শুরু রাজনৈতিক চাপানউতোর

প্রাথমিকে বদলি, ক্ষোভ শিক্ষকদের

পড়ুয়ার সংখ্যা ১১০ জন। অথচ স্কুলের পাঁচটি ক্লাসের জন্য রয়েছেন দু’জন বা তিনজন শিক্ষক। কোথাও ৯০ জন পড়ুয়ার স্কুলে পাঁচটি ক্লাসের জন্য রয়েছেন সাতজন শিক্ষক। ফলে বহু প্রাথমিক স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের চাহিদামত শিক্ষকের অভাবে পড়াশোনায় অসুবিধা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:৪৩
Share:

পড়ুয়ার সংখ্যা ১১০ জন। অথচ স্কুলের পাঁচটি ক্লাসের জন্য রয়েছেন দু’জন বা তিনজন শিক্ষক। কোথাও ৯০ জন পড়ুয়ার স্কুলে পাঁচটি ক্লাসের জন্য রয়েছেন সাতজন শিক্ষক। ফলে বহু প্রাথমিক স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের চাহিদামত শিক্ষকের অভাবে পড়াশোনায় অসুবিধা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে পড়ুয়া–শিক্ষকদের অনুপাতে সামঞ্জস্য আনতে প্রায় ৮০০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে তাই বদলির পরিকল্পনা নিয়েছে করেছছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ।

প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত ৩২৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বিদ্যালয়গুলিতে বর্তমানে মোট ১১ হাজার ৬৬৩ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন। এঁদের মধ্যে ২০ জনের কম ছাত্রছাত্রী রয়েছে এমন বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৪০টি। এই স্কুলগুলির বেশিরভাগই শহরাঞ্চলে বলে জানা গিয়েছে। অন্যদিকে গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যালয়গুলিতে পড়ুয়ার সংখ্যা বেশি হলেও বেশ কিছু বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকা কম থাকায় পড়ুয়াদের পড়াশোনায় অসুবিধা হচ্ছে বলে প্রায়ই অভিযোগ উঠছিল।

Advertisement

সমস্যা দূর করতে বিদ্যালয়গুলিতে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতে সামঞ্জস্য আনতে বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হচ্ছে। বিদ্যালয়গুলিতে ছাত্র–শিক্ষক সংখ্যার রিপোর্টের ভিত্তিতে যে সব বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যার তুলনায় শিক্ষক-শিক্ষিকা অতিরিক্ত রয়েছে তাঁদের একাংশকে অন্য বিদ্যালয়ে বদলির সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে জন্য জেলায় মোট ৮০৬ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার একটা তালিকা তৈরি করা হয়েছে। শিক্ষক বদলির প্রক্রিয়ার কথা স্বীকার করে জেলা বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি মানস দাস বলেন, ‘‘২০ জন পড়ুয়ার বিদ্যালয়ে ২ জন করে শিক্ষক থাকবেন। বাকি বিদ্যালয়গুলিতে কমপক্ষে ৪ জন করে শিক্ষক-শিক্ষিকা রাখার চেষ্টা হচ্ছে। যে সব বিদ্যালয়ে পড়ুয়ার সংখ্যার তুলনায় অতিরিক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন তাঁদের একাংশকে অন্য বিদ্যালয়ে বদলি করা হবে। মূলত কমবয়সের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছাকাছি অন্য বিদ্যালয়ে বদলি করা হবে। এ বিষয়ে প্রশাসনিক প্রক্রিয়া চলছে।’’

সংসদ সূত্রে খবর, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বদলি প্রক্রিয়ার জন্য জেলা প্রশাসন, বিদ্যালয় সংসদ, জেলা সর্বশিক্ষা মিশন ও প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক অফিসের আধিকারিকদের নিয়ে কমিটি গড়া হয়েছে। জেলাস্তরের ওই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে রাজ্য সরকারের অনুমোদনের পরেই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বদলির নির্দেশ পাঠানো হবে। আগামী শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগেই এই বদলি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।

বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক সতীশ সাহুর অভিযোগ, ‘‘২০১৪ ও ’১৭ সালে নতুন শিক্ষক নিয়োগের সময় কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছিল। এখন সেই শিক্ষকদের একাংশকে বাধ্যতামূলকভাবেই অন্যত্র বদলির চেষ্টা হচ্ছে। সংসদের ত্রুটির কারণেই এটা হচ্ছে। উদ্বৃত্ত শিক্ষক বদলির অজুহাতে বিরোধী শিক্ষকসংগঠনের সদস্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দূরে পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।’’

পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সাধারণ সম্পাদক অরূপকুমার ভৌমিকের অভিযোগ, ‘‘বহু বিদ্যালয়ে স্থায়ী প্রধান শিক্ষক নেই । প্রধান শিক্ষক নিয়োগ না করে এভাবে বদলির প্রক্রিয়ায় অনেক শিক্ষিকা- শিক্ষিকা আতঙ্কিত।’’

শাসকদল প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল তৃণমূল প্রাইমারি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সভাপতি নীলকান্ত অধিকারীর দাবি, ‘‘শিক্ষার স্বার্থে শিক্ষকদের একাংশকে অন্য বিদ্যালয়ে বদলি করা হচ্ছে। এতে রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন