হামলায় ধৃত বিরোধী প্রধানেরই স্বামী, নিরপেক্ষতা নিয়ে কটাক্ষ বিজেপির

সোমবারই ময়নায় দলের জনসভায় শুভেন্দু অধিকারী নিখোঁজ যুবক সোমনাথ বেরার খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দলের পঞ্চায়েত সদস্য হাফিজা খাতুনের গ্রেফতার নিয়ে রং না দেখে পুলিশের নিরপেক্ষ তদন্তের পক্ষে জোর সওয়াল করেছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:২২
Share:

বিজেপির পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়িতে হামলা, খড়ের গাদায় আগুন লাগানোর অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পাল্টা অভিযোগ দায়ের করে তৃণমূলের দাবি, ১০০ দিনের কাজের মজুরি নিয়ে গ্রামের বেশ কিছু মহিলা প্রধানের কাছে অভিযোগ জানাতে গেলে তাঁদের মারধর, শ্লীলতাহানি ও জাতপাত তুলে অপমান করেন প্রধানের স্বামী। তমলুক-১ ব্লকের শ্রীরামপুর-১ পঞ্চায়েতের প্রধান মঞ্জু বেরার বাড়িতে হামলার ওই ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেফতার না হলেও, ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রধানের স্বামী গুরুপদ বেরাকে সোমবার রাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

Advertisement

সোমবারই ময়নায় দলের জনসভায় শুভেন্দু অধিকারী নিখোঁজ যুবক সোমনাথ বেরার খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দলের পঞ্চায়েত সদস্য হাফিজা খাতুনের গ্রেফতার নিয়ে রং না দেখে পুলিশের নিরপেক্ষ তদন্তের পক্ষে জোর সওয়াল করেছিলেন। অথচ তারপরই বিজেপি প্রধানের স্বামীকে গ্রেফতারের ঘটনায় সেই নিরপেক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন তুলল বিজেপি। জেলা বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, তাঁদের প্রধানের বাড়িতে হামলায় তৃণমূলের লোকজনের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠলেও পুলিশ নিষ্ক্রিয় থাকল। অথচ ওই ঘটনাতেই তৃণমূলের অভিযোগ পেয়ে তৎপরতা দেখিয়ে প্রধানের স্বামীকে গ্রেফতার করল পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত রবিবারের ওই গোলমালের ঘটনায় মঞ্জুদেবীর স্বামী গুরুপদ সহ মোট পাঁচজনের বিরুদ্ধে মারধর, শ্লীলতাহানি ও জাতপাত তুলে অপমানজনক মন্তব্য করার অভিযোগে মামলা দায়ের হয়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই পুলিশ সোমবার রাত ২টা নাগাদ শ্রীরামপুর গ্রামে মঞ্জুদেবীর বাড়িতে হানা দেয়। তিনি ও তাঁর স্বামী বাড়িতে ছিলেন না। তাঁরা এক প্রতিবেশীর বাড়িতে ঘুমিয়েছিলেন। সেখান থেকেই গুরুপদবাবুকে গ্রেফতার করা হয়। মঙ্গলবার গুরুপদবাবুকে তমলুক আদালতে তোলা হলে বিচারক জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।

Advertisement

বিজেপির তমলুক জেলা সভাপতি প্রদীপ দাসের অভিযোগ, ‘‘সোমবার সভায় শুভেন্দুবাবু পুলিশি নিরপেক্ষতার কথা বলেছিলেন। অথচ তাঁর দলেরই পুলিশ নিরপক্ষতা ছেড়ে দলের নির্দেশ অনুযায়ী করেছে। আমাদের প্রধানের বাড়িতে হামলায় অভিযুক্ত তৃণমূলের কাউকে গ্রেফতার না করে, উল্টে প্রধানরই স্বামীকে গ্রেফতার করে পুলিশ দারুণ নিরপেক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। এলাকার মানুষ সবকিছুই দেখছে।’’

তাঁর অভিযোগ, ‘‘শ্রীরামপুর পঞ্চায়েত যে কোনও উপায়ে দখলের জন্য তৃণমূল এমন ঘৃণ্য রাজনীতি করছে। ময়নার জনসভায় প্রকাশ্যে পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। আর তারপরেই পুলিশ অতি তৎপর হয়ে আমাদের দলীয় কর্মীকে গ্রেফতার করল।’’

যদিও বিজেপির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। ব্লকের তৃণমূল নেতা ও জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সোমনাথ বেরা বলেন, ‘‘ শ্রীরামপুর-১ পঞ্চায়েতে প্রধান দীর্ঘদিন ধরে অফিসে যাননি। ফলে দুঃস্থ শ্রমিকরা একশো দিনের কাজ পাচ্ছেন না। এনিয়ে মহিলা শ্রমিকরা রবিবার মঞ্জুদেবীর বাড়িতে জবাব চাইতে গেলে তাঁর স্বামী সহ কয়েকজন মহিলাদের মারধর ও শ্লীলতাহানি করে তাড়িয়ে দেন। অপমানজনক মন্তব্য করেন। মহিলাদের অভিযোগের ভিত্তিতেই পুলিশ পদক্ষেপ করেছে। এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই।’’

তমলুকের এসডিপিও সুরজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রধানের বাড়িতে হামলা নিয়ে তাদের তরফে কোনও অভিযোগ পাওয়া যায়নি। আর প্রধানের স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন