাক্তন মন্ত্রীর উদ্দেশে জুতো ছুড়েছিলেন এক ব্যক্তি। ঘটনাস্থল ছিল মেদিনীপুর আদালত। আর এ বার সদ্য প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাঁকে কলকাতার জোকার ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে, তাঁর দিকে চটি ছুড়লেন এক মহিলা। দ্বিতীয়জনের কীর্তি শুনে প্রথমজনের সাফাই, ‘‘জুতো ছুড়ে মারা উচিত হয়নি!’’

Advertisement

কিন্তু কেন? প্রথম ব্যক্তি তথা শ্যামাপদ কুণ্ডু বললেন, ‘‘প্রতিবাদের অনেক উপায় ছিল, উনি আইনের পথে যেতে পারতেন।’’ প্রশ্ন আসে, কে শ্যামাপদ কুণ্ডু? তারিখটা ছিল ৬ মার্চ, সালটা ২০১২। দুপুর তখন প্রায় ৩টে। মেদিনীপুর আদালতের এজলাস থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার জন্য যাচ্ছিলেন কঙ্কালকাণ্ডে অভিযুক্ত সিপিএমের প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষ। হঠাৎই নিরাপত্তারক্ষী ও আইনজীবীদের ভিড় ঠেলে এগিয়ে এসে সুশান্ত ঘোষের মুখ লক্ষ্য করে জুতো মারলেন এক ব্যক্তি। জুতো ছুঁয়েছিল সুশান্তের গাল ও মাথার একাংশে। পুলিশ গ্রেফতার করে তাঁকে। সুশান্তকে জুতো মারা সেই ব্যক্তিই শ্যামাপদ কুণ্ডু।

গড়বেতার আমলাগোড়ার বাসিন্দা শ্যামাপদ মঙ্গলবার রাতে টিভিতে দেখেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে এক মহিলার চটি ছুঁড়ে মারার খবর। বুধবার সকালে তিনি নিজের বাড়ির চৌকাঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘একজনকে প্রকাশ্যে জুতো ছুঁড়ে মারা মেনে নেওয়া যায় না। যতই হোক উনি (পার্থ) তো মন্ত্রী ছিলেন, এখন বিধায়কও। তা ছাড়া মামলাটা সবে শুরু হয়েছে।’’ প্রসঙ্গত, মেদিনীপুর আদালতে সুশান্ত ঘোষকে যখন জুতো মারা হয়, তখনও মামলাটি ছিল বিচারাধীন (এখনও চলছে সেই মামলা), তা ছাড়া তখনও সুশান্ত গড়বেতার নির্বাচিত বিধায়ক (২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে গড়বেতা থেকে সিপিএমের প্রার্থী হিসেবে জিতেছিলেন সুশান্ত ঘোষ), প্রাক্তন মন্ত্রীও।

Advertisement

কথাগুলি মনে করিয়ে দিতেই শ্যামাপদর চটজলদি জবাব, ‘‘আমার প্রতিবাদটা ছিল আলাদা। আমি সিপিএমের দ্বারা দৈহিক অত্যাচারিত হয়েছিলাম, আমার ঘরবাড়ি লুট হয়েছিল, দুই ছেলেকে স্কুলে পর্যন্ত ভর্তি করতে দেওয়া হয়নি। ব্যক্তিগত যন্ত্রণা থেকে এই কাজ করেছিলাম।’’ তা হলে শুভ্রা ঘড়ুই দোষটা কোথায় করলেন? শ্যামাপদর যুক্তি, ‘‘ওই মহিলা তো ব্যক্তিগত রাগ থেকে কিছু করেননি। অনেকের টাকা নেওয়ার খবর শুনে তিনি প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলেন জুতো ছুড়ে।’’

সুশান্ত ঘোষকে জুতো মারার পর শ্যামাপদকে নিয়ে মেদিনীপুর শহরে উল্লাস মিছিল করেছিল তৃণমূল। ১০ বছর পর কি অনুশোচনা হয় সে দিনের ঘটনা নিয়ে? শ্যামাপদর সপাট জবাব, ‘‘অনুশোচনা কেন হবে? আমি ব্যক্তিগত যন্ত্রণা থেকে সেই প্রতিবাদ করে শান্তি পেয়েছিলাম।’’ সুশান্তকে জুতো ছুঁড়ে মারার পর পুলিশ গ্রেফতার করেছিল শ্যামাপদ কুণ্ডুকে। পরে জামিন পেলেও, মামলা এখনও চলছে। তার সঙ্গে আরও ১০টি মামলা ঝুলছে শ্যামাপদর মাথার উপর। তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে দলের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও, এখন আর সক্রিয় ভাবে দলীয় কাজে তাঁকে তেমন দেখা যায় না। শ্যামাপদ বলেন, ‘‘মামলার খরচ চালাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছি। জায়গা বিক্রি করতে হয়েছে। দুই ছেলে টোটো চালায়। আমি ছোটখাটো ঠিকাদারি কাজ করি। পার্টি নেতাদের অনেকবার বলেও তেমন সহযোগিতা পাইনি। তাই এখন আর সক্রিয় ভাবে রাজনীতিতে থাকি না।’’

এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সেবাব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘মামলার কাজে সহযোগিতা করা হয়।’’ তবে এ দিন সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর ঘনিষ্ঠ গড়বেতার সিপিএম নেতা দিবাকর ভুঁইয়া বলেন, ‘‘তৃণমূলের সংস্কৃতিই হচ্ছে সিপিএম নেতাদের অপদস্থ করা, জুতো মারা তারই অঙ্গ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন