ধুলোয় ভরেছে বন্ধ সিনেমা হল

ঝুল পড়ে গিয়েছে স্ক্রিনে। চেয়ারগুলোরও আর সোজা হওয়ার ক্ষমতা নেই। এককোণে ডাঁই হয়ে রয়েছে পুরনো ফিল্মের স্তূপ। এককালে গমগম করত, কিন্তু এখন সবটাই গল্পকথা।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:২২
Share:

ঝাঁপ বন্ধ খড়্গপুরের মিলনী সিনেমা হলের ।

ঝুল পড়ে গিয়েছে স্ক্রিনে।

Advertisement

চেয়ারগুলোরও আর সোজা হওয়ার ক্ষমতা নেই। এককোণে ডাঁই হয়ে রয়েছে পুরনো ফিল্মের স্তূপ।

এককালে গমগম করত, কিন্তু এখন সবটাই গল্পকথা।

Advertisement

একে একে দেউটি নিভেছে সব সিনেমাহলের। বন্ধ হয়ে গিয়েছে খড়্গপুরের সাউথ ইনস্টিটিউট, মিলনী, শীতলা, নটরাজের মতো হল।

হলের কথা শুনেই দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন বৃদ্ধ অশ্বিনগোকুল দাস। তিনি বলছিলেন, ‘‘অনেক চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারিনি হলটাকে। হলটাকে আধুনিক করে ভেবেছিলাম, লাভের মুখ দেখব। কিন্তু কিছুই হয়নি।’’

সিনেমাহলের এক কর্মীর কথায়, ‘‘কেবল্‌ টিভি আসার পর থেকেই আশা ক্রমে ক্ষীণ হচ্ছিল। কিন্তু তারপরে প্রযুক্তির জোয়ারে আমরা ভেসে গেলাম।’’ তাঁর পাশেই দাঁড়িয়েছিল ‘জেন ওয়াই’-এর প্রতিনিধি এক তরুণ। তিনি বলেন, ‘‘ধুর, বাড়িতে বসে কম্পিউটারে একটা সিনেমা ডাইনলোড করে কত আরাম করে দেখা যায়। খামোখা কেন হলে যেতে যাব। আর সিনেমা হলে যদি যেতেই হয়, তাহলে মাল্টিপ্লেক্সে যাব।’’

অজান্তেই হয়তো ওই তরুণ শহরের মনের কথাটাই শুনিয়ে দিল। এক ছাদের তলায় খাওয়া, কেনাকাটা, সিনেমা দেখা— সবকিছুই চাই একসঙ্গে। আর সেই লড়াইয়েই হেরে গেলেন অনেকেই। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে শহরের মিলনী হল। হলের অন্যতম মালিক সুব্রত পালিত বলছিলেন, “কেবল্‌ টিভির দাপটেই সব কিছু শেষ হয়ে গেল। অংশীদারি ব্যবসায় লোকসান বাড়তে থাকায় কেউ আর হলের পরিকাঠামো উন্নয়নে আগ্রহ দেখাল না। তাই বন্ধ হয়ে গেল হল।’’ পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা সুব্রতবাবুর স্ত্রী সঙ্গীতাদেবী বলছিলেন, “আমার বাপের বাড়ি কলকাতায়। বিয়ের পর ৩২ বছর আগে এই শহরে এসেছি। এই সময়ে কলকাতা রকেট গতিতে এগিয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই শহর আগে যা ছিল তার থেকেও পিছিয়ে গিয়েছে। শহরে আছেটা কী!”

আশার আলো শহরের গেটবাজারের এই হল।

ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

শহরের সবেধন নীলমণি বোম্বে সিনেপ্লেক্স। আগের বোম্বে সিনেমাহলের লোকসানের বোঝা বাড়তে থাকায় মালিক আধুনিকীকরণের সিদ্ধান্ত নেন। আর তারপরেই আস্তে আস্তে ঘুরল চাকা। সিনেপ্লেক্সের দু’টি স্ক্রিনে সিনেমা দেখার জন্য পাঁচশোর মতো আসন রয়েছে। অনলাইনে এই সিনেমা হলের টিকিট কাটার সুযোগও রয়েছে।ওই সিনেপ্লেক্সের মালিক অশ্বিন গোকুলদাস বলছিলেন, “লোকসানে শেষ হয়ে গেলাম। কিন্তু আশা ছাড়িনি। নতুন রূপে সিনেমা হল ফের চালু করলাম। এখন ভালই ব্যবসা হচ্ছে।’’

আর এই সিনেমা হল ঘিরেই আশার আলো দেখছেন সিনেমাপ্রেমীরা। প্রথম সিনেপ্লেক্স হওয়ায় খুশি শহরের বাসিন্দারাও। শহরের এক যুবকের কথায়, ‘‘আগামী শুক্রবারই মুক্তি পাচ্ছে ‘এম এস ধোনি- দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ সিনেমা। এই সিনেমার বেশ কয়েকটি দৃশ্যের শ্যুটিং হয়েছে রেলশহরে। নতুন এই হলেই সিনেমাটা দেখতে যাব ভেবেছি। তা ছাড়া তো আর উপায়ও নেই।’’ খড়্গপুরের বাসিন্দা এক কলেজ ছাত্রীর কথায়, ‘‘নেই রাজ্যে কিছু একটা তো হয়েছে। এরপরে শহরে আধুনিক মাল্টিপ্লেক্সও হবে নিশ্চয়।’’ আশান্বিত মেদিনীপুরের ব্যবসায়ী রীতেশ অগ্রবালও। তিনি বলেন, “শহরে একটা ভাল মাল্টিপ্লেক্স নেই যে তিন ঘণ্টা আরামে সিনেমা দেখা যাবে। একটা তো অন্তত সিনেমা হল হয়েছে শহরে, এতেই আমরা খুশি।”

কয়েক মাসের মধ্যেই শহরে মাল্টিপ্লেক্স চালুর আশ্বাস দিচ্ছেন খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার। তিনি বলেন, ‘‘জমির অভাবে শহরে মাল্টিপ্লেক্স তৈরি করা যাচ্ছে না। পুরসভার মালঞ্চ সুপার মার্কেটে পিপিপি মডেলে কয়েক মাসের মধ্যেই মাল্টিপ্লেক্স চালু হচ্ছে। সেখানে এক ছাদের তলায় সিনেমা হল, শপিং কমপ্লেক্স থাকবে।’’ নতুন মাল্টিপ্লেক্স কবে চালু হবে, প্রতীক্ষায় শহরবাসী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন