শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশনার জন্য জাতীয় পুরস্কার

বাবা-মাকেই সম্মান উৎসর্গ ঝাড়গ্রামের সুব্রতর

দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে ছেলের হাতে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় জাতীয় পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন। প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার দূরে ঝাড়গ্রামের বাড়িতে বসে টি‌ভিতে সেই দৃশ্য দেখে চোখের জল চাপতে পারলেন না প্রবীণ দম্পতি।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৭ ০২:৩১
Share:

গর্বিত: টিভি-র সামনে সুব্রতর বাবা-মা।— নিজস্ব চিত্র।

দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে ছেলের হাতে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় জাতীয় পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন। প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার দূরে ঝাড়গ্রামের বাড়িতে বসে টি‌ভিতে সেই দৃশ্য দেখে চোখের জল চাপতে পারলেন না প্রবীণ দম্পতি।

Advertisement

তামিল সায়েন্স ফিকশন বিষয়ক ছবি ‘২৪’-এর শিল্প নির্দেশক সুব্রত চক্রবর্তী এ বার শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক হিসাবে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। চেয়েছিলেন রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নেওয়ার মুহূর্তের সাক্ষী থাকুন তাঁর জীবনের সবচেয়ে প্রিয় দু’টি মানুষ। কিন্তু শারীরিক সমস্যার জন্য বাবা দেবব্রতবাবু ও মা লিপিকাদেবীর আর ছেলের সঙ্গে যাওয়া হয়নি। টিভিতে ছেলেকে সম্মানিত হতে দেখে ছলছল চোখে লিপিকাদেবী বলেন, “ছোটবেলা থেকে ‘বাবাই’ (সুব্রতর ডাক নাম) ছবি আঁকতে ভীষণ ভালবাসতো। ওকে আমরা ওর মতো করে বড় হতে দিয়েছি। জোর করে কিছু চাপিয়ে দিইনি।” দেবব্রতবাবু বলেন, ‘‘ভিসুয়্যাল আর্টস্‌ পড়ানোর বিপুল খরচ ছিল। এমনও সময় গিয়েছে, পুজোয় নতুন জামাকাপড় কিনতে পারিনি। সেই টাকায় ছেলের আঁকাজোকার সামগ্রী কেনা হয়েছে।”

জাতীয় পুরস্কারের সব কৃতিত্বই বাবা-মাকে দিয়েছেন সুব্রত। বুধবার পুরস্কার গ্রহণের পর ফোনে বলেন, ‘‘আমার এই পুরস্কারের পিছনে বাবা-মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রম ছিল। তার কিছুটা সার্থক করতে পেরেছি।’’ জানান, নব্বইয়ের দশকে ঝাড়গ্রাম থেকে যাতায়াত করে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার অফ ভিসুয়্যাল আর্টস্‌ পড়া শেষ হয়। বাবা-মায়ের প্রচণ্ড উৎসাহ, ধৈর্য ও পরিশ্রমের জন্যই সেটা সম্ভব হয়েছিল।

Advertisement

সেই ভিসুয়্যাল আর্টস-এর হাত ধরেই সুব্রতর ঘর ভরেছে একের পর এক পুরস্কারে। রবীন্দ্রভারতী থেকেই ১৯৯৭ সালে মাস্টার অফ ভিসুয়্যাল আর্টস্‌-এ উল্লেখযোগ্য ফলের জন্য স্বর্ণপদক। এরপর মুম্বই চলচ্চিত্র জগত থেকে ডাক আসায় সেখানে পাড়ি। শিল্প নির্দেশক সাদেক আলি এবং সমীর চন্দার ইউনিটে সহকারি হিসেবে কাজ করেছেন। ২০১২ সালে বন্ধু অমিত রায়ের সঙ্গে ‘ক্রিয়েটিভ ইনস্টিংট’ নামে সংস্থা খোলেন। হায়দার, গুলাব গ্যাং, তলোয়ার, উড়তা পঞ্জাব, রেঙ্গুন-এর মতো বিগ বাজেটের হিন্দি ছবিতে চোখ ধাঁধানো সেট বানিয়ে আলাদা পরিচিতি তৈরি করেছেন সুব্রত-অমিত। শিল্প নির্দেশনার জন্য পেয়েছেন ফিল্ম ফেয়ার সহ চলচ্চিত্রের একাধিক পুরস্কার। তবে তামিল ছবির হাত ধরে জাতীয় পুরস্কারের আঙিনায় পা রেখে স্বাভাবিক ভাবেই আপ্লুত দু’জনে। সুব্রতর কথায়, ‘‘এটাই আমার জীবনের সেরা সম্মান।’’

স্বামীর সম্মানপ্রাপ্তির সাক্ষী থাকতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছেন স্ত্রী ঝুমাদেবীও। জানালেন, এই সম্মান শুধু ওঁর নয়, গোটা রাজ্যের। এলাকার ছেলের এমন সম্মানে আনন্দ ঝাড়গ্রামেও। ঝাড়গ্রামের পুরপ্রধান দুর্গেশ মল্লদেব বলেন, “সুব্রতবাবু ঝাড়গ্রামের গর্ব। উনি দিল্লি থেকে ফিরলে পুরসভার তরফে আমরাও ওঁকে সম্মান জানাতে আগ্রহী।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন