প্রতীকী ছবি।
ধূমপানের বিপদ নিয়ে প্রচার চললেও সচেতনতা ফেরেনি। নেশার প্রবণতা কমা তো দূর, দিনে দিনে ধূমপানে আসক্ত হয়ে পড়ছে বহু স্কুল পড়ুয়া। ধূমপান কতটা ক্ষতিকারক, তা সকলকে জানাতে এ বার কলম ধরল শাবানা খাতুন, মাম্পি মাহাতো, ত্রিপর্ণা বিশুই, শুভদীপ মণ্ডলদের মতো স্কুল পড়ুয়ারা।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দফতরের উদ্যোগে শুক্রবার মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে (বালক) পড়ুয়াদের নিয়ে এক প্রতিযোগিতা হয়। আগে ব্লকস্তরে প্রতিযোগিতা হয়েছিল। ব্লকস্তরের প্রতিযোগিতায় যারা প্রথম এবং দ্বিতীয় হয়েছে তারাই জেলাস্তরের প্রতিযোগিতায় যোগ দেয়। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার কথায়, “ধূমপান নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর সব রকম চেষ্টা চলছে। স্কুলস্তর থেকেই কাজ হচ্ছে। একজন সচেতন হলে সে আরও একশোজনকে সচেতন করতে পারে।”
একই ভাবে, জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধানও বলছেন, “এখন ধূমপান একটা বড় সমস্যা। অল্পবয়সীরাও আসক্ত হয়ে পড়ছে। এটা উদ্বেগের। এ নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। না হলে সমস্যা আরও বড় আকার নেবে।’’ এই প্রতিযোগিতার ফলে নিশ্চিত ভাবে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে উঠবে বলেও আশা রবীন্দ্রনাথবাবুর। মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের (বালক) প্রধান শিক্ষক পিন্টু সামন্ত বলছিলেন, “ছাত্রছাত্রীদের যেমন সচেতন হতে হবে, তেমনই অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে। ধূমপানের বিপদ ঠিক কোথায় লুকিয়ে রয়েছে বুঝতে হবে।” তাঁর কথায়, “আমিও এক সময় ধূমপান করতাম। বছর তিনেক আগে ছেড়ে দিয়েছি। এখন বেশ ভাল আছি।”
চিঠি লেখার প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়া মৌপাল হাইস্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী সাবনা খাতুন বলছিল, “ধূমপান অনেক ক্ষতি করে। এর থেকে ক্যানসারও হতে পারে। চিঠিতে তাই লিখেছি।” “ধূমপানের কারণে বহু শৈশব হারিয়ে যায়। শৈশব সুরক্ষায় সচেতনতা বাড়ানো উচিত। না হলে সামনে বড় বিপদ। ধূমপান অনেক কিছুই শেষ করে দিতে পারে। এমন বিষয় নিয়ে চিঠি লেখার অভিজ্ঞতা অন্য রকমই।”, বলছে আমলাশুলি হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী ত্রিপর্ণা বিশুই। একই মত মৌপাল হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী মাম্পি মাহাতো, আমলাশুলি হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র শুভদীপ মণ্ডলেরও।
বিপদ রয়েছে পরোক্ষ ধূমপানেও। অন্যের বিড়ি বা সিগারেটের ধোঁয়া নি:শ্বাসে নেওয়াই হল পরোক্ষ ধূমপান। জেলার উপ- মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তথা তামাকজাতীয় রোগসমূহের নোডাল অফিসার রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলছিলেন, “এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, রাজ্যের ১৩- ১৫ বছর বয়সী ছাত্রদের ৪.৪ শতাংশ ধূমপান করে। ঘরে এবং বাইরে ৫০ শতাংশ ছাত্র পরোক্ষ ধূমপানের শিকার। অথচ প্রতিটি সিগারেট মানুষের আয়ু ১১ মিনিট করে কমিয়ে দেয়। সচেতনতা কর্মসূচিতে এই সব দিক নিয়েই প্রচার চালানো হচ্ছে।” চিকিত্সকেরা জানাচ্ছেন, তামাক ব্যবহারের ফলে মানব শরীরের ক্ষতি হয় না, এমন কোনও অঙ্গের উল্লেখ করা মুশকিল। হৃদরোগের মতো ভয়ানক ব্যাধিরও জন্ম দেয়। স্কুল পড়ুয়াদের সচেতন করার এই উদ্যোগ কতটা সাড়া ফেলে সেটাই দেখার।