সামাজিক শিক্ষাই সম্পদ, আইআইটিতে বার্তা ইউনূসের

শনিবার খড়্গপুর আইআইটি-র নেতাজি অডিটোরিয়ামে বার্ষিক বাণিজ্য উৎসব ‘পূর্বোদয়’-এর সূচনা অনুষ্ঠান ছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৩৫
Share:

বক্তা: মহম্মদ ইউনূস। নিজস্ব চিত্র

এক সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের অর্থনীতি পড়িয়েছেন। সেই তিনিই এখন বলছেন, বাস্তব জগতে প্রথাগত শিক্ষার মূল্য নেই। সামাজিক শিক্ষাতেই খুঁজে পাওয়া যায় জীবনের আসল রসদ। আর সেই পথেই আইআইটি-র পড়ুয়াদের সামাজিক উদ্যোগপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে গেলেন বাংলাদেশের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনূস।

Advertisement

শনিবার খড়্গপুর আইআইটি-র নেতাজি অডিটোরিয়ামে বার্ষিক বাণিজ্য উৎসব ‘পূর্বোদয়’-এর সূচনা অনুষ্ঠান ছিল। আইআইটি খড়্গপুরের বিনোদ গুপ্ত স্কুল অফ ম্যানেজমেন্ট আয়োজিত এই অনুষ্ঠানেই প্রধান বক্তা ছিলেন গ্রামীণ ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা ইউনূস। ছিলেন বন্ধন ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রশেখর ঘোষ, আইআইটি খড়্গপুরের অধিকর্তা পার্থপ্রতিম চক্রবর্তী। মূলত দেশের বিভিন্ন বিজনেস স্কুলের পড়ুয়াদের ব্যবসায়িক ভাবনার প্রতিযোগিতার আসর এই বাণিজ্য উৎসব। সেই মঞ্চেই নোবেলজয়ীর মুখে প্রথামাফিক শিক্ষা, চাকরির বদলে সামাজিক উদ্যোগের কথা শুনে খুশি পড়ুয়ারাও।

২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা ইউনূস। দীর্ঘ লড়াইয়ের স্বীকৃতি ছিল তাঁর এই পুরস্কার। ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিতে বদল আনতে গিয়ে বহু লড়াই লড়তে হয়েছে তাঁকে। ইউনূস বলছিলেন, “খাদ্য, স্বাস্থ্যের মতো অর্থনৈতিক অধিকারও মানুষের রয়েছে। আমি অনৈতিক শিক্ষাকে দূরে সরিয়ে গ্রামে ঘুরে ঘুরে মানুষের কথা জেনেছি। ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে দেখেছি ওঁরা ফেরত দিচ্ছেন। তার পরে অনেক লড়াই চালিয়ে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলাম।”

Advertisement

এখন বাংলাদেশে এই ব্যাঙ্কের ২৪ হাজার শাখা রয়েছে। ইউনূসের মতে, ব্যাঙ্কে কেন মানুষকে যেতে হবে! ব্যাঙ্ক মানুষের দোরগোড়ায় যাবে। এই ভাবনাতেই সাফল্য মিলেছে। বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাঙ্কে গ্রাহকদের প্রায় ৯৭ শতাংশই মহিলা। সে কথা জানিয়ে ইউনূস বলেন, “মহিলাদের কাছে টাকা এলে দেখেছি সংসারে পরিবর্তন আসে। তাই মহিলাদের আমি ঋণ দিয়েছি।”

ইউনূসের মতে, “গরিব মানুষ দারিদ্র্য তৈরি করে না। প্রথাগত শিক্ষায় দারিদ্রতা বাড়ে।” তাই চাকরির পিছনে না ছুটে উদ্যোগপতি হওয়ার চেষ্টা করতে পরামর্শ দিয়েছেন এই নোবেলজয়ী। তাঁর কথায়, “ব্যক্তি স্বার্থে নয়, সামাজিক স্বার্থে ব্যবসা করতে হবে। আমিও সেটাই করেছি।”

কিন্তু প্রথাগত শিক্ষার কি কোনও মূল্য নেই?

ইউনূসের জবাব, “আমার চোখে প্রথাগত শিক্ষার কোনও মূল্য নেই। অনেকেই তো শিক্ষিত না হয়েও উদ্যোগপতি হয়েছেন। এ ক্ষেত্রে সামাজিক শিক্ষাই আসল।” আর রাজনৈতিক বাধা? এ বার নোবেলজয়ী বলেন, “আমাকেও পড়তে হয়েছে। কিন্তু মানুষকে যখন বোঝানো সম্ভব হবে তখন কোনও বাধাই বাধা থাকে না।”

নোবেলজয়ীর এমন পরামর্শ শুনে খুশি পড়ুয়ারা। কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের গবেষক ছাত্র বিশ্বরূপ মণ্ডল বলছিলেন, “খুব উৎসাহিত হলাম। আমরা নিজেরা পরিবেশ নিয়ে কাজ করছি। চেষ্টা করছি সামাজিক ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে। ওঁর পরামর্শ কাজে লাগবে।” প্রতিষ্ঠানের বিজনেস স্কুলের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র কুমার মঙ্গলম, ছাত্রী দেবলীনা মুখোপাধ্যায়দেরও বক্তব্য, “আমাদের পড়াশোনা আসলে মনোবল বাড়ানোর শিক্ষা। মহম্মদ ইউনূসের বক্তৃতায় সেই মনোবল বেড়ে গেল। যে স্বপ্ন উনি দেখালেন, তা বাস্তবে পরিণত করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন