গ্রন্থাগারে তালা, ধুলো জমছে বইয়ে

কর্মী সঙ্কটে আঁধারে জেলার গ্রন্থাগার। গ্রন্থাগারিক না থাকায় ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে জেলার ১২টি গ্রামীণ গ্রন্থাগার। ধুঁকছে আরও ১২টি গ্রামীণ গ্রন্থাগার।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

তমলুক শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৫ ০১:১০
Share:

তালা ঝুলছে শিমুলিয়ার কিশলয় গ্রন্থাগারে। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

কর্মী সঙ্কটে আঁধারে জেলার গ্রন্থাগার।

Advertisement

গ্রন্থাগারিক না থাকায় ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে জেলার ১২টি গ্রামীণ গ্রন্থাগার। ধুঁকছে আরও ১২টি গ্রামীণ গ্রন্থাগার। সপ্তাহের অর্ধেক দিনই বন্ধ থাকে ওই গ্রন্থাগারগুলি। বিপাকে পুস্তকপ্রেমী সাধারণ মানুষ। গ্রামীণ গ্রন্থাগারগুলিতে কর্মী সমস্যার কথা স্বীকার করে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ভারপ্রাপ্ত গ্রন্থাগার আধিকারিক ইন্দ্রজিৎ পান বলেন, ‘‘জেলার কয়েকটি গ্রামীণ গ্রন্থাগারে কর্মী না থাকায় সেগুলি বন্ধ রাখতে হয়েছে। শূন্য পদগুলিতে গ্রন্থাগারিক ও কর্মী নিয়োগের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

গ্রন্থাগার দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় তমলুক জেলা গ্রন্থাগার-সহ মোট ১২১টি গ্রন্থাগার রয়েছে। এর মধ্যে গ্রামীণ এলাকায় ১১০টি ও শহর এলাকায় ১০টি গ্রন্থাগার (টাউন লাইব্রেরি) রয়েছে। প্রতিটি গ্রামীণ গ্রন্থাগারে এক জন গ্রন্থাগারিক ও এক জন জুনিয়র লাইব্রেরি অ্যাটেন্ডান্ট পদে কর্মী থাকার কথা। আর প্রতিটি শহর গ্রন্থাগারে এক জন গ্রন্থাগারিক-সহ চার জন কর্মী থাকেন। অর্থাৎ জেলার সমস্ত গ্রামীণ ও শহর গ্রন্থাগার মিলিয়ে মোট ২৬০ জন কর্মী থাকার কথা।

Advertisement

তবে বাস্তবে চিত্রটা একেবারে বিপরীত। বর্তমানে জেলার সব গ্রন্থাগার মিলিয়ে মোট ১০৭ জন কর্মী রয়েছেন। তার মধ্যে মাত্র ৪২ জন গ্রন্থাগারিক ও বাকি ৬৫ জন গ্রন্থাগার কর্মী। জেলার গ্রন্থাগারগুলিতে দেড়শোরও বেশি কর্মী পদ শূন্য পড়ে রয়েছে। গ্রন্থাগারিক ও জুনিয়র লাইব্রেরি অ্যাটেন্ডান্ট পদে কোনও কর্মী না থাকায় জেলার ১২টি গ্রন্থাগারগুলি বন্ধ পড়ে রয়েছে। কর্মী সঙ্কটে আরও ১২টি গ্রন্থাগার সপ্তাহে মাত্র দু’তিন দিন খোলা রাখতে হচ্ছে। সমস্যায় পাঠকেরা। একইসঙ্গে, গ্রন্থাগারে থাকা বইয়ের রক্ষণাবেক্ষণেও সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ। দিনের পর দিন গ্রন্থাগার বন্ধ থাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যেও ক্ষোভ বাড়ছে।

