গয়নার ব্যাগ ফেরালেন দোকানদার 

নবমীর রাতে তমলুকে প্রতিমা দর্শনে এসেছিলেন। রাতে টোটোয় চেপে বাড়ি ফেরার পথে বিপত্তি! টাকা এবং গয়নার ব্যাগ পড়ে গিয়েছিল এক দম্পতির। সেই ব্যাগ কুড়িয়ে পেয়ে তা ওই দম্পতির হাতে ফিরিয়ে দিলেন এক চায়ের দোকানদার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:৩০
Share:

সন্তু শাসমল। নিজস্ব চিত্র

নবমীর রাতে তমলুকে প্রতিমা দর্শনে এসেছিলেন। রাতে টোটোয় চেপে বাড়ি ফেরার পথে বিপত্তি! টাকা এবং গয়নার ব্যাগ পড়ে গিয়েছিল এক দম্পতির। সেই ব্যাগ কুড়িয়ে পেয়ে তা ওই দম্পতির হাতে ফিরিয়ে দিলেন এক চায়ের দোকানদার।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রের খবর, নন্দকুমারের পুয়্যাদা গ্রামের বাসিন্দা বাবুলাল আচার্য ও তাঁর স্ত্রী নবমীর রাতে ঠাকুর দেখে টোটোয় করে বাড়ি যাচ্ছিলেন। নিমতলা মোড়ের কাছে রাস্তায় বাবুলালের স্ত্রীর কাঁধের ব্যাগ পড়ে যায়। তিনি তা বুঝতেও পারেননি। ওই দম্পতির দাবি, ব্যাগে ছিল কয়েক ভরি সোনার গয়না এবং নগদ টাকা।

রাতে দোকান বন্ধ করার আগে রাস্তায় বাবুলালদের ব্যাগটি পড়ে থাকতে তা কুড়িয়ে রাখেন নিমতলা মোড়ের চা-পানের দোকানদার সন্তু শাসমলম ওরফে বাপি। ব্যাগ খুলে তিনি সোনার গয়না-সহ নগদ টাকা এবং একটি মোবাইল ফোন পান। মোবাইলে একই নম্বরের একাধিকবার ‘মিসড কল’ দেখে সন্তু ওই নম্বরে ফোন করেন এবং ফোনের মালিক বাবুলালকে আশ্বস্ত করে জানান, তাঁদের ব্যাগ তাঁর কাছে রয়েছে।

Advertisement

নন্দকুমারের ব্যবত্তারহাট বাজারের পোশাক ব্যবসায়ী বাবুলাল তখন ছিলেন কয়েক কিলোমিটার দূরে শহরের নারায়ণপুরে। বাবুলালের কথায়, ‘‘রাস্তায় ব্যাগ হারানোয় বিষয়টি সামনে আসার পরে ওই ব্যাগে থাকা স্ত্রীর ফোনে একাধিকবার ফোন করি। কিন্তু কোনও সাড়া না মেলায় আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। হঠাৎ স্ত্রীর নম্বর থেকে ফোন আসে। ফোনের অন্যপ্রান্তে থাকা সন্তু আমাদের আশ্বস্ত করেন। আমরা ওর দোকানে গেলে উনি ব্যাগ ফেরত দেন। ওঁর আমরা কৃতজ্ঞ।’’

সন্তু তমলুক শহরের দক্ষিণচড়া শঙ্করআড়া এলাকার বাসিন্দা। নিমতলা মোড়ে গত ১০ বছর ধরে চা-পানের দোকান চালানো সন্তুর দোকানটি সম্প্রতি হলদিয়া-মেচেদা সড়ক সম্প্রসারণ কাজের জন্য উচ্ছেদ করা হয়েছে। বৃদ্ধা মা, স্ত্রী এবং তিন কন্যা, এক ছেলেকে নিয়ে সংসারের আয়ের ভরসা এখন অস্থায়ী চা-পান দোকান। এমন আর্থিক অনটনেও কুড়িয়ে পাওয়া গয়না-টাকার ব্যাগ ফিরিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে বছর সাঁইত্রিশের সন্তু বলেন, ‘‘রাত তখন প্রায় ১০টা। ঠাকুর দেখতে আসা লোকজন রাস্তায় ছিল। দোকানের সামনে রাস্তায় ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখে তুলে আনি। ব্যাগ খুলে মোবাইলের মিসড কল দেখেই ফোন করি। ওঁদের হাতে ব্যাগ ফিরিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হয়েছি।’’ সন্তুর এমন কাজে খুশি স্থানীয়েরা। তাঁর চায়ের দোকানের কাছেই পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা অফিস। সমিতির জেলা সাধারণ সম্পাদক অরূপকুমার ভৌমিক বলেন, ‘‘যেভাবে প্রলোভন উপেক্ষা করে সন্তু গয়না-টাকার ব্যাগ ফিরিয়ে দিয়েছেন, তা সকলের কাছেই শিক্ষণীয়। ওঁর কাজে গর্বিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন