মাস খানের ধরে বন্যার জলে ঘেঁটে খসখসে হয়ে গিয়েছে গায়ের চামড়া। সারাক্ষণ জলে পা ডুবে থাকায় আঙুলের ফাঁকে ঘা হয়ে গিয়েছে।
গোটা ঘাটাল মহকুমায় যে সব এলাকা থেকে জল নেমে গিয়েছে সেই সব এলাকার বন্যা দুর্গতেরা এখন এমনই শারীরিক সমস্যার শিকার। সরকারি তথ্যও বলছে ঘাটালে প্রায় ১২০০ লোক নানা ধরনের চর্মরোগে ভুগছেন। যদিও বেসরকারি হিসাবে সংখ্যাটা অন্তত দু’হাজার।
এই ঘটনায় যথেষ্ট উদ্বেগে স্বাস্থ্য দফতরও। চর্মরোগের চিকিৎসার জন্য ইতিমধ্যেই খোলা হয়েছে পৃথক শিবির। পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “একটা জনপদে এত সংখ্যক মানুষ চর্মরোগে আক্রান্ত হওয়ায় বিশেষ শিবির খুলেছি। নিখরচায় চিকিৎসা এবং ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। দূষিত জল ব্যবহার বন্ধে লিফলেট বিলি-সহ মাইকে প্রচারও করা হচ্ছে।”
ঘাটালে বন্যা নতুন নয়। তাই বন্যার উপসর্গ হিসাবে কী ধরনের অসুখ ছড়ায় তা এখানকার মানুষের অজানা নয়। কিন্তু বাঁধ ভাঙার ফেল ঘাটাল মহকুমায় যে সব এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে সেই সব এলাকায় ওই সব রোগ ছাড়ানোয় মানুষ আতান্তরে পড়েছেন।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, বন্যার জলে নানা জীবাণু থাকে। সেই দূষিত জল ব্যবহারেই চর্মরোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। শিশু থকে বয়স্ক কেউই বাদ পড়ছে না। পায়ের পাতা থেকে গায়ের চামড়া টকটকে লাল, খসখসে হয়ে যাচ্ছে। সেইসঙ্গে শরীরের নানা অংশে ছোট ছোট ফোঁড়াও হচ্ছে। সেখানে হাত দিয়ে ঘষলে রক্ত পড়ছে। জীবাণু ঘটিত এই রোগ থেকে মুক্তি মিলবে কী ভাবে, এখন সেই চিন্তাতেই দিশাহারা আক্রান্তেরা।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ঘাটাল এবং দাসপুর এলাকায় চর্মরোগের প্রকোপ বেশি দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ঘাটাল এবং দাসপুরেই দশটি এলাকায় স্বাস্থ্য দফতর বিশেষ শিবির খুলেছে। শিবিরগুলিতে মূলত চর্মরোগের চিকিৎসাই বেশি হচ্ছে। এমনিতেই ঘাটালে এখন জ্বরের প্রকোপ শুরু হয়েছে। সঙ্গে ডায়েরিয়াও ছড়াচ্ছে। হাসপাতালগুলিতে প্রতিদিনই ভিড় বাড়ছে। এই পরিস্থিতি সামালতেই হিমসিম অবস্থা স্বাস্থ্যকর্তাদের। তার উপর চর্মরোগের সংখ্যাও বাড়তে থাকায় উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য দফতর। জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “পুকুরের জল ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। নলকূপ এবং ট্যাপকল-সহ পানীয় জলের সমস্ত উৎসগুলিকে শোধন ও পুকুরে ব্লিচিং পাউডার দিয়ে জীবাণু নষ্ট করতে হবে। তা না হলে চর্মরোগ বাগে আনা সম্ভব নয়।”
আক্রান্তদের প্রশ্ন, পুকুরের জলে ব্লিচিং পাউডার ছড়ানোর কথা বলা হলেও তা ছড়াবে কে? তাঁদের অভিযোগ, বন্যায় সব পুকুরই ভেসে গিয়েছিল। জল নেমে যাওয়ার পর প্রশাসনেরই দেখা নেই। বাধ্য হয়ে দূষিত জলেই স্নান, বাসন ধোওয়া থেকে জামা-কাপড় কাচা সবই করতে হচ্ছে।
এছাড়াও বন্যার জেরে অর্ধেক নলকূপ খারাপ হয়ে গিয়েছে। মেশিনে জল ঢুকে যাওয়ায় সজলধারাগুলির অবস্থাও শোচনীয়। পানীয় জলের সমস্যাই এখনও পুরোপুরি মেটাতে পারেনি পুর-পঞ্চায়েত প্রশাসন। যদিও ঘাটালের মহকুমাশাসক পিনাকীরঞ্জন প্রধান বলেন, “পুকুরের জলে ব্লিচিং পাউডার ছড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রতিটি পঞ্চায়েতকে। পাশাপাশি জনবহুল এলাকা এবং রাস্তাগুলিতেও নিময় করে ব্লিচিং পাউডার ছড়ানোর কথা বলা হয়েছে।”