জেলার ১০ টি টাউন লাইব্রেরির মধ্যে মহিষাদল, পাঁশকুড়া ও কোলাঘাট টাউনশিপ এলাকার তিনটিতে কোনও গ্রন্থাগারিক নেই। এইসব টাউন লাইব্রেরিগুলি চতুর্থ শ্রেণির কর্মী দিয়েই চলছে। খোদ তমলুক জেলা গ্রন্থাগারেও অধিকাংশ কর্মী পদ শূন্য পড়ে রয়েছে। কর্মীর অভাবে বন্ধ তমলুক ব্লকের পদুমপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার শিমুলিয়া গ্রামে অবস্থিত কিশলয় সংঘ পাঠাগারে। এই গ্রন্থাগারে মোট ১০০ জন সদস্য রয়েছেন। তবে ২০১৪ সালের মে মাসে গ্রন্থাগারিক সফিউল ইসলাম অবসর গ্রহণ করেন। তারপর থেকেই তালা ঝুলছে গ্রন্থাগারে। ফলে সমস্যায় স্থানীয় শিমুলিয়া, বাড়বসন্ত, মিরিকপুর, বহিচবেড়িয়া গ্রামের পুস্তকপ্রেমী মানুষ। শিমুলিয়া গ্রামের যুবক শেখ সাহাদাত বলেন, ‘‘খবরের কাগজ-সহ বিভিন্ন গল্প-উপন্যাসের বই পড়ার জন্য আমাদের এলাকার ভরসা এই গ্রন্থাগার। তবে প্রায় এক বছরের বেশি সময় গ্রন্থাগার বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কবে গ্রন্থাগার খুলবে বুঝতেও পারছি না।’’

ওই গ্রন্থাগারের অবসরপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক সফিউল ইসলাম বর্তমানে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য। গ্রন্থাগারের পরিচালন সমিতির সদস্য সফিউল ইসলাম বলেন, ‘‘আমি অবসর নেওয়ার পর থেকে নতুন গ্রন্থাগারিক নিয়োগ হয়নি। জেলার অন্য কোনও স্থান থেকে গ্রন্থাগারিককে বদলি করে এনেও এখানে নিয়োগ করা হয়নি। ফলে শুধুমাত্র কর্মীর অভাবে গ্রন্থাগার বন্ধ হয়ে রয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘প্রতিদিন গ্রন্থাগারে গড়ে আট-দশ জন করে পাঠক আসত। কিন্তু গত এক বছর ধরে গ্রন্থাগার বন্ধ থাকায় তারাও সমস্যায় পড়েছেন। গ্রন্থাগারিক নিয়োগের জন্য জেলা গ্রন্থাগার দফতরে জানানো হয়েছিল। কিন্তু এখনও কাউকে নিয়োগ করা হয়নি।’’

একইভাবে, পাঁশকুড়া ব্লকের কেশাপাট গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ডালপাড়া বাণী পাঠাগার ও গ্রন্থাগারিক-কর্মীর অভাবে প্রায় দেড় বছর বন্ধ রয়েছে। ওই গ্রন্থাগারের পরিচালন সমিতির সদস্য তথা কেশাপাট গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান দিলীপ সাঁতরা বলেন, ‘‘ওই গ্রামীণ গ্রন্থাগারটির গ্রন্থাগারিক প্রায় পাঁচ বছর আগে অবসর নেওয়ার পরে অন্য এক জন গ্রন্থাগারিকের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু গত দেড় বছর ধরে গ্রন্থাগারে এক জনও কর্মী নেই। ফলে সমস্যা বাড়ছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘গ্রন্থাগারিক নিয়োগ করার জন্য জেলা গ্রন্থাগার দফতরে আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু এখনও গ্রন্থাগারিক নিয়োগ করা হয়নি।’’

গ্রন্থাগারিক ও কর্মী অভাবে জেলার গ্রামীণ গ্রন্থাগারগুলির বেহাল অবস্থার কথা স্বীকার করছেন জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ তথা জেলা স্তরে গঠিত লোকাল লাইব্রেরি অথরিটির সদস্য মামুদ হোসেনও। তিনি বলেন, ‘‘জেলার গ্রামীণ ও টাউন লাইব্রেরিগুলির অনেকগুলিতে গ্রন্থাগারিক ও কর্মী না থাকায় সমস্যা হচ্ছে। কয়েকটি গ্রামীণ গ্রন্থাগার বন্ধ থাকায় স্থানীয় বাসিন্দা বিশেষত বেকার যুবক-যুবতী ও গ্রামীণ পাঠকরা বই পেতে সমস্যায় পড়ছে।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘এ নিয়ে জেলা গ্রন্থাগার দফতরের আধিকারিকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। গ্রন্থাগারগুলির শূন্য পদে দ্রুত গ্রন্থাগারিক ও কর্মী নিয়োগের জন্য রাজ্য গ্রন্থাগার দফতরের কাছেও আর্জি জানানো হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন