খেজুরিতে এই ছবি ঘিরেই নেতাজিকে অবমাননার অভিযোগ করেছে তৃণমূল।
নেতাজি জন্মজয়ন্তী পালন ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্ক অব্যাহত।
শনিবার নেতাজির ১২৫তম জন্মবাষির্কীর সূচনা অনুষ্ঠান পালিত হয়। কলকাতায় কেন্দ্রীয় সরকারের এক অনুষ্ঠানে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি ওঠায় প্রতিবাদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সামনে নেজাজি বিষয়ে বক্তৃতা দেননি মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য রাজনীতিতে সমালোচনার ঝড় তুলেছে ওই ঘটনা। তৃণমূল এবং বিজেপি নেতৃত্ব পরস্পরকে দোষারোপ করেছে। এরই মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরিতে জন্মজয়ন্তী পালনে খোদ নেতাজিকেই অবমাননা করা হয়েছে বলে সরব হল রাজ্যের শাসক দল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দীর্ঘ কাটআউটের পায়ের কাছে নেতাজির ছবি বসিয়ে জন্মজয়ন্তী পালনের অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপির বিরুদ্ধে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, খেজুরি-১ ব্লকের ধোবাপুকুর গ্রামে দলীয় বুথ কার্যালয়ের সামনে শনিবার ‘পরাক্রম দিবস’ পালন করেছিলেন মণ্ডল ও জেলা বিজেপির কয়েকজন নেতা ও কর্মী। স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা রবিবার রাতে নিজের ফেসবুকের দেওয়ালে একটি ছবি পোস্ট করেন। তারপরেই শোরগোল পড়ে রাজনৈতিক মহলে। সেই ছবিতে দেখা যায় বিজেপির কার্যালয়ের সামনে গেরুয়া কাপড়ে ঢাকা রয়েছে। দরজার সামনে প্রধানমন্ত্রীর বিরাট কাটআউট।
পিছনে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর ছবি সহ ‘স্বাগতম’ ব্যানার। আর প্রধানমন্ত্রীর কাটআউটের ডানদিকে নীচে তাঁর পায়ের কাছে নেতাজির ছবি রাখা হয়েছে। সেই ছবিতে জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক তাপস দোলই, মণ্ডল নেতা সুমন মণ্ডল প্রমুখ মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
’’
ছোট-বড় ডান দিকে, প্রধানমন্ত্রীর নেতাজি-বন্দনার ছবি ছড়িয়েছে সমাজমাধ্যমে।
জালালউদ্দিন খান নামে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা ওই ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর পায়ের নীচে নেতাজির ছবি রেখে পরাক্রম দিবস পালন করল বিজেপি। এতে নেতাজির অপমান। বাংলায় আর কত কী দেখতে হবে!’’ ওই ছবিতে শ্রদ্ধা জানানোর কথা স্বীকার করে বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক তাপস দোলইয়ের দাবি, ‘‘অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির মুহূর্তের ছবি দেখিয়ে বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে। আমরা নেতাজির ছবিতে সসম্মানে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করেছি।’’
শুধু নেতাজি নয়, স্বামী বিবেকানন্দ, বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙচুরের মতো মনীষীদের অবমাননার একাধিক নজির রয়েছে এ রাজ্যে। সে ক্ষেত্রে বিজেপির মতো অভিযোগের আঙুল উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধেও। যদিও রবিবার নেতাজি জন্মজয়ন্তী পালন ঘিরে বিতর্ক দেখা দিতেই বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অনুপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিজেপি এ ধরনের সংস্কৃতি বিশ্বাস করে না। যদি এমন কিছু ঘটে থাকে, অবশ্যই দলীয়ভাবে পদক্ষেপ করা হবে।’’ বিজেপি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, নেতাজি বাংলা তথা ভারতে গর্ব। তাঁর অবমাননা কোনওভাবেই করা হয়নি। একই সঙ্গে তাদের দাবি, নেতাজি, স্বামী বিবেকানন্দ, বিদ্যাসাগর নয়, শাসক দলের তরফে বাংলার গর্ব হিসাবে মমতাকে বিভিন্ন ফেস্টুনে, হোর্ডিংয়ে তুলে ধরা হচ্ছে। এটা অবমাননা নয়?
জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র বলেন, ‘‘বিজেপির কৃষ্টি, সংস্কৃতি গোটা দেশের মানুষ জানে। ওরা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে একই জায়গায় রেখে সম্মান জ্ঞাপন করতে চাইছে। যে ভাবে প্রধানমন্ত্রীর ছবির তলায় নেতাজিকে রেখে তার জন্মজয়ন্তী পালন করা হল এতে দুঃখ পাওয়া, যন্ত্রণা পাওয়া ছাড়া আমাদের করার কিছুই নেই। এর যোগ্য জবাব বাঙালিরা দেবে।