বিদেশি কুকুরদের সঙ্গে টক্কর

প্রশিক্ষণ পেলে যে পারে নেড়িরাও, দেখাল পিঙ্কি

বোন পিঙ্কিকে নিয়ে এখন গর্বের সীমা নেই তানিয়ার। আগে পিঙ্কিকে রাস্তায় নিয়ে বেরোলে অনেকেই রাস্তার কুকুর, নেড়ি বলে তাচ্ছিল্য করত। আর এখন পড়শিরা বাড়ি এসে দেখে যাচ্ছেন পিঙ্কিকে।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৭ ০১:০০
Share:

আহ্লাদে: ডগ শো থেকে এই ট্রফিই জিতেছে পিঙ্কি। নিজস্ব চিত্র

বোন পিঙ্কিকে নিয়ে এখন গর্বের সীমা নেই তানিয়ার। আগে পিঙ্কিকে রাস্তায় নিয়ে বেরোলে অনেকেই রাস্তার কুকুর, নেড়ি বলে তাচ্ছিল্য করত। আর এখন পড়শিরা বাড়ি এসে দেখে যাচ্ছেন পিঙ্কিকে। হবে নাই বা কেন, লড়াই তো কম ছিল না পিঙ্কির। সম্প্রতি কলকাতার একটা ডগ শোতে গিয়ে বিদেশি কুকুরদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দু’টো পুরস্কার জিতেছে সে। ডগ শোতে বিদেশি কুকুরদেরই রমরমা। সেখানে দিশি কুকুরদের প্রবেশাধিকার নেই বললেই চলে। তবু এমন শোতে গিয়ে বিদেশি কুকুরকে হারানো তো আলাদা বিষয় বটেই!

Advertisement

খড়্গপুরে সুভাষপল্লির একটা পরিবারের বাসিন্দা পিঙ্কি। আট মাস বয়সে খুব অসুস্থ অবস্থায় মেদিনীপুরের রাস্তা থেকে তাকে বাড়ি নিয়ে এসেছিল ‘দিদি’ তানিয়া। ভালবেসে নাম দেওয়া হয় ‘পিঙ্কি’। তারপর থেকে তানিয়াদের বাড়িই ঠিকানা পিঙ্কির। শুধু তাই নয়, পাড়ার সকলেই তাকে ডাকে ওই নামেই। কেউ তাকে নেড়ি বললে রেগে যায় তানিয়া। সোফায় পিঙ্কিকে কোলের কাছে বসিয়ে তানিয়া বলেন, ‘‘আমাদের পিঙ্কি জিনিয়াস। বিদেশি কুকুরদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দুটো পুরস্কার পেয়েছে। ওকে রাস্তার কুকুর বললে রাগ হবে না?’’

এই রাজ্যে ‘ডগ-শো’র আয়োজন নতুন নয়। এতদিন ডগ শোয়ে রাস্তার কুকুরদের শুধুমাত্র শারীরিক পরীক্ষা, টিকাকরণেই সীমাবদ্ধ থাকতে হত। বাধ্যতা যাচাইয়ের পরীক্ষায় সুযোগ পেত শুধুমাত্র বিদেশি প্রজাতির কুকুররা। তবে ২০১১ সাল থেকে রাস্তার কুকুরদের জন্যও শোয়ের আয়োজন করছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদিকা মৌসুমী দাস পেশায় সঙ্গীতশিল্পী। সঙ্গে কুকুরপ্রেমীও বটে। এই প্রতিযোগিতাতেই প্রথম কুকুরের বাধ্যতা যাচাইয়ের পরীক্ষায় বিদেশি কুকুরের সঙ্গে সমানে টক্কর দিয়েছে ‘পিঙ্কি’। শুধু পিঙ্কি নয়, হাজির থাকা প্রায় দুশো কুকুরের মধ্যে ছিল ২২টি দিশি কুকুর। আর সেই দিশিদের মধ্যে পিঙ্কিই বাধ্যতা যাচাইয়ের পরীক্ষায় যোগ দিয়েছিল। জাম্পিং, জিগজ্যাগ, স্যালুট-সহ নানা কসরত এনে দিয়েছে সেরার সম্মান। আয়োজক সংস্থার সম্পাদিকা মৌসুমি দাসের কথায়, ‘‘রাস্তায় কুকুর কেন অবহেলিত হবে? রাস্তার কুকুররা প্রশিক্ষণ পেলে যে বিদেশি কুকুরদের সঙ্গে টক্কর দিতে পারে, সেটা প্রমাণের তাগিদ ছিল।’’

Advertisement

পিঙ্কির সাফল্য কিন্তু একদিনের নয়। আট মাস থেকে তৈরি করা হয়েছে তাকে। পিঙ্কির সকাল শুরু হয় বিস্কুট ও আর শুকনো খাবার দিয়ে। দুপুরে মাংস-ভাত, বিকেলে দুধ-বিস্কুট আর রাতে ফের মাংস-ভাত। তারপর স্কুলে যাওয়ার মতোই রোজ খড়্গপুরের ভবানীপুরে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেয় পিঙ্কি। প্রশিক্ষক শ্যাম কাঁড়ারের সঙ্গেই কলকাতার ডগ-শোতে গিয়েছিল পিঙ্কি। সেখানেই বাজিমাত। পিঙ্কির প্রশিক্ষক শ্যামপ্রসাদ কারার বলেন, “পিঙ্কি প্রশিক্ষণকেন্দ্রের একমাত্র দেশি কুকুর। ওকে ‘ওবিডিয়েন্স ট্রেনিং’ দেওয়া হয়েছে। বসা, দাঁড়ানো, কিছু খুঁজে আনা এ সব করতে পারে। এখন চলছে ওর বিস্ফোরণ খুঁজে বের করার প্রশিক্ষণ।’’ শ্যামপ্রসাদবাবু বলেন, ‘‘প্রতিটি কুকুরের বিশেষত্ব রয়েছে। রাস্তার কুকুরদের সেভাবে বিশেষত্ব থাকে না। তবে ওরা প্রশিক্ষণ দিলে সব শিখতে পারে।”

পিঙ্কির বাবা শঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রাস্তা থেকে আরও একটা কুকুরকে বাড়িতে রেখেছি। তবে দেখেছি, পিঙ্কির অনুসরণের ক্ষমতা অনেকটা বেশি। তখনই আমরা ঠিক করি, ওকে প্রশিক্ষণ দেব।’’ পিঙ্কির এমন সাফল্যে খুশি ‘দিদি’ তানিয়াও। তার কথায়, ‘‘রাস্তার কুকুরদের অনেকে মারধর করে। ওরা তো কথা বলতে পারে না। আমাদের পিঙ্কির সাফল্য তার বিরুদ্ধে একটা প্রতিবাদও। এরপর আশা করি, রাস্তার কুকুরদের উপর অত্যাচার কিছুটা হলেও কমবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন