শুভেন্দু যেতেই সমীকরণ বদল, জেলা তৃণমূলের বৈঠকে মন্ত্রী
Soumen Mahapatra

ঘরের মাঠে ‘প্রত্যাবর্তন’ সৌমেনের

সেখানে তৃণমূলের পূর্ব মেদিনীপুরের দুই জেলা কো-অর্ডিনেটর তথা রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরি,  ভগবানপুরের বিধায়ক অর্ধেন্দু মাইতি, অধিকারীদের বিরোধী শিবিরের বিধায়ক-সহ কয়েকজন তৃণমূল নেতা উপস্থিত ছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:৩৮
Share:

—ফাইল চিত্র।

রাজনীতির অঙ্ক প্রতিদিনই পাল্টাচ্ছে পূর্ব মেদিনীপুরে। যে তৃণমূল নেতা তথা মন্ত্রী সৌমনে মহাপাত্রকে এক সময় ‘অধিকারী গড়’ পূর্ব মেদিনীপুর থেকে সরিয়ে পাশে জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলায় নিয়ে গিয়েছিলেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব, সেই সৌমেনেরই বর্তমানে ‘প্রত্যাবর্তন’ ঘটেছে পূর্বে রাজনীতির ময়দানে। যোগ দিচ্ছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের বৈঠকে।

Advertisement

তৃণমূল সূত্রের খবর, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তমলুকের নিমতৌড়িতে শিক্ষক ভবনে জেলার তৃণমূল বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছিল। সেখানে তৃণমূলের পূর্ব মেদিনীপুরের দুই জেলা কো-অর্ডিনেটর তথা রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরি, ভগবানপুরের বিধায়ক অর্ধেন্দু মাইতি, অধিকারীদের বিরোধী শিবিরের বিধায়ক-সহ কয়েকজন তৃণমূল নেতা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ছিলেন সৌমেন এবং কেশপুরের বিধায়ক শিউলি সাহাও। সেখানে দলের সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে মঙ্গলবার।

২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের সময় বিধানসভা ভোটে তমলুক কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হিসাবে জিতে বিধায়ক হয়েছিলেন সৌমেন মহাপাত্র। তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভায় জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের দ্বায়িত্ব পান। কিন্তু ২১০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের কয়েকমাস আগে তৃণমূলের একাংশের বিরোধিতার মুখে পড়তে শুরু করেছিলেন সৌমেন। শেষ পর্যন্ত বিধানসভা কেন্দ্র বদলে পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা থেকে লড়তে দেয়া হয় তাঁকে। সেখান থেকে জিতে ফের বিধায়ক এবং মন্ত্রী হয়েছেন সৌমেন। তবে ওই সময় থেকেই তিনি পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় শাসকদলের রাজনীতি থেকে সম্পূর্ণ দূরে গিয়েছিলেন সৌমেন।

Advertisement

জেলা রাজনৈতিক মহলের একাংশের ব্যাখ্যা, তৃণমূলে থাকাকালীন দলের দাপুটে নেতা শুভেন্দু অধিকারীর খাসতালুক পূর্ব মেদিনীপুর থেকে জিতে মন্ত্রী হওয়া সৌমেন মহাপাত্রের সঙ্গে তাঁর ঠাণ্ডা লড়াই শুরু হয়েছি। পাঁশকুড়ার বাসিন্দা সৌমেন তমলুক বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জিতে যাওয়ায় তাঁর অনেক অনুগামী তৈরি হয়েছিল জেলা জুড়ে। কিন্তু অধিকারী পরিবারের বিরোধী শিবিরের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে সে সময় সৌমেনের ঘনিষ্ঠা বাড়ে বলে অভিযোগ। তাতেই তিনি শুভেন্দুর ‘কোপে’ পড়েছিলেন বলে দাবি তাঁর অনুগামীদের একাংশের।

ওই সময় পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যায় যে, ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটের কয়েকমাস আগেই সৌমেনের বিরুদ্ধে বিধায়ক হিসাবে ব্যর্থতা এবং এলাকার উন্নয়নে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে তমলুকের রাস্তায় মিছিল করেছিলেন শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের তৃণমূল নেতারা। ওই সময় তমলুক শহরের মানিকতলায় একই বাড়িতে থাকা তৎকালীন তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী এবং তমলুকের বিধায়ক তথা মন্ত্রী সৌমেনের কার্যালয়ও আলাদা হয়ে যায়। শহরেরই অন্যত্র বাড়ি ভাড়া করে সৌমেন নিজের কার্যালয় চালু করেছিলেন।

জেলা রাজনৈতিক মহলের দাবি, শুভেন্দুর বিরোধিতার জন্যই সৌমেন পূর্ব মেদিনীপুরের রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরে মনোনিবেশ করেছিলেন। পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া শহরের বাসিন্দা হলেও গত পাঁচ বছরে নিজের জেলায় তৃণমূলের সাংগঠনিক কর্মসূচিতে তাঁকে দেখাও যায়নি। এই পরিস্থিতিতে সৌমেনর ফের পূর্বে রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তনের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে করছেন সকলেই।

দলীয় সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই সৌমেনের এই প্রত্যাবর্তন। শুভেন্দুর অনুপস্থিতিতে পূর্ব মেদিনীপুরে তাঁকেই তৃণমূলের অন্যতম মুখ করা হচ্ছেও বলে খবর। এ ব্যাপারে সৌমেন বুধবার বলেন, ‘‘এতদিন যাঁরা পূর্ব মেদিনীপুরে সাংগঠনিক দ্বায়িত্বে ছিলেন, তাঁরা আমাকে দলের কোনও কর্মসূচিতে ডাকেননি। তবে এতে আমি কষ্ট পাইনি। এখন রাজ্যে নেতৃত্বের নির্দেশেই জেলার বিধায়ক ও নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে ছিলাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন