বহিরাগতদের সঙ্গে বচসা কলেজ পড়ুয়াদের।—নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূল নেতাদের সামনেই দলের অপসারিত ছাত্র নেতার হয়ে স্লোগান দিলেন তমলুক কলেজের ছাত্র সংসদের তৃণমূল প্রতিনিধিরাই। এমনকী ওই অপসারিত নেতাকে পদে ফিরিয়ে আনার দাবিতে কলেজের সামনে অনশনেও বসেন তাঁরা। বুধবার তমলুক কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিযদের এমন আচরণে আলোড়ন পড়েছে শহর জুড়ে।
সদ্য সমাপ্ত পুরসভা ভোটে দল বিরোধী কাজের অভিযোগে গত শনিবার তমলুক কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ইউনিট সভাপতি সৌমেন চক্রবর্তীকে তাঁর পদ থেকে অপসারণের কথা জানিয়েছিলেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীপক দাস। কিন্তু সংগঠনের জেলা নেতৃত্বের ওই ঘোষণার পরে গত সোমবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নিয়ন্ত্রিত তমলুক কলেজের ছাত্র সংসদ সদস্যদের একাংশ সৌমেনবাবুর সমর্থনে মিছিল করে। এই ঘটনার জেরে অস্বস্তিতে পড়ে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।
ওই ঘটনার পর বুধবার তমলুক শহর তৃণমূল সভাপতি দিব্যেন্দু রায়, তমলুক পুরসভার উপ-পুরপ্রধান দীপেন্দ্রনারায়ণ রায়, প্রাক্তন পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ সেন, পৃথ্বীশ নন্দী-সহ অধিকাংশ তৃণমূল কাউন্সিলর কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করে জানান, দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সৌমেনবাবুকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ইউনিট সভাপতি পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। সেই সময় শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় একশোর বেশী দলীয় কর্মীও কলেজের চত্বরে জড়ো হন। গোলমালের আশঙ্কায় কলেজের সামনে হাজির ছিল পুলিশ বাহিনী। সকাল সাড়ে ১১ টা নাগাদ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করার পর তৃণমূল নেতারা কলেজের ছাত্র সংসদের অফিসে যান। তখন সেখানে ছিলেন ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক জয়দেব দাস, সংসদ সভাপতি সহ সংসদের নির্বাচিত সদস্যরা।
তৃণমূল নেতারা ছাত্র সংসদের নেতাদের জানিয়ে দেন দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ছাত্র সংগঠনের নেতা সৌমেনবাবুকে অপসারণের সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে। সেই সময়ই ছাত্র সংসদের সভাপতি অমৃতেন্দু জানা, সাধারণ সম্পাদক জয়দেব দাসরা তৃণমূল নেতাদের জানান, এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে সংগঠনের জেলা নেতৃত্ব তাঁদের কিছু জানাননি। সঙ্গে বলেন, ‘‘আমরা সৌমেনদাকে নেতা বলে মানি, আমরা তাঁর পাশে আছি।’’ ছাত্র সংসদ নেতাদের এই বক্তব্যে তৃণমূল নেতারা তখন ছাত্র সংসদ নেতাদের জানিয়ে দেন, দলের সিদ্ধান্ত মেনে চলতেই হবে।
দু’পক্ষের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় শুরু হতেই ছাত্র সংসদের অফিসের মধ্যেই সৌমেনবাবুর সমর্থনে স্লোগান দিতে থাকেন তাঁর অনুগামীরা। এসময় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে আসা একদল কর্মী সৌমেনবাবুর বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শুরু করেন। অবশেষে তৃণমূল নেতারা দলীয় কর্মীদের নিয়ে কলেজ চত্বর থেকে বেরিয়ে যান। এরপর কলেজের ছাত্র সংসদ অফিসের সামনে অনশনে বসেন সৌমেনবাবুর ছাত্র সংসদ সদস্যরা। পুরো ঘটনায় তমলুক কলেজে তৃণমূল পরিচালিত ছাত্র সংসদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে টানাপোড়নে শুরু হয়েছে সৌমেনবাবু ও শহরের তৃণমূল নেতাদের মধ্যে। তমলুক শহর তৃণমূল সভাপতি দিব্যেন্দু রায় অবশ্য বলেন, ‘‘কলেজের ছাত্র সংসদের সদস্যরা আমাদের সঙ্গেই আছেন। তাঁরা সৌমেন চক্রবর্তীর সমর্থনে স্লোগান দিয়েছেন কি না জানা নেই।’’