Sikhsha Ratna Award

নেশা, বাল্যবিবাহ রোধে লড়ছেন জঙ্গলমহলের ‘শিক্ষারত্ন’

২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে। ছেলেমেয়ের পড়াশোনার জন্য মেদিনীপুর শহরে থাকেন। মেদিনীপুর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরের বেলিয়াবেড়ার স্কুলে যাতায়াত করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

 ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:০০
Share:

সুব্রত মহাপাত্র। —নিজস্ব চিত্র।

তিনি একাধারে শিক্ষক, আবার সমাজসেবীও বটে। আবার স্কুলের শৌচাগারও সাফ করেন নিজের উদ্যোগে। গ্রামে-গ্রামে ঘুরে বাল্যবিবাহ ঠেকাতে অভিভাবকদের সচেতন করেন। চোলাইয়ের সর্বনেশে নেশা ছাড়াতে হাজির হন প্রত্যন্ত গ্রামে। স্কুলছুটদের স্কুলে ফেরানোর কাজেও অনেকটা সফল হয়েছেন। তাঁর নির্দেশনায় কন্যাশ্রীদের নিয়ে বাল্যবিবাহ রোধে পথনাটিকা ‘আগামী’ মঞ্চস্থ হয়েছে বহু সরকারি ও বেসরকারি মঞ্চে। ‘রানি শিরোমণি’ শর্টফিল্মে অভিনয় করে প্রশংসাও কুড়িয়েছেন। বহু বর্ণময় চরিত্র সেই সুব্রত মহাপাত্র এ বার ঝাড়গ্রাম জেলা থেকে শিক্ষারত্ন পাচ্ছেন।

Advertisement

ঝাড়গ্রাম জেলার বেলিয়াবেড়া কেসিএম উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হলেন সুব্রত মহাপাত্র। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) শক্তিভূষণ গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘এ বার জেলা থেকে একমাত্র সুব্রতবাবু রাজ্য সরকারের শিক্ষারত্ন সম্মান পাচ্ছেন।’’ বছর একান্নর সুব্রত মহাপাত্রের জন্ম অবিভক্ত মেদিনীপুরের সাঁকরাইল থানার কুলটিকরি গ্রামে। প্রাথমিক শিক্ষালাভ কুলটিকরির বালিগেড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এর পরে কুলটিকরি এসসি হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক ও কলাবিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ। গোপীবল্লভপুরের সুবর্ণরেখা মহাবিদ্যালয় থেকে ভূগোলের স্নাতক। কলেজের সব বিভাগের মধ্যে স্নাতকস্তরে সর্বোচ্চ স্থানাধিকারী হওয়ায় পেয়েছিলেন রুপোর পদক। এরপরে চলে যান উত্তরপ্রদেশের কানপুরে। ভর্তি হন কানপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেখান থেকে ভূগোলে প্রথম শ্রেণির স্নাতকোত্তর ডিগ্রিলাভ। এর পরে পালপাড়ার একটি শিক্ষক শিক্ষণ সংস্থা থেকে বিএড করেন। শিক্ষকের সরকারি চাকরি পাওয়ার আগে বিভিন্ন সংস্থায় অবৈতনিক শিক্ষাদান করেছেন। ২০০১ সালে স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে বেলিয়াবেড়া কৃষ্ণচন্দ্র স্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহ-শিক্ষকের চাকরিতে যোগদান।

২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে। ছেলেমেয়ের পড়াশোনার জন্য মেদিনীপুর শহরে থাকেন। মেদিনীপুর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরের বেলিয়াবেড়ার স্কুলে যাতায়াত করেন। তবে সপ্তাহে তিন-চারদিন স্কুলের ছাত্রাবাসে থেকে যান। স্কুল ছুটির পরে বেরিয়ে পড়েন বেলিয়াবেড়া ও সংলগ্ন বিভিন্ন গ্রামে। এলাকায় ঘুরে বেড়িয়ে চলে তাঁর সামাজিক উত্তরণ কর্মসূচি। এলাকার এক দৃষ্টিহীন ছাত্রীর আজীবন পড়াশোনার খরচ বহন করছেন সুব্রত। করোনা-কালে মেদিনীপুর থেকে বাইক উজিয়ে এলাকায় এসে পড়ুয়াদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে পড়াও দেখিয়ে দিয়েছিলেন। সুব্রতর স্ত্রী সুতপা মহাপাত্রের কথায়, ‘‘উনি দাতা-কর্ণ। সংসার ফেলে স্কুল আর সমাজসেবা করে চলেছেন।’’ বি আর অম্বেডকরকে নিয়ে একটি বইও লিখেছেন। বেলিয়াবেড়ায় চালু হওয়া রাজ্যের প্রথম কন্যাশ্রী পাঠাগারের আহ্বায়কও তিনি। ওই পাঠাগার থেকে এলাকার পড়ুয়ারা বিনামূল্যে সহায়িকা বই ব্যবহারের সুযোগ পায়। এ পর্যন্ত আট জন নাবালিকার বিয়ে আটকে তাদের স্কুলে ফিরিয়েছেন। সুব্রতের কথায়, ‘‘শিক্ষারত্ন সম্মান আমি আমার অগণিত ছাত্রছাত্রী ও বেলিয়াবেড়া ব্লকের বাসিন্দাদের উৎসর্গ করছি। অভাবী মেধাবী পড়ুয়াদের পড়াশোনার সাহায্যে সম্মানের টাকা খরচ করব।’’

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন