ডেঙ্গি ঠেকাতে সমীক্ষা খড়্গপুরে

কোথাও ভাঙা নর্দমা, কোথাও কাঁচা, আবার কোথাও নর্দমা সঙ্কীর্ণ। বর্ষা নামার আগে নিকাশি সমস্যায় জেরবার খড়্গপুর। বেহাল নিকাশিতে এখনই বিভিন্ন ওয়ার্ডে জমছে জল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৬ ০৭:৩১
Share:

কোথাও ভাঙা নর্দমা, কোথাও কাঁচা, আবার কোথাও নর্দমা সঙ্কীর্ণ। বর্ষা নামার আগে নিকাশি সমস্যায় জেরবার খড়্গপুর। বেহাল নিকাশিতে এখনই বিভিন্ন ওয়ার্ডে জমছে জল। আর সেই জলে জন্মাচ্ছে মশা। আশঙ্কা বাড়ছে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গির মতো মশাবাহিত রোগের।

Advertisement

পরিস্থিতি দেখে এ বার রেলশহরের ওয়ার্ডগুলি ঘুরে ঘুরে ডেঙ্গির সমীক্ষা এবং একই সঙ্গে সচেতনতা প্রচারের কাজ শুরু করল স্বাস্থ্য দফতর। গত ১০ জুন থেকে খড়্গপুর পুরসভার সঙ্গে হাত মিলিয়ে ‘স্টেট আরবান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি’ (সুদা)-র কর্মীদের দিয়ে এই সমীক্ষা চালাচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দফতর। এলাকায় ডেঙ্গির মশার লার্ভা দেখলেই পুরসভা ও রেলকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জানানো হচ্ছে। সমীক্ষার কাজ চলবে ১৪ জুন পর্যন্ত।

জুন মাস ম্যালেরিয়া বিরোধী মাস। প্রতিবছর এই মাসে স্বাস্থ্য দফতর নানা কর্মসূচি নেয়। তবে শুধু ম্যালেরিয়া নয়, খড়্গপুর শহরে ডেঙ্গির প্রকোপ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতেই শুরু হয়েছে সমীক্ষার কাজ। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, খড়্গপুর শহরের ৩৫টি ওয়ার্ডেই সুদার ৪৩৬ জন স্বেচ্ছাসেবক বাড়ি বাড়ি ঘুরে সমীক্ষা চালাচ্ছেন। তাঁদের পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন ৪৩ জন সুপারভাইজার। প্রতিটি দলে দু’জন করে স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন। প্রতিদিন তাঁরা ৮০টি বাড়ি ঘুরে দেখছেন। পাঁচ দিনে মোট ৮৭ হাজার বাড়ি পরিদর্শনের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে। সমীক্ষায় মূলত দেখা হচ্ছে, বাড়ির আশেপাশে জল জমছে কি না। সেই জমা জলে কী জাতীয় মশার লার্ভা রয়েছে তা-ও দেখা হচ্ছে। কোথাও আশঙ্কার কিছু পেলে সাতদিন অন্তর জল পাল্টানোর আবেদন করা হচ্ছে। অবরুদ্ধ নিকাশিনালায় জল জমে থাকলে পুরসভাকে জানানো হচ্ছে। জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তথা মশাবাহিত রোগের নোডাল অফিসার রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “মানুষের অসচেতনতায় অনেক জায়গায় জল জমে। শহর এলাকায় নিকাশি সমস্যা থাকলেও জল জমে মশা জন্মায়। সেখানে ডেঙ্গির লার্ভা রয়েছে কিনা তা নিয়ে সমীক্ষা চালানো হচ্ছে। সেখানে মানুষকে সচেতন করছি। ইতিমধ্যেই পুরসভার ও রেলের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি।”

Advertisement

এডিস ইজিপ্টাই মশা থেকে ছড়ায় ডেঙ্গি। অ্যানোফিলিস থেকে ম্যালেরিয়া ও কিউলেক্স মশা থেকে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের প্রকোপ দেখা দেয়। স্বাস্থ্য দফতরের এই সমীক্ষায় অবশ্য এডিস ইজিপ্টাইয়ের উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। একশোটি বাড়ির মধ্যে দশটিতে এই মশার লার্ভা পাওয়া গেলে এলাকাটি ডেঙ্গি সংক্রমিত এলাকা বলে সমীক্ষায় চিহ্নিত করা হবে। আর্দ্রতা ও উষ্ণতার তারতম্য হলেও অন্য প্রজাতির মশা জন্মায়। ফলে, মশার বংশ বৃদ্ধি থেকে বাঁচতে শহরবাসীকে সচেতন করা হচ্ছে। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে এই সমীক্ষার সুপারভাইজার শিখা দেব, সর্বাণী দাসরা বলেন, “বেশ কিছু জায়গায় অব্যবহৃত জিনিসপত্রে জল জমে রয়েছে দেখছি। আবার নর্দমায় জমে থাকা পরিষ্কার জলেও মশার লার্ভা থাকছে। আমরা বাংলা ও হিন্দি লিফলেট দিচ্ছি। স্থানীয় কাউন্সিলরকেও জানাচ্ছি। পরে পুরসভায় রিপোর্ট করব।” কোথাও ডেঙ্গিতে কেউ আক্রান্ত হলে তিনটি পর্যায়ে চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে তাঁরা জানান।

খড়্গপুরের ১, ৩, ৪, ৫, ১২, ১৪, ২৩, ২৪, ২৫, ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে নিকাশির অবস্থা খারাপ। রেলের ওয়ার্ডগুলিতেও নিকাশি বেহাল। ফলে, ডেঙ্গি নিয়ে চিন্তিত স্বাস্থ্য দফতর। মানুষের সচেতনতার অভাবে এই মশা বাহিত রোগের প্রকোপ আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সমাজকর্মী দীপক দাশগুপ্ত বলেন, “আমার বাড়ির সামনের নালা বহুবছর ধরে কাঁচা। সেখানে জল জমে। কাছেই কালভার্টের নীচেও জল জমে মশা বাড়ছে। পুরসভাকে কখনও মশা মারার তেল স্প্রে করতে দেখি না।”

জেলার নোডাল অফিসার রবীন্দ্রনাথ প্রধানেরও বক্তব্য, “কিছু ক্ষেত্রে পুরসভা ও রেলের এলাকায় নিকাশি সমস্যায় মশা জন্মাচ্ছে। পুরসভাকে বলে আমরা সেখানে তেল স্প্রে করাচ্ছি। যদি কোথাও ১০০টি বাড়ির মধ্যে ১০টিতে ডেঙ্গির মশার লার্ভা পাওয়া যায় তবে স্বাস্থ্য ভবনে জানিয়ে মশা মারার ধোঁয়া দেব।”

কিন্তু নিকাশির হাল ফিরছে না কেন? পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের জবাব, “আমরা নিকাশি সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছি। ‘সুদা’র কর্মীরা সমীক্ষা করে রিপোর্ট দিলে মশা তাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন